পিকেটিংয়ে পথশিশু ব্যবহার

হরতালের পিকেটিংয়ে শিশুদের ব্যবহার করা রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব ছাড়া কিছু নয়। পিকেটিংয়ের নামে অন্যের চলাচলের অধিকার লঙ্ঘন অন্যায় ও বেআইনি। এই বেআইনি কাজে পথশিশুদের নামানো অবশ্যই নিন্দনীয়।
রাজনীতির লড়াই চরম পর্যায়ে উন্নীত হলেই উভয় পক্ষ যার যা কিছু আছে, তা-ই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বিরোধী দলের ক্ষমতা নেই, রাজপথ দখলে রাখার মতো যথেষ্টসংখ্যক কর্মী নেই; থাকলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভয়ে তারা নামতে অপারগ। কিন্তু পথশিশুদের কিছু টাকা দেওয়া বা এক বেলা খিচুড়ি খাওয়ানোর মতো টাকা তাদের আছে। এমন অবস্থায় তাদেরই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে হরতাল বাস্তবায়নের! এমনকি কোনো কোনো জায়গায় ‘জাতীয়তাবাদী শিশুদলের’ ব্যানার নিয়ে শিশুদের মিছিলে নামানো হচ্ছে। এই শিশুদের কি রাজনীতি বোঝার বা পক্ষ নেওয়ার বয়স হয়েছে? কতটা অমানবিক হলে শিশুদের এ রকম রাজনৈতিক ব্যবহার কেউ করতে পারে! এর মাধ্যমে শিশুদের কেবল আইন ভাঙতেই শেখানো হচ্ছে না, তাদের অপরাধী করে তোলা হচ্ছে। বিরোধী দলের যেসব নেতা-কর্মী এই কাজে ইন্ধন দিচ্ছেন, নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁরা কি নিজেদের সন্তানদের দিয়ে পিকেটিং করাতে রাজি আছেন?
৫ মে হেফাজতে ইসলামের ডাকা অবরোধ ও শাপলা চত্বরের সমাবেশেও অজস্র শিশু-কিশোরকে নিয়ে আসা হয়েছিল। ঢাকা অবরোধের মতো সহিংস কর্মসূচিতে যাঁরা কিশোর বয়সী মাদ্রাসাছাত্রদের নিয়ে এসেছিলেন, তাঁরা আর কেউ নন, ওই কিশোরদের শিক্ষক ‘হুজুর’। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের পরের সহিংসতায় জামায়াত ও শিবির শিশু-কিশোরদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছিল। যে রাজনীতি শিশুদের জীবনের বিনিময়ে জয়ী হতে চায়, সেই রাজনীতি নিষ্ঠুর ও অমানবিক।
দেশে হরতাল-সহিংসতা সম্ভবত শিগগিরই বন্ধ হচ্ছে না, কিন্তু শিশুদের এমনভাবে ব্যবহারও আর চলতে পারে না। যদি চলে, যদি বিরোধী দলগুলোর উচ্চ স্তরের নেতারা তাঁদের কর্মীদের শিশুদের ব্যবহার করা বন্ধ করতে না পারেন; তাহলে তাঁরা নিজেরাও অমানবিক বলে চিহ্নিত হবেন। এ ব্যাপারে আইনি উদ্যোগের পাশাপাশি নাগরিক সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে। যেখানেই শিশুদের পিকেটিং করতে দেখা যাবে, সেখানেই তাদের বুঝিয়ে এই কাজ থেকে বিরত করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.