ইইউর প্রস্তাবে রাজি হলে মুরসি প্রেসিডেন্ট থাকতেন

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মধ্যস্থতায় একটি রাজনৈতিক সমঝোতার প্রস্তাবে রাজি হলে এখনো মিসরের প্রেসিডেন্ট থাকতে পারতেন মোহাম্মদ মুরসি। মিসরের রাজনীতিকেরা এবং ইউরোপের কূটনীতিকেরা এমনটাই মনে করছেন। মিসরে ২০১১ সালে গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের পতন ঘটে। এরপর দেশের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হন প্রভাবশালী ইসলামপন্থী সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতা মুরসি। নির্বাচনে জয় দেশ শাসন করার জন্য যথেষ্ট ভিত্তি গড়ে দিয়েছে, এমন মনোভাব তৈরি হয়ে যায় মুরসি ও ব্রাদারহুডের মধ্যে। মুরসির পক্ষে-বিপক্ষে দেশজুড়ে বিক্ষোভের জের ধরে সবচেয়ে জনবহুল এই আরব দেশটিতে সুস্পষ্ট রাজনৈতিক বিভাজন দেখা দিলে উভয় পক্ষে সমঝোতা গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেয় ইইউ। তবে সেই প্রস্তাবকে অবজ্ঞা করেছিলেন মুরসি ও ব্রাদারহুডের নেতারা। ওই ঘটনার তিন মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে সরকারবিরোধী গণবিক্ষোভের জের ধরে ৩ জুলাই মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাবাহিনী। ইইউর কূটনীতিক বার্নারদিনো লিওন কয়েক মাসের চেষ্টায় ওই সমঝোতা প্রস্তাবের ব্যাপারে মিসরের ছয়টি বিরোধী দলের জোট ন্যাশনাল সালভেশন ফ্রন্টকে রাজি করিয়েছিলেন। তাদের বলা হয়েছিল, ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোর এই ফ্রন্ট প্রেসিডেন্ট হিসেবে মুরসির বৈধতার স্বীকৃতি দেবে এবং পরবর্তী পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশ নেবে। বিনিময়ে মুরসি তাঁর প্রধানমন্ত্রী হিশাম কান্দিল এবং অন্য পাঁচজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীকে সরিয়ে দেবেন, যাতে করে অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে একটি জাতীয় মতৈক্যের সরকার গঠনের পথ প্রশস্ত হয়। এ ছাড়া মুরসিকে তাঁর নিয়োগ দেওয়া বিতর্কিত প্রসিকিউটর জেনারেলকে বরখাস্ত করতে হবে। এ ছাড়া মিসরের সাংবিধানিক আদালতকে সন্তুষ্ট করতে প্রচলিত নির্বাচনী আইনে সংশোধনী আনতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের একচ্ছত্র আধিপত্য থাকা মিসরে ইইউর প্রভাব বিস্তার যে অতটা সহজ নয়—এই উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার মাধ্যমে তার কিছুটা নমুনা দেখা যায়। তবে মিসরীয় রাজনীতির উভয় মেরুতে ওয়াশিংটনের ওপর ক্ষোভ থাকায় ইইউই সেখানে ‘বিশ্বাসযোগ্য মধ্যস্থতাকারী’ হতে পারবে—এমন আশা থেকে এখনো হাল ছাড়তে নারাজ ইইউ। নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করতে ইইউর পরররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান ক্যাথেরিন অ্যাস্টন এখন কায়রোতে। অবশ্য উভয় পক্ষের মন গলাতে তাঁর নানা প্রচেষ্টা কাজে দেবে বলে মনে হচ্ছে না। গত মঙ্গলবারই তার নিদর্শন পাওয়া গেছে। এদিন দেশটির অন্তর্বর্তী মন্ত্রিসভা শপথ নিয়েছে। আর মুসলিম ব্রাদারহুড ওই মন্ত্রিসভাকে ‘অবৈধ’ আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে।ইইউর ওই মধ্যস্থতার ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক শাখা ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির (এফজেপি) নেতা সাদ আল-কাতাতনি ওই চুক্তির পক্ষে ছিলেন। তবে তিনি মুরসি ও ব্রাদারহুডের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের রাজি করাতে ব্যর্থ হন। মিসরের বামপন্থী দল পপুলার কারেন্টের নেতা হামদিন সাবাহি বলেন, ‘সমঝোতায় পৌঁছাতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলাম। আমরা সমঝোতার কাছাকাছি চলেও গিয়েছিলাম। তবে শেষে মুরসির অবস্থান বদলাল না। তিনি শর্তহীন সংলাপের দাবি জানিয়ে বসলেন। মুরসি যদি ওই আস্থা গঠনের পদক্ষেপকে গ্রহণ করতেন, তবে বিরোধীরা তাঁর বৈধতা মেনে নিত এবং পার্লামেন্ট নির্বাচনে যেত।’ ইইউর মধ্যস্থতায় বিরোধী জোটের সঙ্গে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে আলোচনায় বসার কথা স্বীকার করেছেন মুরসির প্রেসিডেন্ট দপ্তরের সাবেক কর্মকর্তা ওয়ায়েল হাদ্দারা এবং মুসলিম ব্রাদারহুডের জ্যেষ্ঠ নেতা ফরিদ ইসমাঈল। মুরসি নিজেও কখনো ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেননি। তবে তিনি হয় একগুঁয়ে ছিলেন। আবার হতে পারে, তিনি ব্রাদারহুডের শীর্ষ নেতৃত্বকে প্রস্তাবের ব্যাপারে রাজি করাতে পারেননি।

No comments

Powered by Blogger.