বক্সিরহাটের বিবর্তন by মোবাশ্বির আলম মজুমদার

পীতাম্বরের মসলার দোকান, শিল্পীঃ শায়লা শারমিন
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামের অতিচেনা বক্সিরহাটের নামের কোনো পরিবর্তন না হলেও পাল্টে গেছে এর দালানের বাহ্যিক রূপ ও এখানে বসবাসরত মানুষের জীবনমান। বক্সিরহাট চট্টগ্রামের জিরো পয়েন্ট হিসেবে পরিচিত। রাত-দিন এখানে চলে পণ্য বিপণনের কার্যক্রম। এবার এই হাটটি উঠে এসেছে শিল্পীদের নানামাত্রিক শিল্পকর্মে।চট্টগ্রামের শিল্পীদের গড়া যোগ অল্টারনেটিভ আর্ট স্পেসের আয়োজনে ঢাকা আর্ট সেন্টারে গত ১৯ জুলাই শুরু হয় চিত্রশিল্পী, আলোকচিত্রী ও শৌখিন আলোকচিত্রশিল্পীর আলোকচিত্র, ভিডিও আর্ট এবং স্থাপনাশিল্প নিয়ে ১৪ জন শিল্পীর এক প্রদর্শনী।
অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা এখানে প্রথাগত আলোকচিত্র নির্মাণের বাইরে দাঁড়িয়ে পাল্টে যাওয়া এ সময়ের বক্সিরহাটকে তুলে ধরেছেন। তবে একে কেবল আলোকচিত্র প্রদর্শনী বলে ক্ষান্ত হওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে আলোকচিত্রের সঙ্গে চিত্রকলার সংযোগ ঘটেছে বেশ ভালোভাবেই। কিন্তু দৃশ্যশিল্পের দুটি মাধ্যম যুক্ত হয়ে নতুন এ মাধ্যমে সৌন্দর্য প্রকাশই প্রধান বিবেচ্য নয়; বরং বিষয়ের সাহায্যে এখানে বক্তব্যকে প্রধান করে দেখা হয়েছে। আলোকচিত্রের উপস্থাপনারও আছে ভিন্নতা। আলোকচিত্রের সঙ্গে  ওই বক্সিরহাটের মানুষের  দিনযাপন, অতি পুরোনো দোকানের বিপণন প্রক্রিয়া, পথঘাট, স্থাপত্য, নিত্য দেখা মানুষের মুখ, আলো-আঁধারের বৈচিত্র্যসহ বিচিত্র কর্মযজ্ঞের বার্তা এখানে উপস্থিত। জাহেদ আলী চৌধুরীর ‘যুবরাজের সময় কি বিপজ্জনক নাকি সম্ভাবনাময়?’ শিরোনামের কাজে দেখা যায় একগুচ্ছ আলোকচিত্রের উপস্থিতি। এর মধ্যে মুদি দোকানি থেকে নিউ আনন্দ ব্যান্ড পার্টির ঢোল বা ড্রামের আলোকচিত্র—কোনোটাই বাদ নেই। সব আলোকচিত্রের সঙ্গে শিল্পী হাতের নির্দিষ্ট ভঙ্গি প্রদর্শন করেছেন। যুবরাজের তোলা আলোকচিত্র গ্যালারিতে সাজিয়েছেন স্থাপনাশিল্পের আদলে। শায়লা শারমিন পীতাম্বরের মসলার দোকানকে নিয়ে আলোকচিত্র তুলে সাজিয়েছেন বিভিন্ন মসলার সাহায্যে আঁকা জ্যামিতিক ও প্রাকৃতিক ফর্মের ভেতরে।
চট্টগ্রামের অতি পুরোনো এই মেসার্স পীতাম্বর শাহর ভান্ডারে আছে রূপচর্চার সামগ্রী, আয়ুর্বেদিক জড়িবুটি, দারুচিনি, এলাচি থেকে চন্দন, ধূপসহ নানা চেনা-অচেনা পণ্যের সমাহার। শিল্পী তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে এখানে ঐতিহ্য আর আধুনিকতার দ্বিধা-দ্বন্দ্বকে তুলে ধরেছেন। ‘আলো’ শিরোনামে ভিডিও আর্ট প্রদর্শন করছেন জিহান করিম। তিনি চিত্রশিল্পী, তাই আলো-আঁধারের নন্দন তাৎপর্য তাঁর কাছে গ্রহণীয়। তাঁর কাজের বিশেষত্ব এমন, দিন-রাতের যে সময়েই আমরা সেটি দেখি না কেন, আমাদের তা ভাবায়। অন্যদিকে, কুমার বিশ্বাসের ক্যামেরায় উঠে এসেছে বক্সিরহাটের গীতালি ব্যান্ড পার্টির বাদক দলের মুখচ্ছবি। এ ছাড়াও হোসেইন মাহমুদ রকি প্রদর্শন করেছেন পুরোনো দালান, কাঠের নকশা করা ঘর, মরচে পড়া লোহার দরজার আলংকারিক সৌন্দর্য ইত্যাদি। রূপায়ণ বড়ুয়ার শিল্পকর্মের নাম ‘শামসুল আলমের বাবার দোকান।’ রিয়াদ মাহমুদের ছবির বিষয় ‘পথ’। জুবলী দেওয়ানের ছবির নাম ‘বাস্তবতা’ এবং সুচয়ন পালের কাজের শিরোনাম ‘পরম্পরা’।  এভাবে এই প্রদর্শনীতে শিল্পীরা তুলে এনেছেন চট্টগ্রামের বক্সিরহাটের বিবর্তন। আলোকচিত্রের সঙ্গে চিত্রকলার মিশেলে প্রদর্শনীটি দৃশ্যশিল্পের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ঢাকার আগে এটি প্রথম অনুষ্ঠিত হয়েছিল চট্টগ্রামে। ঢাকায় শেষ হয়েছে গত ২৯ জুলাই।

No comments

Powered by Blogger.