বেকায়দায় তাপস পাল, সাংসদপদ খারিজের দাবি

তাপস পাল
লোকসভার তৃণমূলের সাংসদ অভিনেতা তাপস পালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সর্বস্তরে চাপ বাড়ছে। পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাপসের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরব। পাশাপাশি এবার চাপ বাড়ল দিল্লিতেও। ভারতের নয়টি বামপন্থী মহিলা সংগঠনের নেত্রীরা গতকাল বৃহস্পতিবার লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজনের সঙ্গে দেখা করে লোকসভার এই ‘দুর্বিনীত’ সদস্যের সদস্যপদ খারিজের দাবি জানালেন। ৭ জুলাই সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হচ্ছে। সেই দিন এই সংগঠনের সদস্যরা দেশজুড়ে বিক্ষোভ করবেন। এই অসন্তোষের মুখোমুখি যাতে তাপসকে পড়তে না হয়, সে জন্য তাঁকে বাজেট অধিবেশনের প্রথম কদিন দিল্লি না আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নয় বামপন্থী সংগঠনের নেত্রীরা বৃহস্পতিবার স্পিকার সুমিত্রা মহাজনের সঙ্গে দেখা করে বলেন, কৃষ্ণনগরের দুবারের এই সাংসদ একাধিক পথসভায় যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, যেভাবে প্রতিপক্ষকে প্রাণে মারার হুমকি দিয়েছেন, যে ভাষায় ঘৃণা ছড়াতে চেয়েছেন, তা বিস্ময়কর।
কোনো জনপ্রতিনিধি এই ভাষায় কথা বলতে পারেন, এভাবে আইন হাতে তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন, তা ভাবা যায় না। তাঁরা বলেন, আরও বিস্ময়কর হলো পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের নীরবতা। রাজ্য পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, শাসক দলও স্রেফ ক্ষমা প্রার্থনায় সন্তুষ্ট। এ অবস্থায় স্পিকারকেই সক্রিয় হতে হবে। ন্যাশনাল ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান উইমেনের নেত্রী অ্যানি রাজা বলেন, তাপস পালের ক্ষমা চাওয়াই সব নয়। এটা তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। তাঁর হুমকির সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। আরেক নেত্রী জগমতি সাংওয়ান বলেন, ৭ তারিখে সংসদ বসার দিন তাঁরা দেশজুড়ে বিক্ষোভ করবেন। তিনি বলেন, স্পিকারকে ব্যবস্থা একটা নিতেই হবে। তাঁরা চান সদস্যপদ খারিজ করা হোক। স্পিকার চাইলে সাংসদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ও সাংসদের জবাব খতিয়ে দেখার জন্য একটি কমিটি তৈরি করে দিতে পারেন, সংসদের এথিকস কমিটির কাছেও মতামত ও সুপারিশের জন্য পাঠাতে পারেন। সেই মতামত অনুযায়ী তিনি ব্যবস্থা নিতে পারেন। ব্যবস্থার মধ্যে ভর্ৎসনা যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে সদস্যপদ খারিজের ক্ষমতা।
তবে সদস্যপদ খারিজ করতে হলে তা করবেন লোকসভার সদস্যরাই। প্রস্তাবটি নিয়ে ভোটাভুটির একমাত্র অধিকার রয়েছে সভারই। তাপস পালের বিরুদ্ধে অধিকাংশই সরব হলেও রাষ্ট্রপতিতনয় লোকসভার কংগ্রেস সদস্য অভিজিত মুখার্জি অভিনেতা সাংসদের প্রতি সদয়। অভিজিত মনে করেন, তাপস মুখ ফসকে কিছু কথা বলে ফেলেছেন। সে জন্য তিনি ক্ষমাও চেয়েছেন। অতএব বিষয়টির ওখানেই শেষ হওয়া উচিত। অবশ্য অভিজিতের দল কংগ্রেস তাপসের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে। কলকাতা প্রতিনিধি জানান, তাপস পালের ওই মন্তব্যকে ঘিরে এখনো গোটা রাজ্যে আন্দোলন চলছে। বুধবার দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি, পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর, উত্তর চব্বিশ পরগনার দেগঙ্গা থানা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বিষ্ণুপুর থানার সামনে বিজেপি ও দলটির মহিলা শাখা বিক্ষোভ ও তাপস পালের কুশপুত্তলিকা দাহ করে। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, বামপন্থীরা বুধবার থেকে তিন দিনব্যাপী রাজ্যের প্রতিটি থানার সামনে তাঁর গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ করবে। কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা তাঁর দলের অপরাধীদের আড়াল করছেন। দিদি যেমন কোচিং সেন্টার খুলেছেন, তাঁর তেমনই ছাত্র তৈরি হচ্ছে। এদিকে তাপস পালের বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি জনস্বার্থ মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.