১৭ লাখ লোকের গাজায় ইসরায়েলি লাখ সেনার অভিযান

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্মম অভিযান চলছেই। এতে গতকাল বৃহস্পতিবারও অন্তত ১০ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। টানা ২৪ দিনের এই অভিযানে এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৩৫ জনে।

>>নিরাপদ ভেবে জাতিসংঘের শরণার্থী শিবিরে পরিবারের সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছিল এই শিশুটি। শেষরক্ষা হয়নি। সেখানেও হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। আহত এই শিশুকে গতকাল গাজার কামাল এদওয়ান হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয় l ছবি: এএফপি
আন্তর্জাতিক মহলের তীব্র সমালোচনা এবং দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতির আহ্বান সত্ত্বেও ইসরায়েল অনমনীয় মনোভাব দেখিয়ে বলছে, গাজায় হামাসের সব সুড়ঙ্গ ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত সামরিক অভিযান চলবে। গাজা অভিযানের জন্য আরও ১৬ হাজার সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে।
এদিকে, গাজায় জাতিসংঘের আরেকটি আশ্রয়শিবিরে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা করেছে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র। গত বুধবারের ওই হামলায় ১৬ জন নিহত হন। পাশাপাশি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান নাভি পিল্লাই। খবর এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসির।
ইসরায়েলের গতকালের হামলায় এক নারীসহ ছয়জন নিহত হন গাজার দক্ষিণের খান ইউনিস শহরে। দুজন নিহত হন গাজার মধ্যভাগের দার আল-বালাহ এলাকায়। আর রাফাহ শহরে হামলায় নিহত হন এক নারীসহ দুজন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গতকাল বলেছেন, গাজায় হামাসের সব সুড়ঙ্গপথ ধ্বংস না করা পর্যন্ত অভিযান চলবে। মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা অনেকগুলো সুড়ঙ্গ ধ্বংস করতে পেরেছি। এই কাজ শেষ করার জন্য আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।...কাজেই আমি এমন কোনো প্রস্তাব মেনে নেব না, যা ইসরায়েলি জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীর কাজকে ব্যাহত করে।’
এই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র গতকাল আরও ১৬ হাজার সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে বলে ঘোষণা করেছেন। এ নিয়ে এই অভিযানে নিয়োজিত সেনাসদস্যের সংখ্যা দাঁড়াবে ৮৬ হাজারে। মাত্র ৭৭ লাখ জনসংখ্যার ক্ষুদ্র কিন্তু শক্তিধর দেশ ইসরায়েলের সক্রিয় সেনাসংখ্যাই এক লাখ ৭৬ হাজার ৫০০। অন্যদিকে ঘনবসতিপূর্ণ গাজার মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৭ লাখ। দুই দিকে ইসরায়েল, এক দিকে মিসর ও এক দিকে সাগরঘেরা গাজা উপত্যকার আয়তন মাত্র ৩৬০ বর্গকিলোমিটার। সমুদ্রপথেও ফিলিস্তিনিদের চলার স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রিত।
জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন গত বুধবার বলেন, ফিলিস্তিনে জাতিসংঘ পরিচালিত একটি বিদ্যালয়ে আজ সকালে নিন্দনীয় একটি হামলা হয়েছে। ওই বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে তিন হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। ...এ হামলা অগ্রহণযোগ্য এবং দায়ীদের বিচার হতে হবে।
জাতিসংঘ মহাসচিব জানান, ওই বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। বিদ্যালয়টির অবস্থানও তাদের জানানো হয়েছিল। কাজেই বিদ্যালয়টির অবস্থান এবং সেখানে যে সাধারণ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে, তা ইসরায়েলি বাহিনী জানত।
নাভি পিল্লাই গতকাল বলেছেন, ‘ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে গাজায় আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে। তারা বাড়িঘর, বিদ্যালয়, হাসপাতাল এমনকি জাতিসংঘ পরিচালিত আশ্রয়শিবিরেও গোলাবর্ষণ করছে। এসব হামলা দুর্ঘটনাক্রমে ঘটছে বলে আমি মনে করি না।’
কট্টরপন্থী ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসনিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকায় এ পর্যন্ত চার লাখ ২৫ হাজার মানুষ আশ্রয়হীন হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। এর মধ্যে দুই লাখ ২৫ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে জাতিসংঘের ৮৬টি আশ্রয়শিবিরে।
ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত জাতিসংঘের আশ্রয়শিবিরে হামলার নিন্দা জানিয়েছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র বার্নাদাতি মিহান বলেন, গাজায় জাতিসংঘ পরিচালিত বিদ্যালয়ে হামলায় শিশু, জাতিসংঘের কর্মীসহ নিরীহ ফিলিস্তিনিরা নিহত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এই হামলার নিন্দা জানায়।
গাজা থেকে হামাস রকেট ছুড়ছে—এই অজুহাত তুলে গত ৮ জুলাই ‘অপারেশন প্রটেক্টিভ এজ’ নামের এই অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। প্রথম দিকে বিমান হামলায় তা সীমাবদ্ধ থাকলেও হামাসের সুড়ঙ্গ ধ্বংস করার কথা বলে ১৭ জুলাই থেকে শুরু হয় স্থল অভিযান। হামাস অস্ত্র পাচার ও ইসরায়েলে চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে ওই সব সুড়ঙ্গ ব্যবহার করে বলে অভিযোগ আছে। তবে ইসরায়েল জবাবে প্রত্যাঘাত করছে বহুগুণ শক্তি দিয়ে এবং তাদের হামলায় নিহতদের বেশির ভাগই শিশুসহ বেসামরিক লোক।

No comments

Powered by Blogger.