আরও চার পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি দুদকে তলব-পদ্মা সেতু by মহিউদ্দিন আহমেদ

পদ্মা সেতুর পরামর্শক প্রাক যাচাইতে দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে এবার দুর্নীতি দমন কমিশনে ডাকা হয়েছে অপর চারটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ প্রতিনিধিকে। আগামী ২২ তারিখ তাদের দুদক কার্যালয়ে হাজির হতে নোটিস করা হয়েছে।


এর আগে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি জিয়াউল হককে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।
এ সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক মীর জয়নুল আবদীন শিবলী এবং মির্জা জাহিদুল আলম স্বাক্ষরিত চিঠি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের ইতোমধ্যে প্রেরণ করা হয়েছে।
স্বচ্ছ তদন্তের স্বার্থে এ চারটি প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ প্রতিনিধিকে জিজ্ঞাসাবাদের সিদ্ধান্ত হয় কমিশনের নিয়মিত বৈঠকে। এর আলোকে তদন্ত কর্মকর্তারা নোটিস প্রেরণ করেন। নোটিসে চলতি মাসের ২২ তারিখ চারটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ চার কর্মকর্তাকে হাজির হতে বলা হয়েছে। তলব করা চারটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে, যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠান হালক্রো গ্রুপ, নিউজিল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান একম অ্যান্ড এজেডএল, জাপানের ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্ট কোম্পানি লিমিটেড এবং যুক্তরাজ্য ও নেদারল্যান্ডসের জয়েন্ট ভেনচার কোম্পানি হাইপয়েন্ট রেলেন্ড। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের হালক্রো গ্রুপের বাংলাদেশ প্রতিনিধি রুহুল আমিনের নাম নিশ্চিত হওয়া গেছে। অপর তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির নাম জানাতে অস্বীকৃতি প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
তবে এসব কর্মকর্তা যদি দেশের বাইরে থাকেন বা অসুস্থ থাকেন সে ক্ষেত্রে তারা নিজেদের সুবিধামতো সময়ে আসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কেউ নতুন তারিখ বা সমরে জন্য আবেদন করেননি বলে জানা গেছে।
এ চার কর্মকর্তা তলব করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, অভিযোগ হচ্ছে এসএনসি লাভালিনের কাছে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের কর্মকর্তারা ঘুষের তালিকা করেছেন এবং অভিযুক্তরা ঘুষ চাওয়ার অভিযোগও রয়েছে। যদি অভিযুক্তরা ঘুষ দাবি করেন তা হলে তারা অপর চারটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ঘুষ চেয়েছেন কিনা সে বিষয়টি জানতে এ চারটি প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের ডাকা হয়েছে। এর আগে সেতুর ঠিকাদার প্রাক-যাচাই সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান ছাড়া অপর চারটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
এ ছাড়া এ পর্যন্ত সন্দেভাজন ছয়জনকে জিজ্ঞসাবাদ করা হয়। তাঁরা হলেন সাবেক পররাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, জাতীয় সংসদের হুইফ নূরে আলম চৌধুরীর ভাই নিক্সন চৌধুরী, এসএনসি লাভালিনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি জিয়াউল হক। এ ছাড়া সেতু বিভাগের তিন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী লিয়াকত আলী, সহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ ও সহকারী প্রকৌশলী মোঃ গোলাম মর্তুজাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে আবুল হোসেন ও তৎকালীন সময়ের সেতু বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে।
উল্লেখ্য, এসএনসি লাভালিনসহ উপরোক্ত চারটি প্রতিষ্ঠানের তালিকা বিশ্বব্যাংকের কাছে প্রেরণ করে পরামর্শক যাচাই-বাছাই কমিটি। বিশ্বব্যাংক এ তালিকা হাতে পাওয়ার পর অভিযোগ তোলে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিন কাজ পেতে অনিয়মের আশ্রয় নেয় এবং তৎকালীন যোগযোগমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা ঘুষ দাবি করেন। অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বব্যাংক ১২০ কোটি ডলার ঋণ চুক্তি স্থগিত করে। এক পর্যায়ে ২৯ জুন চুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক।

No comments

Powered by Blogger.