তরল বর্জ্যে মরছে করতোয়ার মাছ

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার করতোয়া নদীতে মরে ভেসে ওঠা মাছ ধরছেন স্থানীয়
লোকজন। সম্প্রতি উপজেলার টেংরামনি এলাকা থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো
পঞ্চগড়ে করতোয়া নদীর পানি দূষিত হয়ে পড়ায় মাছ মরে ভেসে উঠছে। মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, পঞ্চগড় চিনিকলের বিষাক্ত বর্জ্যে নদীর পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। তবে চিনিকল কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে নলকূড়া, সারোগাড়া, টেংরামনি ও বোয়ালমারী মৎস্য অভয়াশ্রম এলাকায় গিয়ে মৎস্যজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হঠাৎ করে গতকাল সকাল থেকে নদীতে মরা মাছ ভেসে উঠতে শুরু করে। এসব মাছ অনেককেই তুলতে দেখা গেছে। ছোট ছোট মাছ শুধু নয়, ১০-১৫ কেজি ওজনের বোয়াল, আইড়, গ্লাসকার্প মাছও মারা গেছে।
জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বড় মাছের পাশাপাশি পোনা মাছ মরেছে। নদীর পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এবং এর রং কালো হয়ে গেছে। পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা ফুলতলা থেকে বোয়ালমারী পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন স্থানে বিপুল পরিমাণ মাছ মারা যায়। মাছ মরে যাওয়ায় নদীতীরের সহস্রাধিক জেলে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
সদর উপজেলা মৎস্য বিভাগের ক্ষেত্র সহকারী মো. আবদুর রাজ্জাক নদীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছেন। তিনি বলেন, গতকাল সকাল থেকে অনেক মানুষ মরা ও আধমরা মাছ নদী থেকে সংগ্রহ করেছেন।
করতোয়া নদীর নলকূড়া অভয়াশ্রম মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. ইব্রাহিম অভিযোগ করেন, পঞ্চগড় চিনিকলের তরল বর্জ্যে নদীর মাছ মারা যাচ্ছে। এভাবে নদীর মাছ মারা গেলে এলাকার সহস্রাধিক জেলে বেকার হয়ে পড়বেন।
মৎস্যজীবীরা জানান, পঞ্চগড় পৌর এলাকায় অবস্থিত পঞ্চগড় চিনিকল করতোয়া নদীতে তরল বর্জ্য ফেলছে। এসব তরল বর্জ্য শোধন করে নদীতে ফেলার কথা। কিন্তু চলতি মৌসুমে তা না করে সরাসরি এসব তরল বর্জ্য করতোয়া নদীতে ফেলা হয়।
বোদা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মখছেদুর রহমান বলেন, বর্জ্যের কারণে পানি দূষিত হয়ে পড়ায় কোটি টাকার মৎস্যসম্পদের ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এ নমুনা ময়মনসিংহে পাঠানো হবে। পরীক্ষার প্রতিবেদন পেলে প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু আউয়াল বলেন, মৎস্য অভয়াশ্রমসহ করতোয়া নদীর বিশাল এলাকাজুড়ে এ বর্জ্য ছড়িয়ে পড়েছে। এতে বড় মাছ, পোনাসহ জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম আবদুর রশীদ বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে চিনিকলের তরল বর্জ্য নালা দিয়ে করতোয়ায় ফেলা হচ্ছে। এতে ক্ষতিকারক কিছু নেই। এতে কোনো রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো হয় না। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা এলাকায় আছেন। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.