পাকিস্তান থেকে কঠিন শর্তে ঋণ নেয়ার খেসারত-বিএনপি আমলে ৪৮ কোটি টাকা নেয়া হলেও এখন দুশ কোটি পরিশোধের দাবি by হামিদ-উজ-জামান মামুন

পাকিস্তান থেকে কঠিন শর্তে ঋণ নেয়ার খেসারত গুনতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। সরবরাহ ঋণ বা সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিটের আওতায় মাত্র ৪৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে এখন পরিশোধ করতে হবে ২০০ কোটি টাকা। যদিও ঋণ নেয়া প্রকল্পটি সাফল্য পায়নি।


এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) যুগ্ম সচিব (এশিয়া) আসিফ-উজ-জামান বলেন, পাকিস্তানের ঋণটি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। আশা করছি খুব শীগ্রই ইতিবাচক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাবে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) একাধিক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানান, বিএনপি সরকারের পাকিস্তানপ্রীতির ফল হচ্ছে এটি। সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই প্রকল্প গ্রহণ করায় বর্তমান অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে প্রকল্পটির উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়নি। অন্যদিকে ঋণ নেয়ার সময় সব বিষয় স্পষ্টও করা হয়নি। ফলে সুদ বেশি দাবি করার সুযোগ পাচ্ছে ঋণ দাতা দেশটি। এ ধরনের সুদ নেয়ার বিষয়ে দ্রুত পরিশোধ করার উদ্যোগ না নিলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়। তাই বাধ্য হয়েই যত দ্রুত সম্ভব পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী এ ঋণ পরিশোধ করে দেয়া দরকার। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন পাবনা সুগার মিলসের আধুনিকায়নের জন্য ১৯৯২ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিটের আওতায় প্রায় ৪৮ কোটি টাকা ঋণ নেয় বাংলাদেশ। এরই মধ্যে এ ঋণের ১৩টি কিস্তির মাধ্যমে প্রায় ৫৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আরও ১৪৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা দাবি করে তা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে ৯৯ কোটি টাকা গ্যারান্টি কমিশন ও গ্যারান্টি কমিশনের ওপর সুদ। আবার গ্যারান্টি কমিশন ১ শতাংশের স্থলে সাড়ে তিন শতাংশ হারে দিতে নোটিস দেয়া হয়েছে।
এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন সুদ ১ শতাংশ নির্ধারণসহ সুস্পষ্ট ও যৌক্তিক করতে বলেছে। আবার অতিরিক্ত নয় হাজার ডলার দাবি করা হয়েছে সেটিও ঠিক হয়নি বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে পাকিস্তানের কাছ থেকে কঠিন শর্তে নেয়া হয় প্রায় ৪৮ কোটি টাকা আর বাকি ৩১ কোটি ২৩ লাখ টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হয়েছিল। পাবনা চিনিকল প্রকল্পটি বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার পর থেকে কোন বছরই লাভ করতে সক্ষম হয়নি। বরং মিলটির পুঞ্জীভূত লোকসান ১০৮ কোটি টাকা। বর্তমানে চিনি কলটি আর্থিক সঙ্কটে ভুগছে। এমনকি নিয়মিত শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এর পরও পাকিস্তানকে ইতোমধ্যে ৫৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি ঋণ ২৪ কিস্তিতে পরিশোধ করতে চায় চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) অনুরোধ জানিয়েছে সংস্থাটি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের বক্তব্য হচ্ছে, পাকিস্তান থেকে পাবনা চিনি কলের আধুনিকায়নের জন্য ঋণ নেয়া হয়। কিন্তু আধুনিকায়ন করা হলেও কাঁচামালের সঙ্কটে আগের মতোই উৎপাদন থাকে। ফলে প্রকল্প গ্রহণের উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়নি। অন্যদিকে কয়েকগুণ বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হবে। যেখানে চিনিকলের শ্রমিকদের বেতন দেয়াই দায়, সেখানে এত বড় ঋণ পরিশোধ করা বেশ কঠিন।

No comments

Powered by Blogger.