নির্দলীয় নিরপেক্ষ ব্যবস্থাপনা ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না

যুগান্তর : বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার মানের সূচকে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান অনেক পেছনে। এ অবস্থার উন্নয়নে কী করণীয়?
এমাজউদ্দীন আহমদ : বিশ্ববিদ্যালয়কে যদি সঠিক মানে উন্নীত করা না যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নত মানের শিক্ষা যদি অব্যাহত না রাখা যায়, তাহলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা উচিত। কারণ এতে জাতীয় সম্পদের অপচয় হয়। বাংলাদেশের যে কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে তার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। এটি গর্ব করার মতো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এ বছরের আন্তর্জাতিক সূচকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাত হাজারেরও নিচে নেমে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী-শিক্ষক এবং প্রশাসক হিসেবে আন্তর্জাতিক সূচকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন অবস্থানে অত্যন্ত দুঃখ পেয়েছি। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান কমে গেছে এমনটা আমার মনে হয় না। তবে অন্যান্য দেশের মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে গতিতে অগ্রসর হচ্ছে, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সে গতিতে অগ্রসর হচ্ছে না। এটি দুঃখজনক। দেশের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা সন্তোষজনক। কাজেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান আরও উন্নত হওয়া উচিত। অন্যান্য দেশের মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো দ্রুত অগ্রসর হওয়া উচিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন যৌথ উদ্যোগে শিক্ষার কাক্সিক্ষত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় আনুগত্যের কারণে কোনো প্রার্থী যাতে বাড়তি সুবিধা না পায় সেজন্য কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে হবে। কম যোগ্যতা সম্পন্ন কোনো প্রার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে একবার নিয়োগ পেলে এতে প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ সময়ের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় প্রতিষ্ঠান। কাজেই জাতীয় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালনে সক্ষম যোগ্য, দক্ষ ও প্রতিশ্র“তিশীল ব্যক্তিদের নিয়োগ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
যুগান্তর : দেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলে?
এমাজউদ্দীন আহমদ : দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হলে আন্দোলনের প্রথম শিকার হয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। আন্দোলন শুরু হলে বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতাদের মনে রাখা দরকার, রাজনৈতিক সমস্যাগুলোর সমাধান রাজনৈতিক ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে হওয়া দরকার। বিশ্ববিদ্যালগুলোর সুষ্ঠু পরিচালনা নিশ্চিত করার জন্য এসব আনুষঙ্গিক দিকেও সংশ্লিষ্ট সবার বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
যুগান্তর : বাংলাদেশের অনেক গবেষক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সাফল্যের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া দরকার?
এমাজউদ্দীন আহমদ : আমাদের দেশের অনেক তরুণ শিক্ষার্থী গবেষক বিশ্বের নামিদামি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে গবেষণা করছেন। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, নিউজিল্যান্ড এবং ইউরোপের নামিদামি প্রায় পাঁচশ’ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে শিক্ষকতা ও গবেষণা করছেন। এসব শিক্ষক ও গবেষককে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হলে তারা দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবেন। এসব শিক্ষক-গবেষক বিদেশে যে সুযোগ-সুবিধা পান, তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে একই রকম সুযোগ-সুবিধা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে তাদের অবদানে আমাদের দেশ সমৃদ্ধ হবে। আমি কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার সময় বিভিন্ন দেশের যেসব শিক্ষার্থীকে সেখানে পেয়েছিলাম, পরে জেনেছি ওইসব শিক্ষার্থীর অধিকাংশ তাদের নিজ নিজ দেশ যেমন দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, জাপানে ফিরে গেছেন। তাদের অর্জিত জ্ঞানের মাধ্যমে তারা নিজের দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। সরকার আমাদের কৃতী ব্যক্তিদের মর্যাদার সঙ্গে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে এটাই আমার প্রত্যাশা।
যুগান্তর : সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শিক্ষা খাতে দুর্নীতি কমছে। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী। শিক্ষা খাতে দুর্নীতি শূন্য পর্যায়ে নামিয়ে আনার জন্য কী করণীয়?
এমাজউদ্দীন আহমদ : ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে আমি খুব একটা সন্তুষ্ট হতে পারছি না। কারণ এখনও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বাণিজ্য, আবাসনের ক্ষেত্রে বাণিজ্য- এসব অব্যাহত রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো রকম দুর্নীতি থাকার কথা নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা তুমুল প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবে এটাই তো নিয়ম। শিক্ষাঙ্গনে টেন্ডার বাণিজ্যের কথা আমরা প্রায়ই শুনি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এখন অনলাইনে টেন্ডার আহ্বান করে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো যায়। ২০ বছর আগেও আমাদের দেশের শিক্ষাঙ্গনের সার্বিক পরিবেশ বর্তমানের পরিবেশ থেকে অনেক উন্নত ছিল। অন্যান্য দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির কোনো সুযোগই নেই। তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে তারা বেড়ে উঠছে। বিদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে দুর্নীতি শব্দটি ঘৃণার সঙ্গে উচ্চারিত হয়।
যুগান্তর : বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার মান নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
এমাজউদ্দীন আহমদ : আমাদের দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয়নি। দশ বা বারো বছর একটি বিশ্ববিদ্যালয় সুষ্ঠুভাবে গড়ে তোলার জন্য যথেষ্ট সময় নয়। তবে দে আর ইউনিভার্সিটিস ইন দ্য মেকিং। দেশের কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতি সন্তোষজনক। বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান পরীক্ষার জন্য এক্রেডিটেশন কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার দাবি করে আসছি। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বিভাগ ভালো করছে অথবা কোন বিশ্ববিদ্যালয় ভালোভাবে চলছে তা নির্ণয়ের জন্য এক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠন করা দরকার। এখনও তা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বাংলাদেশে ১৫ থেকে ২০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বচ্ছন্দে প্রথম শ্রেণীর বিশ্ববিদ্যালয় বলে মনে করা যেতে পারে। কিন্তু পনের-বিশটি বিশ্ববিদ্যালয়েরও কিছু অসম্পূর্ণতা আছে। খেলার মাঠ, বড় অডিটোরিয়াম- এসব অসম্পূর্ণতা পূরণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে খাসজমি প্রদান করে সহযোগিতা করা উচিত। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ই বেসরকারি। একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৃতপক্ষে পরিচিতি পায় শিক্ষার মান ও গবেষণার মান কেমন তার ওপর। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর কৃতিত্বের ওপরও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম অনেকটাই নির্ভর করে। সম্প্রতি আরও কয়েকটি প্রাইভেট ভার্সিটি অনুমোদন পেয়েছে। এতগুলো প্রাইভেট ভার্সিটি প্রতিষ্ঠিত না হলেও চলত। রাজধানীতে বর্তমানে ৪৩টি প্রাইভেট ভার্সিটি রয়েছে। অথচ ঢাকা মহানগরী টোকিওর মতো বড় শহর নয়, কিংবা লন্ডন বা নিউইয়র্কের মতো বড় শহর নয়। তাই রাজধানীতে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেয়ার আগে কর্তৃপক্ষের এসব বিষয়ও বিবেচনা করা উচিত। যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য সরকারের পাশাপাশি শিক্ষক-অভিভাবকরা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকেন। একইসঙ্গে সমাজটাই যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করে থাকে। কোথাও কোনো বিচ্যুতি ঘটলে সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি দিনও যাতে অপচয় না হয় সেদিকে আমরা তীক্ষ্ণ নজর রাখি। এখানে কোনো শিক্ষার্থীকে ফল প্রকাশের জন্য তিন-চার মাস অপেক্ষায় থাকতে হয় না; হয়তো তিন-চার দিন অপেক্ষা করতে হয়। সরকার প্রাইভেট ভার্সিটিকে খাসজমি প্রদানের ক্ষেত্রে উদারতার পরিচয় দিলে অনেক প্রাইভেট ভার্সিটির শিক্ষার মানে আমূল পরিবর্তন আসবে।
যুগান্তর : দাবি আদায়ের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখার বিষয়টিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
এমাজউদ্দীন আহমদ : শিক্ষক কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অবরুদ্ধ থাকার বিষয়টি একেবারেই অনাকাক্সিক্ষত। এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পদটি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। উপাচার্য পদটি আরও অতি মর্যাদাপূর্ণ একটি পদ। কাজেই অবরুদ্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির আগেই একজন উপাচার্যের অন্যত্র সরে যাওয়া উচিত। উপাচার্যের পদটি ক্ষমতা প্রদর্শনের পদ নয়। এটি অত্যন্ত সম্মানের পদ। তাই এসব বিবেচনায় রেখেই উপাচার্যকে প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে হয়। এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কল্যাণের কথা বিবেচনা করে উপাচার্যের পদত্যাগ করা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদটি সীমাহীন দায়িত্বের পদ এবং অত্যন্ত সম্মানজনক পদ। নিজের মর্যাদা যাতে অক্ষুণœ থাকে, একজন উপাচার্যকে সেদিকে সব সময় তীক্ষè নজর রাখতে হবে।
যুগান্তর : শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের গতি নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
এমাজউদ্দীন আহমদ : শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। শ্রীলংকা, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া এসব দেশে শিক্ষা খাতে যেভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, আমাদেরও শিক্ষা খাতে সেসব দেশের মতো বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশে জিডিপির ২.২ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করা হয় অথচ শ্রীলংকায় শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করা হয় জিডিপির ৩.৫০ শতাংশ। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ালে তা আমাদের বিপুল জনগোষ্ঠীকে মানব সম্পদে পরিণত হতে সহায়তা করবে। ইউরোপের অনেক দেশের তুলনায় আমাদের দেশের অর্থনীতি এখন ভালো অবস্থানে রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী স্বল্পশিক্ষিত শ্রমিকদের প্রেরিত অর্থ আমাদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। এ স্বল্প শিক্ষিত তরুণদের দক্ষ কর্মী হিসেবে বিদেশে প্রেরণ করা গেলে তাদের প্রেরিত অর্থে আমাদের অর্থনীতি দ্রুত সমৃদ্ধ হতে পারে। এজন্য শিক্ষানীতিতে গৃহীত এ বিষয়ক পরিকল্পনা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
সারাদেশে অনেক প্রাইমারি স্কুলেই খেলার মাঠ নেই, অনেক হাইস্কুলে লাইব্রেরি নেই, মফস্বলের অনেক সরকারি কলেজে অনেক বিষয়ে শিক্ষক নিয়মিত ক্লাস নিতে পারেন না; শিক্ষকের সংখ্যাও অপ্রতুল। এসব কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরও কোনো কোনো শিক্ষার্থী বাংলা ও ইংরেজি ভাষা শুদ্ধভাবে বলতে ও লিখতে পারে না। ব্রিটেনে প্রাথমিক স্তরেই শিক্ষার্থীদের ভাষা শিক্ষার জন্য বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়।
আমাদের শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে সরকারকে প্রচুর অর্থ বরাদ্দের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। মেধাবী তরুণ-তরুণীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করার জন্য আকর্ষণীয় বেতনের ব্যবস্থা করতে হবে।
যুগান্তর : ডাকসু, চাকসু, রাকসু- এসব নির্বাচন হচ্ছে না বহু বছর ধরে। এতে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক ও সাংস্কৃতিক চর্চায় কী ধরনের প্রভাব পড়ছে?
এমাজউদ্দীন আহমদ : ডাকসু, চাকসু, রাকসু- এসব রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। সরকারি ও বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দ যতক্ষণ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাত গুটিয়ে না নিচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে এসব নির্বাচন হবে না। ডাকসু, চাকসু, রাকসুর নির্বাচনে প্রার্থী কে হবে তা ক্ষমতাসীন জোট ও বিরোধী দলই ঠিক করে দেয়। এখন ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের মধ্যে অসহিষ্ণুতা এতই মারাত্মক আকার ধারণ করেছে যে, এ মুহূর্তে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়া হলে নানা জটিলতা দেখা দেবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে রাজনৈতিক দলের প্রভাবমুক্ত করা গেলে স্বাভাবিকভাবেই অনেক জটিলতা থাকবে না।
যুগান্তর : জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলগুলো ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকার ও বিরোধী দলগুলোর কী করণীয়?
এমাজউদ্দীন আহমদ : জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে সরকার ও বিরোধী দলগুলোকে আলোচনার মাধ্যমে তাদের পারস্পরিক অবিশ্বাস কমাতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন জোট ও বিরোধী জোটের মধ্যকার অনাস্থা ও অবিশ্বাসের জায়গাটা হিমালয়ের মতো উঁচু। এ অবস্থায় নির্বাচন পরিচালনার জন্য নিরপেক্ষ নির্দলীয় ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। সংসদ না ভেঙে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা ঠিক হবে না। বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের সময় ব্রিটেন ও ভারতের পার্লামেন্টকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেয়া হয়েছিল। ‘হাউস অব কমন্স’ না ভেঙে ব্রিটেনে কখনোই নির্বাচন হয়নি। ভারতেও লোকসভা অক্ষুণ্ন রেখে নির্বাচন হয়নি। বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন জোট এবং বিরোধী জোটের মধ্যে যে অসহনীয় অবিশ্বাস এবং তীব্র অনাস্থা বিদ্যমান- এ প্রেক্ষাপটে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করতে হলে- সব দলের জন্য একসঙ্গে নির্বাচনের সুযোগ তৈরি করতে হলে নির্দলীয় নিরপেক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ ব্যবস্থাপনা ছাড়া অনুষ্ঠিত নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
যুগান্তর : সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনকে কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে?
এমাজউদ্দীন আহমদ : সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য, নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচনের সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় যাতে নির্বাচন কমিশনের অধীনে কাজ করে তার ব্যবস্থা করতে হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে সামরিক বাহিনী কতটা সম্পৃক্ত থাকবে- এ বিষয়েও নির্বাচন কমিশনকে আগে থেকে বিস্তারিত পরিকল্পনা করতে হবে। জাতীয় নির্বাচনকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য নির্বাচন কমিশন কী কী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে, এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে সবার আস্থা অর্জন করতে হবে।
যুগান্তর : নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধে কী করণীয়?
এমাজউদ্দীন আহমদ : নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের বহু কারণ রয়েছে, যা স্বল্প পরিসরে আলোচনার মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়। সংক্ষেপে শুধু বলব- সাধারণ মানুষের সামনে অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বের বড়ই সংকট। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। দায়বদ্ধতা সৃষ্টির জন্য সামগ্রিকভাবে সামাজিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের পরও অনেকের নৈতিক মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক চেতনা আদর্শস্থানীয় হয় ওঠেনি।
যুগান্তর : আন্তঃগ্রহের অভিযানে উন্নয়নশীল দেশের জনগণের অংশগ্রহণ একেবারেই সীমিত পর্যায়ে থাকবে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের গবেষণায় কী পদক্ষেপ নেয়া উচিত?
এমাজউদ্দীন আহমদ : বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিমধ্যেই ব্যতিক্রমী অনেক গবেষণা চলছে। আন্তঃগ্রহের অভিযানের প্রেক্ষাপটে সেসব গবেষণা আরও জোরদার করতে হবে। এতে জ্ঞানের দিগন্ত আরও বিস্তৃত হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলো দক্ষ মানবসম্পদ দিয়ে এসব অভিযানের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারে। —

No comments

Powered by Blogger.