পিঠে বোঝা চোখে আশা

ভোগ-বিলাস, আনন্দ-অভিলাষের সুরায় হাবুডুবু পৃথিবী পানশালা সত্যিই রোমাঞ্চকর- নিত্য দিনের কামনা-বাসনা-সুখ-স্বপ্ন কোনটারই একরতি কমতি নেই যেন জলজ্যান্ত এক আনন্দনগর। ধনকুবের, বিত্তশালীদের কাছে বিরাট এ পৃথিবী সম্পর্কে এমন চাটু-উক্তি উপহাসের নয়। কিন্তু এর বাইরেও জীবন আছে। যাদের কাছে নিজের জন্মটা আজন্ম অভিশাপ তুল্য। অভাব-অনটনের পীড়ায় পীড়িত মানুষগুলোর কাছে পৃথিবীটা একটা নিরেট আঁস্তাবল। বেঁচে থাকার স্বপ্নীল বোঝা টানতে টানতে পিঠ কুঁজো হয়ে যায়। আর কতদিন .... আর কত ... ভাবতে ভাবতে শেষ চেতনাটুকুও বধির হয়ে যায় একসময়। এতকিছুর পরও দু’লোকমা অন্নের জোগাড় হলেই অচেনা আশার আলোয় চোখে জ্বালা ধরে যায়- বাঁচতে হবে, বাঁচাতে হবে- এভাবেই বেঁচে থাকতে হয়! মরক্কোর সীমান্তবর্তী মানুষগুলো এখন এই দিন-গীতের বাউল- এ মতাদর্শেই চলছে তাদের বংশানুক্রমিক জীবিকা! মেলিলার বোঝাবহনকারী নারী হিসেবে তারা সুপরিচিত।
যদি তারা পণ্যসামগ্রী নিজেদের ঘাড়ে বহন করে নিয়ে যেতে পারেন তাহলে পণ্যগুলো মরক্কোতে শুল্কমুক্তভাবে ঢোকানো সম্ভব। স্পেন এবং মরক্কোর সীমান্তবর্তী একখণ্ড জায়গা হল মেলিলা। এটা উত্তর আফ্রিকায় পণ্যসামগ্রী প্রবেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি সীমান্ত এলাকা। ভোর হতে না হতেই মেলিলাতে জমে যায় ব্যবসায়ীদের ভিড়। তাদের পণ্যতালিকার মধ্যে রয়েছে, ব্যবহৃত জামাকাপড়, সুতার বাণ্ডিল, টয়লেট সামগ্রী এবং বাসাবাড়ির ব্যবহারে প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র। এসব কিছুই সীমান্ত পেরিয়ে মরক্কোর বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে। গাড়ির ইঞ্জিনের কানফাটা শব্দের মধ্যে হাজার হাজার মানুষের উচ্চস্বরে বাক্য বিনিময়- সে রীতিমতো কানে তালা লাগার মতো অবস্থা। সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে গাঁটবাঁধা পণ্যের বোঝা। প্রত্যেকটি বাক্স কার্ডবোর্ড, চট, কাপড় দিয়ে মোড়ানো এবং টেপ, দড়ি দিয়ে বাঁধা। আর বিশাল আকৃতির ওই সব বাক্সের ভারে অবনমিত অবস্থায় দেখা যায় মরক্কোর ওই বোঝাবহনকারী নারীদের। মেলিলা থেকে মরক্কো যেতে বারিও চিনো সীমান্তে প্রতিদিনই এ বাণিজ্য চলছে। মহিলারা এই বোঝা নিজে বহন করে নিয়ে গেলে এটা তাদের নিজের লাগেজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.