রহস্যমানব সিসির অধীনে অনিশ্চয়তায় মিসর

আবদেল ফাত্তাহ আল–সিসি
মাত্র এক বছর আগের কথা। প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি ও মুসলিম ব্রাদারহুডকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করায় অনেকেই তাঁকে বাহবা দিয়েছিল। গত মে মাসে তারাই তাঁকে ভোট দিয়ে বিপুল ব্যবধানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে। এখন সেই মিসরীয়রাই একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে হয়রান: সাবেক ফিল্ড মার্শাল প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি মিসরের সমস্যাগুলো সামলাতে কী পরিকল্পনা নিচ্ছেন? মুরসি ও ব্রাদারহুডকে উৎখাতে এখনো বেশির ভাগ মিসরীর মনোভাবই দৃশ্যত ইতিবাচক। একই সঙ্গে তারা রহস্যময় চরিত্র সিসির নীতি নিয়ে ধাঁধায় রয়েছে। রাজনীতিক, বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে প্রায় সবাই বলেন, ‘আমি আসলে জানি না।’ সিসির রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টি স্পষ্ট হলেও দেশের অর্থনীতির জন্য জরুরি ভিত্তিতে যেসব সমস্যা মোকাবিলা করা দরকার, সেগুলো নিয়ে তাঁর চিন্তাভাবনা এখনো অস্পষ্ট।
অবশ্য, সিসির এ পর্যন্ত নেওয়া পদক্ষেপের মধ্যে কিছুটা ইঙ্গিত মেলে। তেল আমদানির বিপুল খরচ বাঁচাতে সিসি লোকজনকে বাইসাইকেলে চড়ার আহ্বান জানিয়েছেন। দেশের অর্থনীতিকে সহায়তায় নিজের বেতনের অর্ধেক এবং ব্যক্তিগত সম্পদের অর্ধেক দিয়ে দিচ্ছেন।এ ছাড়া সিসি সর্বোচ্চ বেতনের ক্ষেত্রে একটা নিয়ম দাঁড় করতে অর্থমন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে যে দেশের ২৫ শতাংশের বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে এবং আরও ২৫ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার কাছাকাছি বাস করে, সে দেশে এসব নীতি কতটুকু সুফল হবে, তা অস্পষ্ট। সিসি ইসলাম ধর্মের প্রতি নিজের আনুগত্যের ব্যাপারে কোনো সন্দেহের অবকাশ রাখেননি। আবার সিসিরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় যানবাহনে ধর্মীয় স্লোগান ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। রাজনৈতিক ব্যাপারে সিসির স্পষ্ট বার্তা হচ্ছে, তিনি জীবনের সব উপাদানের ওপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ চান। নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি বলেছিলেন, মিসরে আগামী অন্তত ২৫ বছরেও গণতন্ত্র সম্ভব নয়। সিসির কর্মকাণ্ডেও সেটা পরিষ্কার, তিনি আসন্ন পার্লামেন্ট নির্বাচনের জন্য যে আইন করেছেন, তাতে একটি দুর্বল পার্লামেন্টই পাবে মিসর। কারণ, সেখানে রাজনৈতিক দলের চেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্যই বেশি সুযোগ রাখা হয়েছে। সিসি ডিক্রি জারির মাধ্যমে সুপ্রিম কাউন্সিল গঠন করেছেন, যা নতুন আইন করবে।
এর অর্থ, পার্লামেন্টের হাতে কোনো ক্ষমতা থাকবে না। ধর্মীয় ও শিক্ষাগত ব্যাপারেও নিয়ন্ত্রণ পোক্ত করছেন সিসি। তিনি আল-আজহারের সনদধারী ছাড়া কাউকে ধর্মোপদেশ দেওয়ার অনুমতি দেবেন না। আর সিসি ব্যক্তিগতভাবে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ও ডিনদের নিয়োগ দেবেন। এদিকে মুসলিম ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে দমন-নিপীড়ন অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি বিক্ষোভবিরোধী আইন অমান্যকারীদের কঠোর সাজা দেওয়া হচ্ছে। এর বাইরেও অনেক কিছু রয়েছে, যেসব জায়গায় সিসির নীতি কী হবে, তা এখনো অস্পষ্ট। এমনকি মুরসিকে উৎখাতের পর যে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কুয়েত মিসরে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ঢেলেছিল, তারাও এখন বলছে, সুস্পষ্ট নীতি ও গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারকাজ হাতে না নিলে সহায়তার দরজা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এককথায় নতুন প্রেসিডেন্ট সিসিকে পুরোপুরি বুঝতে আরও অপেক্ষা করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.