কবিতা বিষয়ক জটিলতা

সব সম্ভবের দেশে এটি অসম্ভব নয় যে সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে পাঠ্যবইয়ের বিষয় ও লেখকেরাও বদলে যাবেন। আগে ইতিহাসের পাঠ্যবই নিয়ে বহুবার তুঘলকি কাণ্ড ঘটতে দেখা গেছে। ইদানীং সাহিত্য বইয়েও সেই কু-অভ্যাস জেঁকে বসেছে বলে প্রতীয়মান হয়। পত্রিকার খবর অনুযায়ী, ২০১৩ সালের নবম ও দশম শ্রেণীর বাংলা সাহিত্য বইয়ে কবি আবদুল হাকিম ও আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর যথাক্রমে ‘বঙ্গবাণী’ ও ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতা দুটি বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত নবীন কবিদের কবিতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাঁদের মধ্যে বর্তমান শিক্ষাসচিবও রয়েছেন। বিষয়টি সাহিত্য মহলে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল, তা সবারই জানা। সর্বশেষ গত রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কবিতা দুটি পুনঃস্থাপনের সুপারিশ করেছে। বাংলা ভাষা ও ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে লেখা প্রখ্যাত দুটি কবিতা পাঠ্যবই থেকে বাদ দেওয়া সম্পর্কে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ব্যাপারে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কাছে আমরা কৈফিয়ত দাবি করছি। একই সঙ্গে কবিতা দুটি বাদ দিয়ে নতুন কবিতা অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে বইয়ের সম্পাদক ও সংকলকদের ব্যাখ্যা চাওয়া নিশ্চয়ই অনধিকার চর্চা হবে না। তাঁরাই ভালো বলতে পারবেন, কোন বিবেচনায় বহুল আলোচিত কবিতা দুটি বাদ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের নিশ্চয়ই এ-ও অজানা নয় যে, পাঠ্যবইয়ের যেকোনো লেখা বিবেচনার ক্ষেত্রে পদাধিকারী নয়, লেখার উৎকর্ষই অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পাঠ্যবইয়ের লেখক-শিক্ষাবিদেরা শিক্ষার্থীদের প্রতি সুবিচার করেছেন কি না, তা তাঁদের বিবেককেই জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন। গত চার বছরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনেক ভালো কাজ করেছে। কিন্তু শেষ বেলায় এসে কেন কবিতাবিষয়ক জটিলতা তৈরি করল, সেটাই আমাদের প্রশ্ন। কেবল বাংলা সাহিত্য নয়, আরও অনেক পাঠ্যবইয়ে লেখক সংযোজন-বিয়োজনের ক্ষেত্রে দলীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক বিবেচনা কাজ করেছে বলে অভিযোগ আছে। সেসব খতিয়ে দেখার জন্য উচ্চপর্যায়ে একটি কমিটি গঠন এবং সেই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পাঠ্যবই পুনর্বিন্যস্ত হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি।

No comments

Powered by Blogger.