কাজ শেষ করেনি এনা সংস্কার হয়নি সোনাদিঘির by শরিফুল হাসান ও আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ

নির্ধারিত সময়ের পর সাত মাস পেরিয়ে গেছে। শেষ হয়নি রাজশাহীর ১৬ তলা সিটি সেন্টার প্রকল্পের কাজ। আটকে গেছে প্রকল্পের অংশ ঐতিহ্যবাহী সোনাদিঘিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার কাজও।
সোনাদিঘির সংস্কার ও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সদ্য সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান। এটি ২০০৮ সালে মেয়র নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল তাঁর। আর প্রকল্পের কাজটি পেয়েছিল আওয়ামী লীগের সাংসদ এনামুল হকের প্রতিষ্ঠান এনা প্রপার্টিজ। এ এইচ এম খায়রুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সোনাদিঘির সংস্কার ও উন্নয়নকাজ চলছে। এর অংশ হিসেবে দিঘির পাড়ের দোকান সরাতে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠকও করা হয়েছে।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, সিটি সেন্টার প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিল সোনাদিঘির পাড়ে একটি মসজিদ, হাঁটার পথ, এমপি থিয়েটার, তথ্যপ্রযুক্তি পাঠাগার নির্মাণ। ২০০৯ সালে সিটি সেন্টারের কাজের দরপত্র আহ্বান করা হলে সাংসদের প্রতিষ্ঠানটিই একমাত্র দরপত্রটি জমা দেয়। চুক্তি অনুযায়ী সেখানে যতগুলো দোকান ও ঘর তৈরি হবে, তার ৭৫ ভাগ এনা প্রপার্টিজ বিক্রি করবে এবং ২৫ ভাগ পাবে সিটি করপোরেশন। ২০০৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর সিটি করপোরেশনের সাধারণ সভায় এটি অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই বছর ১০ অক্টোবর সিটি সেন্টার নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান। ২০১২ সালের ১০ অক্টোবরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল।
নগরবাসী জানিয়েছে, একসময়ে সোনাদিঘির পানি এতটাই স্বচ্ছ ছিল যে এখানকার পানি দিয়ে রান্নাবান্নার কাজ চলত। পরিচ্ছন্নতার জন্য এখানে পাহারাদার থাকত। দিঘির পাশে বসারও জায়গা ছিল।
গতকাল মঙ্গলবার রাজশাহী কলেজের উল্টো দিকের ওই জায়গায় গিয়ে দেখা যায়, নোংরা পানি। চারপাশ দখল হয়ে আছে। বিভিন্ন দোকান, হোটেল ও ছাত্রাবাসের বর্জ্য এসে পড়ছে দিঘিতে। আর সিটি সেন্টার ভবনে গিয়ে দেখা যায়, মাত্র ছয়তলা উঠেছে। তা-ও কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২ ধারা অনুযায়ী, সরকারের সঙ্গে কোনো ব্যক্তির ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকলে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এবং থাকার যোগ্য হবেন না। এর পরও এনামুল হকের মালিকানাধীন এনা প্রপার্টিজ সিটি সেন্টারের কাজ পায়।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, উদ্বোধনের পর কিছুদিন কাজ বন্ধ রেখেছিলেন এনামুল হক। পরের দেড় বছরে কেবল ভিত্তিপ্রস্তরের কাজ চলে। এরপর ২০১১ সালের জুলাই মাসে এই কাজের বিপরীতে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। এ জন্য ওই সম্পত্তির মালিকানা নিজের নামে (পাওয়ার অব অ্যাটর্নির) দেখানোরও চেষ্টা করেন তিনি। ওই বছরের ১০ নভেম্বর সিটি করপোরেশনে একটি আবেদনও করেন তিনি। কিন্তু আইন অনুযায়ী সুযোগ না থাকায় ডিসেম্বর মাসে সিটি করপোরেশন পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এরপর এনা প্রপার্টিজ ফের কাজ শুরু করে। সাংসদ এনামুল হকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
সিটি সেন্টারের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে এনা প্রপার্টিজের ওই কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী জগলুল হক হায়দারি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ছয়তলার কাজ শেষ হয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আটতলার কাজ শেষ হয়ে যাবে। এরপরে এই আটতলার দোকান বরাদ্দ দেওয়ার কাজ শুরু হবে। বাকি আটতলার কাজ কবে শেষ হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটি বলা মুশকিল।’ সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আবেদন করার সময় এখনো চলে যায়নি।’
সোনাদিঘি সংস্কারকাজের বিষয়ে জানতে চাইলে জগলুল হক হায়দারি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন যদি দিঘির পারের দোকানগুলো উচ্ছেদ করতে পারে, তাহলে আমরা কাজ করব।’
সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সিটি সেন্টার নির্মাণের নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেছে। কাজের ধীরগতি দেখে দ্রুত করার জন্য তাদের অনেকবার চিঠিও দেওয়া হয়েছে। সোনাদিঘির সংস্কারকাজ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিটি সেন্টারের প্রকল্পের সঙ্গেই দিঘির সংস্কার ও উন্নয়নকাজ ছিল। চারপাশের দোকানগুলো ভেঙে তাদের অন্যত্র পুনর্বাসন করার কথা ছিল। কিন্তু সেটি এখনো হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.