দশম সংসদ নির্বাচনের একটি ব্যঙ্গাত্মক ব্যবচ্ছেদ by মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক আচারের মধ্যে নির্বাচন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, একমাত্র নির্বাচনের মধ্যদিয়ে বৈধভাবে সরকার পরিবর্তিত হয়। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ বেছে নেয় তাদের পছন্দনীয় সরকার। নিজেদের চাহিদার সঙ্গে প্রতিযোগী দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহার মিলিয়ে ভোটাররা পছন্দনীয় দলকে ভোট দিয়ে সরকার গঠনে সহায়তা করেন। পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের দেশগুলোতে একইভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় না। পাশ্চাত্যের তুলনায় প্রাচ্যের দেশগুলোতে ভোটাররা নির্বাচনে অধিকতর নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত হন। তারা তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যদিয়ে উৎসবীয় আমেজে নির্বাচনে অংশ নেন। নির্বাচনে প্রতিযোগিতা হয় প্রতিন্দ্বন্দ্বী দলগুলোর মধ্যে। তবে নির্বাচিত সরকারের চরিত্রে কখনও কখনও ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতা দেখা দিলে নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় ছন্দপতন ঘটে। অনেক ক্ষেত্রে সরকারি দল অগণতান্ত্রিক উপায়ে বিরোধী দলকে কোণঠাসা করে যে কোনো উপায়ে নির্বাচন জেতার পরিকল্পনা করে। এর ফলে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব-সংঘাতে বিঘিœত হয় নির্বাচনী পরিবেশ। অনেক দেশে এ কারণে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থার সুযোগে অরাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতায় এলে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা পিছিয়ে যায়। বাংলাদেশে ২০০৬-০৭ সালে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মতভেদজনিত দ্বন্দ্ব-সংঘাতে অরাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতায় এসে দুই বছর দেশ পরিচালনা করেছিল। ওই তিক্ত অভিজ্ঞতার সাত বছর পর আবারও একই কারণে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অচলাবস্থা চলছে। আবারও আশংকা দেখা দিয়েছে প্রার্থীহীন একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে দেশকে দীর্ঘমেয়াদি অস্থিতিশীলতায় নিয়ে যাওয়ার। একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মধ্যদিয়ে সরকার গঠিত না হলে এ দেশে আবারও স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্র পিছিয়ে যাবে। এ প্রবন্ধে সংক্ষেপে একদলীয় নির্বাচনের ভালোমন্দ উপস্থাপন করা হবে।
এক. বিরোধীদলীয় জোটসহ আরও কিছু দলের প্রবল বিরোধিতার মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারবে কিনা সে সম্পর্কে নির্বাচন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশবাসী সন্দেহ এবং চরম টেনশনের মধ্যে রয়েছেন। এ কারণে এখন ওষুধ কোম্পানিগুলো উত্তেজনা প্রশমন এবং উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের উৎপাদন বাড়িয়ে দিতে পারে। এখন থেকে নির্বাচন এবং নির্বাচন পরবর্তী অনির্দিষ্টকালের জন্য বাংলাদেশে এ রকম ওষুধের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এ রকম ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোর এ ধরনের ওষুধের বিক্রয় বৃদ্ধির মধ্যদিয়ে ভালো ব্যবসা হবে।
দুই. প্রহসনের এ নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশন যে ৬০০ কোটি টাকা পেয়েছে তার অর্ধেকেরও বেশি সাশ্রয় হবে। কারণ, ১৫৪ আসনে নির্বাচন না হওয়ায় ওইসব আসনে একদিকে যেমন নির্বাচনী মালামাল পাঠাতে হবে না, তেমনি নিয়োগ দিতে হবে না নির্বাচনী কর্মকর্তা। আবার, ৩০০ আসনে নির্বাচন করতে যতসংখ্যক আইনশৃংখলা বাহিনী ও সেনা সদস্য নিয়োগ করতে হতো এখন তার অর্ধেকেরও কম নিয়োগ করতে হওয়ায় এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট অর্থ ব্যয় কমবে। তবে নির্বাচনী মালামাল প্রেরণ এবং ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা রক্ষায় বাড়তি ব্যয় বৃদ্ধি ঘটবে।
তিন. সংঘর্ষপূর্ণ এ নির্বাচন ঘিরে এরই মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোর ব্যবসা জমে উঠেছে। আহত-নিহতের সংখ্যাবৃদ্ধি ও বার্ন ইউনিটে প্রচুর রোগী সমাগমের মধ্যদিয়ে হাসপাতালগুলো চুটিয়ে ব্যবসা করছে। আগামীতে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়া, নিবাচনী মালামাল প্রেরণ ইত্যাদির কারণে আরও অবরোধ ও অসহযোগকেন্দ্রিক সংঘর্ষ হলে যেসব আসনে নিবাচন হবে ওই নির্বাচনী এলাকার কাছের হাসপাতালগুলোর ভালো ব্যবসা হবে। কারণ, সরকারি দল একতরফাভাবে নির্বাচন করতে গেলে নির্বাচন বয়কটকারী ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা ওই নির্বাচন প্রতিহত করতে নামলে হাসপাতালে রোগীর সমাগম বাড়বে।
চার. এ নির্বাচনকে ঘিরে বিভাগীয় ও জেলা সদরের প্রেস ব্যবসায়ীদের মন খারাপ। পাঁচ বছর পর এরা নির্বাচনী মৌসুমে প্রার্থীদের নির্বাচনী পোস্টার, লিফলেট ইত্যাদি ছেপে যে পরিমাণ উপার্জন করেন, এবার সে উপার্জন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে। কারণ, অর্ধেক আসনে তো নির্বাচনই হবে না। পাঁচ জেলার (শরীয়তপুর, চাঁদপুর, জয়পুরহাট, রাজবাড়ী, মাদারীপুর) প্রেস ব্যবসায়ীদের ভীষণ মন খারাপ। কারণ, ওই জেলাগুলোর সব আসনের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্ব^ন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় কোনো নির্বাচনী ব্যবসা হবে না। তবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতরা কোনো শোডাউন বা বিজয় মিছিল করলে সেগুলোকে কেন্দ্র করে সংঘাত হলে জেলার হাসপাতালগুলোর কিছু ব্যবসা হতে পারে।
পাঁচ. এ নির্বাচনকে ঘিরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদকে ঘিরে যে নাটক রচিত হয়েছে, তাতে জাতীয় পার্টি সমর্থনকারী তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অসুস্থ হলে ভুল করে অ্যাম্বুলেন্স না ডেকে র‌্যাবকে ফোন করতে পারেন। এ বিভ্রান্তি থেকে জনগণকে বাঁচাতে যদি সরকার কিছু না করে, তাহলে বেসরকারি এনজিওদের জনগণকে এ মর্মে উদ্বুদ্ধ করতে হবে যে, অসুস্থ হলে তাদের র‌্যাবের পরিবর্তে হাসপাতালে ফোন করতে হবে এবং বেশি অসুস্থ হলে র‌্যাবের গাড়ির পরিবর্তে অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে না গেলে অসুস্থ অবস্থায় তারা বিপদে পড়তে পারেন। এরশাদ সাহেব র‌্যাবের গাড়িতে কেন হাসপাতালে গেলেন সে সম্পর্কেও সরকারকে একটি গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে হবে।
ছয়. পাঁচ বছর পর একবার সংসদ নির্বাচন এলে গরিব-দুঃখী ও মেহনতি মানুষের কদর বৃদ্ধি পায়। বস্তিবাসী গরিবজন এ উপলক্ষে ভোটপ্রার্থীদের কাছ থেকে গোপনে কিছু উপার্জনও করতে পারেন। কিন্তু এবার সে আশায় গুড়ে বালি পড়েছে। এমনিতেই অর্ধেকের বেশি আসনে নির্বাচন হচ্ছে না, বাকি যে আসনগুলোতে নির্বাচন হবে সেখানে প্রতিযোগিতা না হওয়ায় ভোটপ্রার্থীরা এবার গরিব ভোটারদের দ্বারস্থ হবেন না। ফলে এবার নির্বাচনকেন্দ্রিক শাড়ি, লুঙ্গি, চাদর বা নগদ অর্থ সহায়তা পাওয়া যাবে না মনে করে গরিব-দুঃখী মানুষের খুবই মন খারাপ।
সাত. এ নির্বাচনে প্রিসাইডিং বা পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করাকে সংশ্লিষ্টরা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন। নির্বাচন কেন্দ্রে হামলা হয় কিনা ভেবে এখন থেকেই দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেকে দোয়াদরুদ পড়তে শুরু করেছেন। যে ১৫৪ আসনে নির্বাচন হবে না, ওইসব কেন্দ্রে যাদের ডিউটি করতে হতো তারা হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন। একইভাবে বাকি কেন্দ্রগুলোতে যাদের নির্বাচনী ডিউটি রয়েছে তারা রয়েছেন চরম টেনশনে। অনেকে এখনই ভাবছেন, যেহেতু একদলীয় নির্বাচনে সন্ত্রাস ও বোমাবাজি হলে ভোটার উপস্থিতি খুবই কম হবে, সে ক্ষেত্রে সরকারদলীয় প্রার্থীরা নির্বাচনটিকে গ্রহণযোগ্য করার জন্য নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করে বেশি ভোট কাস্ট দেখাতে চেষ্টা করবেন; আর ওই প্রচেষ্টায় বাধা দিলে সন্ত্রাসের কবলে পড়তে হতে পারে।
আট. এ রকম একদলীয় এবং ঝুঁকিপূর্ণ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে কোনো দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষক আসবেন কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। তবে যদি সরকারি অনুরোধে কোনো স্বদেশী বা বিদেশী পর্যবেক্ষক এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসেন, তাহলে নির্বাচন কমিশন ওই পর্যবেক্ষকদের ভালোভাবে ওরিয়েন্টেশন দেয়ার পর তাদের শারীরিক নিরাপত্তার জন্য লাইভ জ্যাকেট ও হেলমেট সরবরাহের কথা ভাবতে পারে। তাছাড়া ওরিয়েন্টেশনের সময় তাদের বাংলাদেশী সংস্কৃতি, নির্বাচনী নিয়মকানুনসহ প্রাথমিক আÍরক্ষা, ককটেল ও পেট্টলবোমা আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করার কলাকৌশল রপ্ত করার প্রশিক্ষণ দিলে ভালো হবে।
নয়. অর্ধেকের বেশি আসনে (১৫৪) নির্বাচন না হওয়ায় বাকি যে ১৪৬ আসনে নির্বাচন হবে সেখানে কমিশন আগের চেয়ে বেশিসংখ্যক আইন-শৃংখলা বাহিনী ও সেনা সদস্য মোতায়েন করতে পারবে। যদি নির্বাচন বয়কটকারী দলগুলো এ নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করতে চায়, তাহলে এ বিষয়টি মাথায় রেখে তাদেরও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন করে প্রতিরোধের অংক করে লোকবল বৃদ্ধি করতে হবে। তবে এহেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন টানটান উত্তেজনাপূর্ণ নির্বাচনে সাধারণ ভোটাররা নির্বাচন কেন্দ্রে যান কিনা সেটাই দেখার বিষয়।
দশ. নির্বাচনী সিডিউল ঘোষণার পর লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে কমিশনের অমনোযোগ, সরকারি দলের সাজানো প্রশাসনে রদবদল না করা, একজন দলীয় প্রধানকে বাড়ি থেকে র‌্যাবের তুলে নেয়ার পরও ইসির নীরব থাকা এবং মনোনয়নপত্র জমাদান, প্রত্যাহার ও প্রতীক বরাদ্দ প্রক্রিয়াগুলোতে সরকারদলীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যানের প্রভাব বিস্তার ইত্যাদি নিয়ে কমিশনের অনিয়মতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করলে অনুধাবন করা যায় দশম সংসদ নির্বাচন যদি হয়, তাহলে নির্বাচনটি কেমন হবে। এ রকম একটি একদলীয় ও ভোটারবিহীন নির্বাচন করার পর নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি যে কতটা ভূলুণ্ঠিত হবে তা অনুমান করা যায়।
এগার. সরকার এখন পর্যন্ত এমন কোনো ঘোষণা দেয়নি যে এ নির্বাচনের পর তারা সংসদে সংবিধান সংশোধন করে নির্দলীয় ব্যবস্থাধীনে সংসদ নির্বাচনের বিধান সংবলিত বিল পাস করে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে অতি দ্রুত আরেকটি নির্বাচন করবে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, একটি যাচ্ছেতাই মার্কা নির্বাচনের মাধ্যমে একবার ক্ষমতায় যেতে পারলে সরকার শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে পাকাপোক্তভাবে ক্ষমতায় থাকতে চাইবে। সে কারণে বিরোধী দল আপ্রাণ চেষ্টা করবে এ নির্বাচন প্রতিহত করার। তবে যদি প্রতিহত করতে না পারে, তাহলে বিরোধী দল নির্বাচন পরবর্তী অবস্থায় সরকারকে একদিনও স্বস্তিতে থাকতে না দিয়ে প্রথমদিন থেকেই কঠোর সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে নিয়োজিত হবে।
বারো. আলোচ্য নির্বাচনে কত শতাংশ ভোট পড়বে সে অংক বের করতে গভীর গবেষণার প্রয়োজন পড়বে না। কতসংখ্যক ভোটার ভোট কেন্দ্রে যাবেন তার ওপর এ পারসেন্টেজ নির্ভর করবে না; বরং বিষয়টি নির্ভর করবে সরকারি দল কত শতাংশ ভোট কাস্ট দেখাতে চান তার ওপর। কারণ, ‘আমরা আর মামুরা’ মিলে করা এ নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে যেহেতু বিরোধীদলীয় কোনো এজেন্ট থাকবেন না, ফলাফল পূর্বনির্ধারিত হওয়ায় পর্যবেক্ষণের তেমন কিছু নেই মনে করে হয়তো থাকবেন না পর্যবেক্ষকরাও। এ সুবর্ণ সুযোগে সাজানো প্রশাসনে সরকারি ইচ্ছার বাস্তবায়ন ঘটাতে সরকারি দলের নেতাকর্মীদের অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কাজেই ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে না গেলেও সরকার চাইলে এ নির্বাচনে ৫ থেকে শুরু করে ৮৫ শতাংশ, বা আরও বেশি ভোট কাস্ট দেখাতে পারবেন।
তের. নির্বাচন হওয়ার আগেই লক্ষণ দেখে বিশেষজ্ঞরা এ নির্বাচনকে যেসব বিশেষণে বিশেষিত করছেন তাতে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে নির্বাচনটি হলে যুগপৎ দেশে এবং বিদেশে তা গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান এ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের ‘গণদুশমন’ ও ‘জাতীয় বেঈমান’ বলে অভিহিত করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এ নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে তুলনা করেছেন ‘সমঝোতার ভিত্তিতে টেন্ডার ভাগাভাগির মতো’ বলে; আরেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী ‘হাস্যকর বিষয়’ বলে এ নির্বাচনকে আখ্যায়িত করেছেন। প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল হক যখন এ নির্বাচনকে ‘নির্বাচনের নামে তামাশা’ বলেছেন, তখন অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন ‘হাস্যকর ও অরুচিকর’। জাপার কাজী জাফর আহমেদ এ নির্বাচনকে ‘নজিরবিহীন তামাশা’ বললেও বিকল্প ধারার মাহী বি চৌধুরীর ‘শতাব্দীর সেরা কৌতুক’ এবং মানবজমিন পত্রিকার ‘জাতীয় রসিকতা’ বিশেষণদ্বয় আলোচ্য নির্বাচনের বিশেষণ হিসেবে খুবই যথাযথ।
উপরের বিশেষণগুলো বিশ্লেষণের পর দশম সংসদ নির্বাচনের হিসাব-নিকাশ করে বলা যায়, এ রকম একটি নির্বাচন সরকার সাজানো প্রশাসনের সহায়তায় কোনো রকমে করতে পারলেও দেশে শান্তি আসবে না। নির্বাচনটি নিরুত্তাপ, নিষ্ক্রিয়, সহিংস, অগণতান্ত্রিক, দুর্নীতিযুক্ত একটি নিকৃষ্ট নির্বাচনের উদাহরণ হিসেবে গণ্য হবে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে সব দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে যতদিন একটি মুক্ত, গ্রহণযোগ্য, দুর্নীতিমুক্ত ও অবাধ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত না হবে, ততদিন বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে না।
ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার : অধ্যাপক, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.