সরকারি কর্মকর্তারাও পাচ্ছেন না দুবাইয়ের ভিসা by দীন ইসলাম

জরুরি প্রয়োজনে সরকারি কাজে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) তথা দুবাইয়ে যাওয়া প্রয়োজন বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তা হালিম চৌধুরীর (ছদ্মনাম)। কিন্তু চেষ্টা-তদবির করেও ওই দেশে তিন মাস বসবাসের অফিসিয়াল ভিসা যোগাড় করতে পারেননি। গত সোমবার তাকে দেয়া হয়েছে এক মাসের ট্যুরিস্ট ভিসা। ওই কর্মকর্তাটি জানালেন,  ট্যুরিস্ট ভিসায় গিয়ে দুবাইস্থ বাংলাদেশ মিশনে কাজ করা যাবে না। তিন মাসের সরকারি আদেশ নিয়ে গেলেও এক মাস পর আবার দেশে ফিরে আসতে হবে। এরপর আবার নতুন করে ভিসা নিয়ে যেতে হবে। যে ভিসা দেয়া হয়েছে তাতেও ভুলের ছড়াছড়ি। তারা কি এটা সচেতনভাবে নাকি অবচেতনভাবে করেছে বলা যাবে না। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুবাইতে যাওয়ার এ ঝক্কি-ঝামেলা সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য দুই মাস ধরে শুরু হয়েছে। এত দিন সরকারি কর্মকর্তাদের ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে শিথিলতা অবলম্বন করা হলেও সময় যেন কিছুটা পাল্টে গেছে। সরকারি কর্মকর্তাদেরও এখন কোন ধরনের ভিসা দেয়া হচ্ছে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসরত বাংলাদেশীদের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য আলাদা দু’টি টিম দুবাইয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। এসব টিমের সদস্যদের নামে ইতিমধ্যে সরকারি আদেশ (জিও) জারি করা হয়েছে। কিন্তু ভিসা নিতে গিয়ে সমস্যার মুখে পড়েছেন। এ কারণে বারবার দুবাই যাত্রার সময় পরিবর্তন করছেন তারা। ওই টিমের এক সদস্য জানালেন, প্রবাসী বাংলাদেশীদের সেবা দেয়ার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাবো। এখন ভিসা না পেলে কিভাবে সেবা দিতে যাবো বলুন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, দুবাইয়ের বিভিন্ন কোম্পানিতে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের নানা ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। তাদের ভিসার নবায়ন না হওয়ায় তারা নানা সমস্যার মুখে পড়েছেন। অনেকে ছুটিতে বাড়িতে ফেরার সুযোগ পেলেও নতুন করে ভিসা পাবেন না- এমন চিন্তায় পরিবার-পরিজনের কাছে ফেরার চিন্তাও বাদ দিয়েছেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক কর্মকর্তা এমিরেটস এয়ারলাইন্সযোগে দেশে আসার সময় দুবাইতে ট্রানজিটে থাকেন। অনেকেই চান একদিন বা কয়েক দিনের ভিসা নিয়ে দুবাইতে কাটিয়ে দেশে ফিরতে। ওই সুযোগও পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। যদিও আগে এমিরেটস এয়ারলাইন্সে দেশে ফিরলে এ সুযোগ নিতে কোন সমস্যা পোহাতে হতো না। বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী ছাড়া অন্য কোন দেশের নাগরিকদের এটা কোন সমস্যা নয়। ওদিকে অনেক আগে থেকেই এদেশের সাধারণ নাগরিকদের দুবাই তথা সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) ভিসা দেয়া বন্ধ রয়েছে। কর্মসংস্থান বা এমপ্লয়মেন্ট ভিসা, ট্যুরিস্ট বা ভ্রমণ ভিসা এবং সব ধরনের বাণিজ্যিক ভিসা দেয়া বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয়ের দ্বিতীয় বৃহৎ উৎস দেশটি। ভিসা বন্ধ করে দেয়ার পাশাপাশি নিজেদের বাণিজ্যিক সম্পৃক্তিকে নানাভাবে গুটিয়ে নিতে শুরু করেছে দুবাই। এ কারণে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন দুবাই হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণকারী বাংলাদেশী নাগরিকরা। এছাড়া, কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ থাকা এ দেশের দরজা এখন বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য পুরোপুরি বন্ধ। এ পরিস্থিতির অবসানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে  কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। সূত্র জানায়, ওয়ার্ল্ড এক্সপো ২০২০-এর ভেন্যু নির্বাচনের ভোট দেয়াকে ঘিরে বাংলাদেশের সঙ্গে দুবাইয়ের মন কষাকষি শুরু হয়। বিশ্বের সর্ববৃহৎ এ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রদর্শনীর আয়োজক হওয়ার প্রতিযোগিতায় ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, তুরস্কের ইজমির, ব্রাজিলের সাও পাওলো, রাশিয়ার একাতেরিনবার্গ ও থাইল্যান্ডের একটি শহর। এর মধ্যে প্রার্থিতার শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় থাইল্যান্ড প্রাথমিক পর্যায়েই বাদ পড়ে। বাংলাদেশের ভোটের ব্যাপারে সবচেয়ে আশাবাদী ছিল দুবাই। এমন অবস্থার মধ্যেই গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়, এ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের ভোট পাবে রাশিয়ার একাতেরিনবার্গ। এমন সিদ্ধান্তের পরই সেপ্টেম্বর মাস থেকে বাংলাদেশী নাগরিকদের ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে রক্ষণশীল নীতি গ্রহণ করে দুবাই ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। বাংলাদেশী সাধারণ পর্যটক ও সাধারণ ট্রানজিট ভিসা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে যে সব বাংলাদেশী নাগরিক সংযুক্ত আরব আমিরাতের মালিকানাধীন এয়ারলাইনসের (এমিরেটস, ফ্লাই দুবাই বা ইতিহাদ) যাত্রী হিসেবে বৃটেন, আমেরিকা বা কানাডা ভ্রমণ করতেন, তাদের শর্তসাপেক্ষে ৯৬ ঘণ্টার ট্রানজিট ভিসা দেয়া হতো। এরই মধ্যে এ ভিসাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের অফিসিয়াল প্রয়োজনে দুবাইয়ের ভিসা দেয়া হলেও এটাও এখন বন্ধ হওয়ার পথে। ওদিকে স্বাভাবিক সময়ে বাংলাদেশ থেকে প্রতিমাসে গড়ে প্রায় ৫ হাজার মানুষ বিভিন্ন কারণে দুবাই ভ্রমণ করতেন। বিরাট এ যাত্রী সংখ্যাকে ঘিরে ঢাকা-দুবাই রুটে বেশ কয়েকটি এয়ারলাইনসের অনেকগুলো ফ্লাইট চলাচল করতো। এর মধ্যে কেবলমাত্র এমিরেটস এয়ারলাইনস এককভাবে সপ্তাহে ২১টি ফ্লাইট পরিচালনা করতো। গত তিন মাসে পর্যায়ক্রমে কমিয়ে এখন সপ্তাহে মাত্র ১৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে এয়ারলাইনসটি। এমিরেটস-এর ফ্লাইট সংখ্যা আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে ফ্লাই দুবাই চট্টগ্রাম থেকে সপ্তাহে ৭টি এবং ঢাকা থেকে ৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করতো। তাদের ফ্লাইট সংখ্যাও ইতিমধ্যেই অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.