পরিত্যক্ত আড়াই কোটি মানুষ -সরকার কি আয়নায় মুখ দেখে​ নেবে?

সরকার দরিদ্রদের সুরক্ষা তো দূরের কথা, তাদের প্রতি তেমন নজরই দিচ্ছে না। দেশে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে ২৬ শতাংশ তথা পৌনে চার কোটি মানুষ। এদের ৬৪ শতাংশের জীবনে রাষ্ট্র সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। দেশের উন্নয়নের কাহিনির এই অন্ধকার দিক​টিতে আলো পড়বে ​কবে?
পরিকল্পনা কমিশনের সূত্র ধরে গত বুধবারের প্রথম আলো এই সুবিধাবঞ্চিত গরিবদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেছে। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে গরিবদের যুগান্তকারী সেবা দিচ্ছে বলে সরকার দাবি করে। অথচ গত চার বছরে জিডিপির অনুপাতে সামাজিক নিরাপত্তা খরচ কমেছে। ২০১২ সালে খরচের পরিমাণ ছিল জিডিপির ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অথচ ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ২ দশমিক ১৩ শতাংশ। অর্থনীতিবিদদের মতে, এ খাতে বরাদ্দ থাকা উচিত কমপক্ষে জিডিপির ৩ শতাংশ।
সমস্যা আছে সরকারের ১০২টি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতেও। পরিকল্পনা কমিশনের দাবি অনুযায়ী, এ​র সুবিধাপ্রাপ্তদের ১৮ শতাংশই গরিব নয়। আর বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদ বলছেন, ৬০ শতাংশ সুবিধাই অ-গরিবরাই নিয়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে এসব সুবিধা দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বিতরিত এবং জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের দুর্নীতির মাধ্যমে বেহাত হয়ে যায়।
দেশের প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি বৈষম্যও বাড়ছে। এটা সামাল দিতে হলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। গরিবদের আয় বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিতে হবে। গরিবি হটানোর কোনো টোটকা উপায় নেই। অর্থনীতি​, সম্পদ ও অধিকারে জনগণের হিস্যা প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই বাড়াতে হবে।
পৌনে চার কোটি অতিদরিদ্রের প্রায় আড়াই কোটিই যখন নিঃস্ব, নিঃসহায় ও উপেক্ষিত, তখন সরকারের সাফল্য সবই ম্লান হয়ে যায়। জনগণের বিরাট একটি অংশ কেমন আছে, তা দিয়েই সরকারের সাফল্য বোঝা যায়। সরকার কি আয়নায় নিজেদের মুখ দে​খবে?

No comments

Powered by Blogger.