প্রিয়াঙ্কা এলেন, তবে দেরিতে

প্রিয়াঙ্কা গান্ধী
রাজনৈতিক দল হিসেবে কংগ্রেস এখন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নির্বাচনী পরাজয়ের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে বলে বিভিন্ন জরিপে আভাস মিলছে। তবে এই দুর্দিনেও দলটির জন্য একটি ভালো খবর: রাজনীতির মঞ্চে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর আবির্ভাব। ভারতের বিখ্যাত গান্ধী পরিবারের সদস্য ৪২ বছর বয়সী প্রিয়াঙ্কা এত দিন রাজনীতি এড়িয়ে চলেছেন। এক বছরের বড় ভাই রাহুল গান্ধী কংগ্রেসের সহসভাপতির দায়িত্ব নিলেও তিনি ছিলেন চুপচাপ। তবে চলতি লোকসভা নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত প্রিয়াঙ্কা লড়াইয়ে শামিল হয়েছেন। শেষ সময়ে এলেও প্রতিপক্ষ ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে মোদিবিরোধীদের চাঙা করতে বেশ সফল হয়েছেন। প্রিয়াঙ্কা এবারের নির্বাচনী লড়াইকে অসাম্প্রদায়িক ভারতের জন্য ‘লড়াই’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সম্প্রতি তিনি বলেন, কংগ্রেসের আদর্শ হচ্ছে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা...বিরোধীদের আদর্শ হচ্ছে, বিভাজন তৈরি করা। অবশ্য বিজেপি ও মোদির সঙ্গে প্রিয়াঙ্কার এই সরাসরি বিবাদে জড়ানোর পেছনেও একটা প্রেক্ষাপট রয়েছে। মোদি বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচনী প্রচারণায় তাঁর স্বামী রবার্ট ভদ্রকে টেনে নানা বক্তব্য দেন। মোদিসহ বিজেপির নেতাদের অভিযোগ, ভদ্র হরিয়ানা রাজ্যে অবৈধ ভূমি চুক্তির মাধ্যমে অগাধ টাকার মালিক হয়েছেন। প্রিয়াঙ্কা কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রচারণার কেন্দ্রে চলে আসায় আরেকটি প্রশ্নেরও জন্ম দিয়েছে।
সেটা হলো, রাজনীতির মাঠে তাঁর ঔজ্জ্বল্যের কাছে রাহুল ম্লান হয়ে যাচ্ছেন কি না। একের পর এক মোদিকে আক্রমণ করে বক্তব্য দিয়ে রাহুলের চেয়ে এখন প্রিয়াঙ্কাই বেশি খবরের শিরোনাম হচ্ছেন। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রিয়াঙ্কা অনেক দেরি করে ফেলেছেন। কারণ, দলের অবস্থান যে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে, সেখান থেকে টেনে তুলে আনার মতো সময় হয়তো আর নেই। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের দুটি দুর্নীতির কেলেঙ্কারিকে পুঁজি করে বিজেপি দুর্নীতিবিরোধী প্রচারণা চালিয়ে ইতিমধ্যে ফায়দা লুটেছে। এরপর রবার্ট ভদ্রের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে তারা নতুন অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়া ফোকাসের প্রতিষ্ঠাতা সুভাষ আগারওয়াল বলেন, প্রিয়াঙ্কার আসল সমস্যা হচ্ছে, তাঁর নামের শেষাংশ (ভদ্র) এবং এই অংশের কারণে তাঁর আবেদন কতটা গ্রাহ্য হবে, সেটা দেখার বিষয়। প্রিয়াঙ্কা নিশ্চিতভাবেই বিজেপিকে কিছুটা নাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে তিনি মাঠে এসেছেন অনেক দেরিতে। ছোটবেলায় দাদি ইন্দিরা গান্ধী ও বাবা সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে দেখেছেন প্রিয়াঙ্কা ও রাহুল। শৈশবের সেই ভীতি নিয়ে বেড়ে ওঠা দুজনের মধ্যে তাই ঘনিষ্ঠতাও অনেক বেশি। তবে প্রিয়াঙ্কার যেখানে ভোটারদের সঙ্গে একটি প্রাকৃতিক সংযোগ রয়েছে, সেখানে রাহুল অনেকটা লাজুক ও বিমুখ ধরনের মানুষ। তিনি নিজেই বলেছেন, ক্ষমতা তাঁর কাছে বিষের মতো বিষয়। গান্ধী পরিবারের জীবনী লেখক রাশিদ কিদবাই বলেন, প্রিয়াঙ্কা বাকপটু। কাউকে খোঁচা মারার ক্ষমতা তাঁর রয়েছে। অন্যদিকে, রাহুল চাপা প্রকৃতির মানুষ। প্রিয়াঙ্কা বৃহত্তর রাজনৈতিক ভূমিকা নিন, কংগ্রেসের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে এমনটাই চেয়েছিলেন। তবে প্রিয়াঙ্কা ঘোষণা দেন, আপাতত তিনি নিজের ভাই ও মায়ের নির্বাচনী আসনের বাইরে কোথাও প্রচারণা চালাবেন না। এনডিটিভি।

No comments

Powered by Blogger.