যৌনতা তো পুরুষের বাপের সম্পত্তি

জীবনের অনেকগুলো বছর পেরিয়ে যখন দেখি পেছনের দিনগুলো ধুসর ধুসর, আর সেই ধুসরতার শরীর থেকে হঠাত্‍ হঠাত্‍ কোনও ভুলে যাওয়া স্বপ্ন এসে আচমকা সামনে দাঁড়ায় বা কোনও স্মৃতি টুপ করে ঢুকে পড়ে আমার একাকী নির্জন ঘরে,
আমাকে কাঁপায়, আমাকে কাঁদায়, আমাকে টেনে নিয়ে যায় সেইসব দিনগুলোর দিকে_ তখন কি আমি না হেঁটে পারি জীবনের সেই অলিগলির অন্ধকার সরিয়ে সরিয়ে কিছু শীতার্ত স্মৃতি কুড়িয়ে আনতে! কী লাভ এনে! যা গেছে তো গেছেই৷ যে স্বপ্নগুলো অনেককাল মৃত, যে স্বপ্নগুলোকে এখন আর স্বপ্ন বলে চেনা যায় না, মাকড়শার জাল সরিয়ে ধুলোর আস্তর ভেঙে কী লাভ সেগুলোকে আর নরম আঙুলে তুলে এনে! যা গেছে, তা তো গেছেই৷জানি সব, তবুও আমার নির্বাসনের জীবন আমাকে বারবার পেছনে ফিরিয়েছে, আমি আমার অতীত জুড়ে মোহগ্রস্তের মতো হেঁটেছি৷ দুঃস্বপ্নের রাতের মতো এক একটি রাত আমাকে ঘোর বিষাদে আচ্ছন্ন করে রেখেছে৷ তখনই মেয়েটির গল্প বলতে শুরু করেছি আমি৷ একটি ভীরু লাজুক মেয়ে, যে মেয়ে সাত চড়েও রা করেনি, পারিবারিক কড়া শাসন এবং শোষণে ছোট্ট একটি গণ্ডির মধ্যে বড় হয়ে উঠেছে, যে মেয়ের সাধ আহ্লাদ প্রতিদিনই ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে আবর্জনার স্তূপে, যে মেয়েটির ছোট্ট শরীরের দিকে লোমশ লোভী হাত এগিয়ে এসেছে বারবার, আমি সেই মেয়ের গল্প বলেছি৷ যে মেয়েটি কিশোর-বয়সে ছোট ছোট কিছু স্বপ্ন লালন করতে শুরু করেছে, যে মেয়েটি হঠাত্‍ একদিন প্রেমে পড়েছে, যৌবনের শুরুতে বিয়ের মতো একটি কাণ্ড গোপনে গোপনে ঘটিয়ে আর দশটি সাধারণ মেয়ের মতো জীবন যাপন করতে চেয়েছে, আমি সেই সাধারণ মেয়েটির গল্প বলেছি৷ যে মেয়েটির সঙ্গে প্রতারণা করেছে তার স্বামী-তার সবচেয়ে ভালবাসার মানুষ, যে মেয়েটির বিশ্বাসের দালানকোঠা ভেঙে পড়েছে খড়ের ঘরের মতো, যে মেয়েটি শোকে, সন্তাপে, বেদনায়, বিষাদে কুঁকড়ে থেকেছে, চরম লজ্জা আর লাঞ্ছনা যাকে আত্মহত্যা করার মতো একটি ভয়ংকর পথে নিয়ে যেতে চেয়েছে, সেই শোকার্ত মেয়েটির গল্প আমি বলেছি৷

চুরমার হয়ে ভেঙে পড়া স্বপ্নগুলো জড়ো করে যে মেয়েটি আবার বাঁচতে চেয়েছে, নিষ্ঠুর নির্দয় সমাজে নিজের জন্য সামান্য একটু জায়গা চেয়েছে, যে মেয়েটি বাধ্য হয়েছে সমাজের রীতিনীতি মেনে পুরুষ নামক অভিভাবকের কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে, আর তার পরও যে মেয়েটির ওপর আবার নেমে এসেছে একের পর এক আঘাত, যে আঘাত গর্ভের ভ্রুণটিকে নষ্ট করে দেয়, যে আঘাত প্রতি রাতে তাকে রক্তাক্ত করে, যে আঘাত ক্রুরতার, কুটিলতার, অবিশ্বাসের আর অসহ্য অপমানের_ আমি সেই দলিত, দংশিত, দুঃখিতার গল্প বলেছি মাত্র৷ দুঃখিতাটি তার শরীরে আর মনে যেটুকু জোর ছিল অবশিষ্ট, সেটুকু নিয়ে আবার উঠে দাঁড়িয়েছে, দাঁড়াবার জন্য সামান্য জায়গা পেতে কারও দ্বারস্থ হয়নি এবার, একাই লড়েছে সে, একাই বেঁচেছে, নিজেই নিজের আশ্রয় হয়েছে, এবার আর কারও কাছে নিজেকে সমর্পণ করেনি, বঞ্চিত হয়েছে বলে যোগিনী সাজেনি, কারও ছিঃর ছিঃর দিকে, কারও ধিক্কারের দিকে ফিরে তাকায়নি_ এই ফিরে না তাকানোর গল্প আমি বলেছি৷

সমাজের সাতরকম সংস্কারের ধার ধারেনি মেয়ে, বারবার তার পতনই তাকে দাঁড়াতে শিখিয়েছে, বারবার তার হোঁচট খাওয়াই তাকে হাঁটতে শিখিয়েছে, বারবার তার পথ হারানোই তাকে পথ খুঁজে দিয়েছে, ধীরে ধীরে নিজের ভেতরে যে নতুন একটি বোধ আর বিশ্বাসকে সে জন্ম নিতে দেখেছে, তা হলো, তার নিজের জীবনটি কেবল তারই, অন্য কারও নয়৷ এই জীবনটির কর্তৃত্ব করার অধিকার কেবল তারই৷ আমি মেয়েটির সেই গড়ে ওঠার গল্প বলেছি_ যে পরিবেশ প্রতিবেশ তাকে বিবর্তিত করেছে, তাকে নির্মাণ করেছে, পিতৃতন্ত্রের আগুনে পুড়ে পুড়ে শেষ পর্যন্ত যে মেয়ে দগ্ধ হল না, পরিণত হল ইস্পাতে, সেই গল্প৷

আমি কি অন্যায় কিছু করেছি? আমার কাছে অন্যায় বলে মনে না হলেও আজ অনেকের কাছে এটি ঘোরতর অন্যায়৷ আমি ভয়াবহরকম অপরাধ করেছি গল্পটি বলে৷ অপরাধ করেছি বলে জনতার আদালতের কাঠগড়ায় আজ আমাকে দাঁড়াতে হচ্ছে৷ অপরাধ হয়তো হতো না যদি না আমি প্রকাশ করতাম যে, যে মেয়েটির গল্প আমি বলেছি সে মেয়েটি আমি, আমি তসলিমা৷ কল্পনায় আমি যথেচ্ছাচার করতে পারি, মিথ্যে মিথ্যে আমি লিখতে পারি কোনও সাধারণ মেয়ের আর দশটি মেয়ে থেকে ভিন্ন হওয়ার গল্প, ও না হয় ক্ষমা করে দেয়া যায় কিন্তু এই বাস্তব জগতটিতে দাঁড়িয়ে রক্তমাংসের মেয়ে হয়ে কোন স্পর্ধায় আমি ঘোষণা করছি যে, ওই মেয়েটি আমি, আমি দুঃখ ঝেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছি, আমার যেমন ইচ্ছে তেমন করে নিজের জীবনটি যাপন করব বলে পণ করেছি, আমার এই দুর্বিনীত আচরণ লোকে মানবে কেন! এরকম স্পর্ধা কোনও মেয়েকেই মানায় না৷ বড় বেমানান আমি পুরো পিতৃতান্ত্রিক পরিবেশে৷

আমার প্রিয় দেশটিতে, প্রিয় পশ্চিমবঙ্গে আজ আমি একটি নিষিদ্ধ নাম, একটি নিষিদ্ধ মানুষ, একটি নিষিদ্ধ বই৷ আমাকে উচ্চারণ করা যাবে না, আমাকে ছোঁয়া যাবে না, আমাকে পড়া যাবে না৷ উচ্চারণ করলে জিভ নষ্ট হবে, ছুঁলে হাত নোংরা হবে, পড়লে গা রি রি করবে৷

এরকমই তো আমি৷ সে কি আজ থেকে!

দ্বিখণ্ডিত লেখার কারণে যদি সহস্র খণ্ড হতে হয় আমাকে, তবু আমি স্বীকার করতে চাই না যে, আমি কোনও অপরাধ করেছি৷ আত্মজীবনী লেখা কি অপরাধ? জীবনের গভীর গোপন সত্যগুলো প্রকাশ করা কি অপরাধ? আত্মজীবনীর প্রধান শর্ত তো এই যে জীবনের সবকিছু খুলে মেলে ধরব, কোনও গোপন কথা কোনও কিছুর তলায় লুকিয়ে রাখব না৷ যা কিছু গোপন, যা কিছু অজানা, তা বলার জন্যই তো আত্মজীবনী৷ এই শর্তটাই সততার সঙ্গে পালন করতে চেষ্টা করছি৷ আত্মজীবনীর প্রথম দুই খণ্ড আমার মেয়েবেলা আর উতল হাওয়া নিয়ে কোনওরকম বিতর্ক না হলেও তৃতীয় খণ্ডটি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বিতর্ক শুরু হয়েছে৷

এই বিতর্ক কিন্তু আমি সৃষ্টি করিনি, করেছে অন্যরা৷ বিতর্ক হওয়ার মতো উত্তেজক বিষয়, অনেকেই বলেছেন, আমি বেছে নিয়েছি৷ এই প্রশ্ন আর যখনই উঠুক, আত্মজীবনীর ক্ষেত্রে ওঠা উচিত নয়৷ কারণ সবরকম অভিজ্ঞতার মধ্যদিয়ে আমার বড় হওয়া বা বেড়ে ওঠার ঘটনাগুলোই আমি বর্ণনা করেছি৷ আমার দর্শন-অদর্শন, আমার হতাশা-আশা, আমার সুন্দর, আমার কুত্‍সিত, আমার শোক, সুখ, আমার ক্রোধ আর কান্নাগুলোর কথাই বলেছি৷ কোনও স্পর্শকাতর বা উত্তেজক বিষয় শখ করে বেছে নিইনি, আমার জীবনটিই আমি বেছে নিয়েছি জীবনী লেখার জন্য৷ এই জীবনীটি যদি স্পর্শকাতর আর উত্তেজক হয়, তবে এই জীবনের কথা লিখতে গিয়ে আমি অস্পর্শকাতর আর অনুত্তেজক বিষয় কোত্থেকে পাবো?

বিতর্ক তৈরি করার জন্য বা চমক সৃষ্টি করার জন্য আমি নাকি বইটি লিখেছি৷ যেন বদ একটি কারণ থাকতেই হবে বই লেখার পেছনে৷ যেন সততা আর সরলতা কোনও কারণ হতে পারে না৷ যেন সাহস, যে সাহসের প্রশংসা করা হত, যে, আমি সাহস করে নাকি অনেক কিছুই বলি বা করি, সেই সাহসটিও এখন আর কোনও কারণ হতে পারে না৷ আমার লেখা নিয়ে বিতর্ক নতুন কিছু নয়৷ লেখালেখির শুরু থেকেই তা হচ্ছে৷ এটিই কি মোদ্দাকথা নয় যে, পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজের সঙ্গে আপোস না করলেই বিতর্ক হয়৷

আত্মজীবীনীর সংজ্ঞা অনেকের কাছে অনেকরকম৷ বেশিরভাগ মানুষই সেই আত্মজীবনীকে গ্রহণ করতে অভ্যস্ত, যে জীবনীটি ভূরি ভূরি ভালো কথা আর চমত্‍কার সব আদর্শ উত্থাপন করে৷ সাধারণত মনীষীরাই আত্মজীবনী লিখে যান অন্যকে নিজের জীবনাদর্শে আলোকিত করতে, সত্যের সন্ধান দিতে, পথ দেখাতে৷ আমি কোনও জ্ঞানী-গুণী মানুষ নই, কোনও মনীষী নই, মহামানব নই, কিছু নই, অন্ধজনে আলো দেয়ার মহান উদ্দেশ্য নিয়ে আমি জীবনী লিখছি না৷ আমি কেবল ক্ষুদ্র একটি মানুষের ক্ষতগুলো, ক্ষোভগুলো খুলে দেখাচ্ছি৷

কোনও বড় সাহিত্যিক বা বড় কোনও ব্যক্তিত্ব না হলেও একথা তো অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই যে, খুব বড় বড় ঘটনা ঘটে গেছে আমার জীবনটিতে৷ আমার বিশ্বাস এবং আদর্শের কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ যদি পথে নামে আমার ফাঁসির দাবি নিয়ে, যদি ভিন্ন মতের কারণে একের পর এক আমার বই নিষিদ্ধ করা হয়, যদি সত্য কথা বলার অপরাধে একটি রাষ্ট্রযন্ত্র আমার নিজের দেশে বাস করার অধিকার হরণ করে নেয়, তবে নিশ্চয়ই জীবনটি একটি সাদামাটা জীবন নয়! এই জীবনের কাহিনী অন্যের মুখে নানা ঢঙে নানা রঙে প্রচারিত যখন হচ্ছেই, তখন আমি কেন দায়িত্ব নেব না জীবনটির আদ্যোপান্তবর্ণনা করতে! আমার এই জীবনটিকে আমি যত বেশি জানি, তত তো আর অন্য কেউ জানে না৷

নিজেকে যদি উন্মুক্ত না করি, নিজের সবটুকু যদি প্রকাশ না করি, বিশেষ করে জীবনের সেইসব কথা বা ঘটনা যা আমাকে আলোড়িত করেছে, যদি প্রকাশ না করি নিজের ভাল মন্দ, দোষ গুণ, শুভ অশুভ, আনন্দ বেদনা, উদারতা ক্রুরতা, তবে আর যাই হোক সেটি আত্মজীবনী নয়, অন্তত আমার কাছে নয়৷ কেবল সাহিত্যের জন্য সাহিত্যই আমার কাছে শেষ কথা নয়, সততা বলে একটি ব্যাপার আছে, সেটিকে আমি খুব মূল্য দিই৷

যেরকমই জীবন হোক আমার, যে রকমই নিকৃষ্ট, যে রকমই নিন্দার্হ, নিজের জীবন কাহিনী লিখতে বসে আমি কিন্তু প্রতারণা করছি না নিজের সঙ্গে৷ পাঠক আমার গল্প শুনে আমাকে ঘৃণা করুক, কি আমাকে ছুঁড়ে ফেলুক, এটুকুই আমার সন্তুষ্টি যে আমার পাঠকের সঙ্গে আমি প্রতারণা করছি না৷ আত্মজীবনী নাম দিয়ে পাঠককে কোনও বানানো গল্প উপহার দিচ্ছি না৷ জীবনের সব সত্য, সত্য সবসময় শোভন বা সুন্দর না হলেও সঙ্কোচহীন বলে যাচ্ছি৷ জীবনে যা কিছু ঘটে গেছে, তা তো ঘটেই গেছে, তা তো আমি বদলে দিতে পারবো না, আর স্বীকারও করতে পারবো না এই বলে যে, যা ঘটেছে, তা আসলে ঘটেনি৷ সুন্দরকে যেমন পারি, অসুন্দরকেও তেমন আমি স্বীকার করতে পারি৷

চারদিক থেকে এখন বিদ্রুপের তীর ছোঁড়া হচ্ছে আমাকে লক্ষ্য করে, অপমান আর অপবাদের কাদায় আমাকে ডুবিয়ে দেয়া হচ্ছে_ এর কারণ একটিই, আমি সত্য কথা বলেছি৷ সত্য সবসময় সবার সয় না৷ আমার মেয়েবেলা আর উতল হাওয়ার সত্য সইলেও দ্বিখণ্ডিতর সত্য সবার সইছে না৷ আমার মেয়েবেলায় আমাকে অপদস্থ করার কাহিনী যখন বর্ণনা করেছি, সেটি শুনে লোকে চুক চুক করে দুঃখ করেছে আমার জন্য, উতল হাওয়ায় যখন স্বামী দ্বারা প্রতারিত হয়েছি, তখনও আহা আহা করেছে আমার জন্য, আর দ্বিখণ্ডিতয় যখন বর্ণনা করেছি একাধিক পুরুষের সঙ্গে আমার সম্পর্কের কথা, তখন ছিঃ ছিঃ করতে শুরু করেছে৷ এর অর্থ তো একটিই, যে, যতক্ষণ একটি মেয়ে অত্যাচারিত এবং অসহায়, যখনই সে দুর্বল এবং যখন তার দুঃসময়, ততক্ষণই তার জন্য মায়া জাগে, ততক্ষণই তাকে ভালো লাগে৷ আর যখনই মেয়েটি আর অসহায় নয়, অত্যাচারিত নয়, যখনই সে মেরুদণ্ড শক্ত করে দাঁড়ায়, নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে, নিজের শরীরের এবং মনের স্বাধীনতার জন্য সমাজের নষ্ট নিয়মগুলো ভাঙে, তখন তাকে আর ভালো লাগে না, বরং তার প্রতি ঘৃণা জন্মে৷ আমাদের সমাজের এই চরিত্র আমি জানি, জেনেও কোনও দ্বিধা করিনি নিজেকে জানাতে৷

দ্বিখণ্ডিত বইটি নিয়ে বিতর্কের একটি বড় কারণ, যৌন স্বাধীনতা৷ আমাদের এই সমাজের বেশিরভাগ মানুষ যেহেতু পুরুষতান্ত্রিক সংস্কারে আকণ্ঠ নিমজ্জিত, তাই একজন নারীর যৌন স্বাধীনতার অকপট ঘোষণায় বিরক্ত, ক্ষুব্ধ, ক্রুব্ধ৷ যে যৌন স্বাধীনতার কথা আমি বলি, তা কেবল আমার বিশ্বাসের কথাই নয়, নিজের জীবন দিয়ে সেই স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করেছি, অথচ যে কোনও পুরুষ আমাকে কামনা করলেই পাবে না৷ এই সমাজ এখনও কোনও নারীর এমন স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত নয়৷ প্রস্তুত নয় এটা শিরোধার্য করতে, যে, কোনও নারী তার ইচ্ছেমতো পুরুষকে সম্ভোগ করতে পারে এবং তা করেও কঠোরভাবে যৌন-সতী বজায় রাখতে পারে৷

আমাদের নামী-দামী পুরুষ-লেখকরা আমাকে এখন মহানন্দে পতিতা বলে গাল দিচ্ছেন৷ গাল দিয়ে নিজেরাই প্রমাণ করছেন_ কী ভীষণ নোংরা পিতৃতান্ত্রিক সমাজের সুবিধেভোগী পুরুষ-কর্তা তাঁরা৷ পতিতাকে তাঁরা ভোগের জন্য ব্যবহার করেন, আবার পতিতা শব্দটিকে তাঁরা সময় সুযোগমতো গাল হিসেবেও ব্যবহার করেন৷ নারীকে যৌন-দাসী হিসেবে ব্যবহার করার নিয়ম আজকের নয়৷ যদিও দ্বিখণ্ডিত বইটিতে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বিরুদ্ধে আমার লড়াই এর কথা বলেছি, বলেছি নারী আর ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর সমাজের নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কথা, কেউ কিন্তু তা নিয়ে একটি কথাও বলছেন না, যারাই বলছেন, বলছেন যৌনতার কথা৷ আমার কোনও কষ্টের দিকে কান্নার দিকে কারও চোখ গেল না, চোখ গেল শুধু যৌনতার দিকে৷ চোখ গেল আমার সঙ্গে পুরুষের সম্পর্কগুলোর দিকে৷ যৌনতার মতো গভীর গোপন কুত্‍সিত আর কদর্য বিষয় নিয়ে আমার মুখ খোলা স্পর্ধার দিকে চোখ৷

পৃথিবীর ইতিহাসে, কোনও অন্ধকার সমাজে যখনই কোনও নারী পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে উঠেছে, নিজের স্বাধীনতার কথা বলেছে, ভাঙতে চেয়েছে পরাধীনতার শেকল, তাকেই গাল দেয়া হয়েছে পতিতা বলে৷ অনেক আগে নষ্ট মেয়ের নষ্ট গদ্য বইটির ভূমিকায় আমি লিখেওছিলাম_ নিজেকে এই সমাজের চোখে নষ্ট বলতে আমি ভালবাসি৷ কারণ একথা সত্য যে, যদি কোনও নারী নিজের দুঃখ-দুর্দশা মোচন করতে চায়, যদি কোনও নারী কোনও ধর্ম।

No comments

Powered by Blogger.