এখনই সংলাপ শুরু করতে হবে -জাতিসংঘের সমন্বয়কারী নিল ওয়াকার

অংশগ্রহণমূলক একটি নতুন নির্বাচনের জন্য দ্রুত পরিবেশ সৃষ্টির তাগিদ দিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের ঢাকাস্থ আবাসিক সমন্বয়কারী নিল ওয়াকার গতকাল রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিকাব)-এর সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ তাগিদ দেন। তিনি বলেন, পরবর্তী নির্বাচন যখনই হোক, তা সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে। সেই নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে এখনই সংলাপ শুরু করতে হবে। নির্বাচন কবে নাগাদ হবে এটি দেশের জনগণ, বিশেষ করে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ঠিক করবে। তবে নির্বাচনের আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যাতে এটি অংশগ্রহণমূলক হয়। আর তা নিশ্চিত করার জন্য সংলাপ অপরিহার্য। তিনি বলেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে বাংলাদেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের কাছে জাতিসংঘ এই আহ্বান জানিয়ে আসছে। আজকের দিনে জাতিসংঘ এটি পুনর্ব্যক্ত করছে। জাতিসংঘ মনে করে, অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের জন্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন জরুরি। ৫ই জানুয়ারির আগে একটি সমঝোতার উদ্যোগ নিয়ে জাতিসংঘ ব্যর্থ হয়েছে। চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে সরকারের সঙ্গে সংসদের বাইরে থাকা দলগুলোর সংলাপের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় দফায় জাতিসংঘ উদ্যোগী হবে কিনা জানতে চাইলে জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা বলেন, সঙ্কটের সমাধানে বিবদমান দুই পক্ষকে আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তাদেরকেই সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। এখানে বাইরের কেউ সমাধান করতে পারবে না। সঙ্কটের সমাধানে দুই দল বিশেষ করে দুই নেত্রীর ইচ্ছা ও উদ্যোগ থাকতে হবে। তবে দুই দল ও দুই নেত্রী চাইলে পরিবেশ সৃষ্টিতে জাতিসংঘ সহায়তা করতে পারে। এখানে কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে তা আলাপ আলোচনা-সংলাপের মাধ্যমে ঠিক করা যেতে পারে। বাংলাদেশের সঙ্কট সমাধানে জাতিসংঘের কোন বিশেষ ভাবনা-উদ্যোগ আছে কিনা, তা-ও জানতে চাওয়া হয়। জবাবে জাতিসংঘ প্রতিনিধি বলেন, কি ধরনের সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ সেটি আগে জানতে হবে। এখনই এ ধরনের আলোচনা ‘প্রিম্যাচিউর’ হবে মন্তব্য করে নিল ওয়াকার বলেন, অবশ্যই বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল চাইলে সংলাপের পরিবেশ সৃষ্টিতে জাতিসংঘ সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। মতবিনিময় সভায় জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকরের আগে প্রধানমন্ত্রীকে জাতিসংঘ মহাসচিবের টেলিফোনের প্রসঙ্গ টেনে এক সাংবাদিক জানতে চান ফাঁসি কার্যকর না করতেই কি মহাসচিব ফোন করেছিলেন। জবাবে নিল ওয়াকার বলেন, যে কোন গুরুতর অপরাধেও মৃত্যুদণ্ড না দেয়ার পক্ষে জাতিসংঘ। তবে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর যেসব দেশে এখনও মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে সেখানে একজন অভিযুক্তের শেষ আপিল পর্যন্ত সুযোগ দেয়ার অনুরোধ জানায় জাতিসংঘ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিতে ফোন করেছিলেন মহাসচিব, ফাঁসি ঠেকাতে নয়।
গাজায় ইসরাইলি হামলা ঠেকাতে জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সিনিয়র সাংবাদিকরা। জবাবে নিল ওয়াকার বলেন, গাজায় হামলা ঠেকাতে জাতিসংঘ ব্যর্থ- ঢালাও এমন দোষারোপ ঠিক নয়। কারণ জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মতামতের ভিত্তিতে চলে। তাদের ঐকমত্য ছাড়া কোন সিদ্ধান্ত জাতিসংঘের একার নেয়ার কোন ক্ষমতা নেই। এটি সত্যি হাজারের ওপর মানুষ নিহত হয়েছে। সেটা নিয়ে জাতিসংঘ দুঃখিত। ডিকাবের সভাপতি মাঈনুল আলমের সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ‘ডিকাব টক’-এ স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আঙ্গুর নাহার মন্টি। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কূটনৈতিক রিপোর্টার ও সিনিয়র সাংবাদিকরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। মতবিনিময়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগে ডিকাবের বার্ষিক প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.