জনআকাক্সক্ষার প্রতিফলনেই সংকটের সমাধান by ইকতেদার আহমেদ

আমাদের সংবিধান জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে দেশের সর্বোচ্চ আইন। অন্যান্য আইনের ওপর সংবিধানের প্রাধান্য রয়েছে। অন্যান্য আইনের সংশোধন পদ্ধতি সহজতর হলেও সংবিধান যাতে প্রায়ই সংশোধনীর সম্মুখীন না হয় সে জন্য অন্যান্য দেশের মতো আমাদের সংবিধানের সংশোধন পদ্ধতি জটিলতর করা হয়েছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রায় ৪২ বছর সময়কালে সংবিধানে ১৫টি সংশোধনী আনা হয়েছে। কিছু কিছু সংশোধনী সংবিধানের মৌলিকত্বের ওপর আঘাত হেনেছিল। সব সংশোধনী জনআকাক্সক্ষার প্রতিফলনে হয়েছে এ কথা বলার অবকাশ নেই। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী-পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে বর্তমানে সংবিধানের যে অবস্থান তা হল- মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে গেলে ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে এবং মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে অভিনবভাবে দুটি নতুন ধারা সংযোজিত হয়েছে। এ ধারা দুটি হল ৭ক ও ৭খ। ৭ক-তে সংবিধান বাতিল, স্থগিতকরণ ইত্যাদি অপরাধ গণ্যে বলা হয়েছে : ‘কোনো ব্যক্তি শক্তি প্রদর্শন বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বা অন্য কোনো অসাংবিধানিক পন্থায় এ সংবিধান বা এর কোনো অনুচ্ছেদ রদ, রহিত বা বাতিল বা স্থগিত করলে কিংবা উহা করবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করলে; কিংবা এ সংবিধান বা এর কোনো বিধানের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করলে কিংবা উহা করবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করলে- তার এ কার্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা হবে এবং ওই ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হবে।’ এ অনুচ্ছেদে সহযোগিতাকারী ও উসকানিদাতা বিষয়ে বলা হয়েছে, তারাও সম অপরাধে অপরাধী হবে। অপরাধের সাজা বিষয়ে অনুচ্ছেদটিতে বলা হয়েছে, প্রচলিত আইনে অন্যান্য অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডিত হবে। উল্লেখ্য, প্রচলিত আইন দণ্ডবিধিতে রাষ্ট্রদ্রোহের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, কিন্তু সংবিধানে প্রচলিত আইনে অন্যান্য অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ দণ্ড প্রদানের বিধান থাকায় সংবিধানের অধীন রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ সংঘটিত হলে দোষী ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হবে।
অনুচ্ছেদ ৭খ-তে সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলী সংশোধন অযোগ্য উল্লেখপূর্বক বলা হয়েছে, সংবিধানে ১৪২ নম্বর অনুচ্ছেদে যা কিছুই থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথম ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, নবম-ক ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলী সাপেক্ষে তৃতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের ১৫০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলী সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোনো পন্থায় সংশোধন অযোগ্য হবে।
’৭২-এর সংবিধানে কোনোরূপ শর্তারোপ ছাড়াই সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার অন্যূন দু’-তৃতীয়াংশ ভোটে সংবিধান সংশোধনের বিধান ছিল। পরবর্তী সময়ে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ৮, ৪৮ ও ৫৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন বিষয়ে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার দু’-তৃতীয়াংশ ভোটের অতিরিক্ত গণভোটের বিধান প্রবর্তন করা হয়েছিল। গত ১৮ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে আয়োজিত জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘জনগণের ভোট নিয়ে আমরা সংবিধান সংশোধন করেছি। আর দেশের নির্বাচন কমিশনও যথেষ্ট শক্তিশালী। তাই যা হবে সংবিধান অনুযায়ীই হবে। সংবিধান থেকে এক চুলও নড়ব না। আমি আশা করব গণতান্ত্রিক সব রাজনৈতিক দল আন্দোলন পরিহার করে নির্বাচনমুখী হবে।’
সংবিধানের বর্তমান বিধানাবলীর আলোকে নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিবেচনায় নিলে প্রতীয়মান হয় তার বক্তব্যটি যথার্থ। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করাকালীন অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি তিনি উল্লেখ করেছিলেন, তিনি সংবিধানের রক্ষণ, সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করবেন, তাই একজন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সংবিধানের বিধানাবলী লংঘন, অবজ্ঞা বা উপেক্ষাপূর্বক ভিন্নতর অবস্থান গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। সংবিধানের বর্তমান বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি আগে ভেঙে না দিয়ে থাকলে প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে ৫ বছর অতিবাহিত হলে সংসদ ভেঙে যাবে। নবম সংসদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২৫ জানুয়ারি ২০০৯ এবং সে হিসাব অনুযায়ী ২৪ জানুয়ারি ২০১৪ সালে ৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পর সংসদ আপনাআপনি ভেঙে যাবে। যদিও সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন হারালে প্রধানমন্ত্রীর লিখিতভাবে রাষ্ট্রপতিকে সংসদ ভেঙে দেয়ার পরামর্শদানের বিধান রয়েছে, কিন্তু সেক্ষেত্রে অন্য কোনো সংসদ সদস্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন নন- এ মর্মে রাষ্ট্রপতি সন্তুষ্ট হলে তিনি সংসদ ভেঙে দিতে পারেন।
নির্বাচন বিষয়ে সংবিধানের বিদ্যমান বিধানাবলী বিবেচনায় নিলে প্রতীয়মান হয়, মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান সংসদ বহাল থাকাবস্থায় ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে। তাই প্রধানমন্ত্রী সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন থাকাবস্থায় সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলে তা সংবিধান সম্মত হবে কি-না সে প্রশ্নটি দেখা দেবে। ’৭২-এর সংবিধানে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থার বিধান ছিল। ওই সংবিধানে বলা ছিল, প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বপদে বহাল থাকবেন। ওই সংবিধানে সংসদ ভেঙে যাওয়া এবং সংসদ সদস্যদের অব্যবহিত পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্যবর্তীকালে মন্ত্রী নিয়োগের প্রয়োজন দেখা দিলে সংসদ ভেঙে যাওয়ার অব্যবহিত আগে যারা সংসদ সদস্য ছিলেন, তাদের সংসদ সদস্য গণ্যে মন্ত্রী পদে নিয়োগদান আইনসম্মত ছিল। চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি থেকে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হলে উপরোক্ত দুটি বিধান রহিত করা হয়। অতঃপর দেশের বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ঐকমত্যের ফলে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আবার সংসদীয় সরকার পদ্ধতিতে প্রত্যাবর্তন করা হলে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা বিষয়ে ৭২’র সংবিধানের বিধানাবলী পুনঃপ্রবর্তিত হয়।
সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন পূর্ববর্তী প্রথম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা বহাল থাকলেও ২য়, ৩য় ও ৪র্থ সংসদ নির্বাচনের সময় রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা বহাল ছিল। উপরোক্ত ৪টি সংসদের কোনোটিই মেয়াদ পূর্ণ করতে না পারায় এবং উপরোক্ত সংসদসমূহ ভেঙে যাওয়ার পর রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা বহাল থাকায় মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলে প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী এবং অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা নিয়ে কোনো বিতর্ক সৃষ্টির অবকাশ হয়নি। পঞ্চম সংসদ নির্বাচন তিনদলীয় জোটের রূপরেখায় অস্থায়ী সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হওয়ায় এ বিষয়টি উত্থাপনের অবকাশ সৃষ্টি হয়নি। তাছাড়া মূল কথা হল, রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থায় এ প্রশ্নটি উত্থাপনের কোনো সুযোগ ছিল না। পরবর্তী সময়ে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করা হলে ৭ম, ৮ম ও ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানকালে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা বিষয়ে বিতর্কের কোনো অবকাশ ছিল না। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল-পরবর্তী ১০ম জাতীয় সংসদ মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান প্রবর্তিত হওয়ায় প্রথমবারের মতো আমাদের সাংবিধানিক ইতিহাসে প্রধানমন্ত্রীর স্বপদে বহাল থাকাকালীন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের অবকাশ সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে কারও দ্বিমত নেই যে আওয়ামী লীগ, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির তীব্র আন্দোলনের মুখে দলীয় সরকারের অধীনে ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা হলেও সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা থেকে আওয়ামী লীগ, জামায়াত ও জাতীয় পার্টি বিরত থাকায় নির্বাচনটি দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়নি। কিন্তু তারপরও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জনআকাক্সক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে একতরফাভাবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিল এনে সংসদ অবলুপ্ত করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ সুগম করেন।
উচ্চাদালতে সিদ্ধান্তের প্রতিফলনে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করেছে এ দাবি করলেও আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সংসদ যে সার্বভৌম এ বিষয়ে তাদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই। উল্লেখ্য, উচ্চাদালতের আপিল বিভাগে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংক্রান্ত মামলাটি শুনানিকালে রাষ্ট্রের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেলসহ ৮ জন অ্যামিকাস কিউরির ৭ জন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। তাছাড়া আপিল বিভাগের রায়টি সংখ্যাগরিষ্ঠ সিদ্ধান্তে প্রদত্ত নাকি সমভাবে বিভক্ত, এ বিষয়ে আইনগত প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ রয়েছে এমন ধারণা অনেক আইনজ্ঞ পোষণ করেন।
এটা ঠিক, সংবিধানের বিধানাবলী হতে একচুল নড়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করলে সংবিধানের লংঘন হবে এবং এ ধরনের লংঘন রাষ্ট্রদ্রোহ হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা বিষয়ে সংশোধনী এনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলে জনআকাক্সক্ষারই প্রতিফলন ঘটবে, যা প্রকারান্তরে দেশের স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতি নিশ্চিত করবে।
সংবিধানের বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্টের একজন বিচারপতি বা বিচারক অবসর-পরবর্তী বিচার বিভাগীয় বা আধা-বিচার বিভাগীয় পদ ব্যতীত প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোনো লাভজনক পদে নিয়োগ লাভের যোগ্য নন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যখন নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে এক চুল ছাড় দিতে অপারগ, তার কিছুকাল আগে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউশনের মহাপরিচালক পদে যথাক্রমে একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি এবং সুপ্রিমকোর্টের একজন সাবেক বিচারককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ দুটি নিয়োগ বিষয়ে দেশের সচেতন জনগোষ্ঠীর অনুসন্ধিৎসু প্রশ্ন- উভয় পদ বিচার বিভাগীয় বা আধা-বিচার বিভাগীয় না হয়ে থাকলে ওই পদদ্বয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবং সুপ্রিমকোর্টের একজন সাবেক বিচারকের নিয়োগদানের সুযোগ আছে কি-না? আর সুযোগ না থেকে থাকলে তাতে সংবিধানের ৭ক অনুচ্ছেদ লংঘিত হয়েছে কি-না? এ দুটি প্রশ্নের উত্তরসহ নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যই হতে পারে আমাদের আগামী দিনের সমৃদ্ধির সোপান। প্রধানমন্ত্রীর একচুলও না নড়ার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আন্দোলনের বাতাসে সব চুল উড়ে যাবে।’ বিরোধীদলীয় নেতার বক্তব্য বিষয়ে সচেতন দেশবাসীর অভিমত, আন্দোলনের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে এবং দেশের স্থিতিশীলতার কথা চিন্তা করে যে দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি একতরফাভাবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন, সেই একই পথ অনুসরণ করে দেশের স্থিতিশীলতার স্বার্থে এবং সংঘাত এড়াতে প্রধানমন্ত্রী হয়তো একতরফাভাবে সংবিধানে সংশোধনী এনে গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথ খুঁজে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখবেন। তাই এ লক্ষ্য পূরণে আগামী সংসদ অধিবেশন সংকট উত্তরণের পথ প্রশস্ত করতে পারে। সেক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থে এবং জনআকাক্সক্ষার প্রতিফলনে সংকটের গুরুত্ব অনুধাবন করে যথাবিহিত ব্যবস্থা নেয়া হলে এ দেশের গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতি ব্যাহত হওয়ার পথ তিরোহিত হবে। নির্বাচনে কে বিজয়ী ও কে বিজীত হল সে বিষয়টিকে গৌণ হিসেবে নিয়ে দেশের স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক উন্নতি এবং জনগণের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে মুখ্য বিবেচনা করে ক্ষমতাসীনরা যদি সংকট সমাধানে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করে, তবে তা পরিণামে তাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে এমন পূর্বাভাসই পাওয়া যায়।
ইকতেদার আহমেদ : সাবেক জজ ও কলামিস্ট

No comments

Powered by Blogger.