আলোকিত মানুষ হওয়ার শিক্ষা চাই: প্রেসিডেন্ট

প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, আলোকিত মানুষ হওয়ার শিক্ষা চাই। সার্টিফিকেটস্বর্বস্ব শিক্ষা নয়, নোট মুখস্থ করে পাস করার শিক্ষা নয়, সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব গড়ার শিক্ষা চাই। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত ৪৮তম সমার্বতনের সভাপতি হিসেবে উপস্থিত থেকে তিনি এ কথা বলেন। প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে ইতিবাচক ছাত্র রাজনীতি চর্চায় ছাত্র সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। একটি জ্ঞাননির্ভর ঐতিহ্যকে লালন করতে গবেষণার ক্ষেত্র আরও সম্প্রসারিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, মানুষে মানুষে সম্মিলন ঘটানোর শিক্ষাই আমরা চাই। শিক্ষার সঙ্গে মননশীলতার সংযোগ ঘটাতে হবে।
প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ আরও বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষা কার্যক্রম পরিকল্পনা করতে হবে। সমাজের পশ্চাৎপদ শক্তি শিক্ষার আলোকে ভয় পায়। আমরা আজ আবার ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছি। আজকের লড়াইয়ে শুভ শক্তি জয়ী না হলে রাষ্ট্র হিসেবে আমরা পিছিয়ে যাব। আমরা আবার পরিচিতি লাভ করব উগ্রবাদী, সন্ত্রাসী, ধর্মান্ধ ও পশ্চাৎপদ জাতি হিসেবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকা থেকে সমাবর্তনের শোভাযাত্রা শুরু হয় দুপুর পৌনে ১২টায়। শোভাযাত্রায় প্রেসিডেন্ট, ভিসি, সমাবর্তন বক্তাসহ বিভাগের ডিন, হল প্রভোস্টরা উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। এ সমাবর্তনে ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চের (সার্ন) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. রলফ ডিটার হয়ারকে ডক্টর অব সায়েন্স (ডিএসসি) ডিগ্রি প্রদান করা  হয়। প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. রলফ ডিটার হয়ারের হাতে ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রির সার্টিফিকেট ও ক্রেস্ট তুলে দেন। এরপর পিএইচডি ডিগ্রিপ্রাপ্ত ৩৮ জন ও এমফিল ডিগ্রিপ্রাপ্ত ২৫ জন জনের নাম ঘোষণা করা হয়। কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য ৩৩ জন স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী-গবেষকের হাতে পদক তুলে দেন প্রেসিডেন্ট। সমাবর্তন বক্তা অধ্যাপক ড. রলফ ডিটার হয়ার তার বক্তব্যে বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক অতীত ঐতিহ্য রয়েছে। এখানে অনেক শিক্ষক, গবেষক ও বিজ্ঞানী রয়েছেন। তারা চেষ্টা করলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মান বিশ্বের কাছে আরও উঁচু করে ধরতে পারেন। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির বিকল্প নেই। প্রযুক্তিগত দিক থেকে যে যত দ্রুত এগিয়েছে সে ততই সফল হয়েছে। বিজ্ঞান চর্চার উপর আরও বেশি জোর দিতে হবে। গবেষণা কার্যক্রম বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে সকলে মিলে একযোগে কাজ করলে তা সম্ভব। হয়ার আরও বলেন, বিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী সত্যেন বোস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। এ গুণী অধ্যাপকের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি লাভ করায় তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমাদ। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসালম নাহিদসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সচিব প্রমুখ। ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, শিক্ষার ব্যাপক প্রসার আমাদের কাম্য। আমরা চাই দেশের সব মানুষ স্বাক্ষর ও সুশিক্ষিত হোক। শিক্ষার গুণগত মান সকল পর্যায়ে অক্ষুণ্ন থাকুক।
এদিকে সমাবর্তনে অংশ নেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য গ্রাজুয়েটদের চোখে মুখে ছিল উচ্ছ্বাস। তারা নেচে-গেয়ে দিনটি উদ্‌যাপন করেন। কার্জন হল, রাজু ভাস্কর্য, অপরাজেয় বাংলা, টিএসসি, স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বর, স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্য, কলাভবন, বটতলাসহ ক্যাম্পাসের প্রায় প্রতিটি জায়গায় ছিল আড্ডা আর ছবি উঠানোর ব্যস্ততা। সমাবর্তনে অংশ নেয়া একাউন্টিং বিভাগের শিক্ষার্থী আফছার বলেন, আজকের দিনটি অনেক প্রতীক্ষিত। উল্লেখ্য, এবারের সমাবর্তনে অংশ নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন স্তরের ডিগ্রিধারী মোট ৮ হাজার ৩১২ জন গ্রাজুয়েট। এর মধ্যে রয়েছেন, পিএইচডি ৩৮ জন, এমফিল ২৫ জন, স্বর্ণপদক ৩৩, এমডি-এমএস ৩৪, বিভিন্ন অনুষদের অনার্স ৪৬৮০ জন, মাস্টার্স ৮৫৫ জন, এমবিবিএস ১৭২০ জন, বিডিএস ২৮২ জন, নার্সিং ২২১ জন, ফিজিওথেরাপি ২০১ জন, শিক্ষা অনুষদ ১ জন, হোমিও আয়ুর্বেদিক ৪৭ জন, বিএড ১০৩ জন এবং এমএড ৭২ জন।

No comments

Powered by Blogger.