সিরিয়ায় বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের অধ্যাদেশ জারি

সিরিয়ায় বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের অধ্যাদেশ জারি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়। এদিকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সিরিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর কঠোর দমন-পীড়নের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।
সানার প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট বাশার রাজনৈতিক দলের আইনসংক্রান্ত একটি অধ্যাদেশ জারি করেছেন। এই অধ্যাদেশ জারির ফলে দেশটিতে নতুন রাজনৈতিক দল গড়া যাবে। এসব দল ক্ষমতাসীন বাথ পার্টির পাশাপাশি রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে। ১৯৬৩ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা বাথ পার্টি সাংবিধানিকভাবে দেশটির ‘রাষ্ট্র ও সমাজের নেতা’।
সিরিয়া সরকার বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য গত মাসে এ-সংক্রান্ত আইনের খসড়া তৈরি করে। এতে দল গড়ার শর্ত হিসেবে দল গঠনের উদ্দেশ্য, কার্যক্রম ও অর্থের উৎসসহ বেশ কিছু বিষয় উল্লেখ বাধ্যতামূলক করা হয়। একই সঙ্গে ধর্ম, বর্ণ, আঞ্চলিকতাসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে দল গঠন নিষিদ্ধ করা হয়। প্রেসিডেন্ট এই অধ্যাদেশ জারি করায় এটি কার্যকরের জন্য পার্লামেন্টের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে না।
এদিকে তিন দিনের তর্ক-বিতর্কের পর গত বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১৪ সদস্য সিরিয়ায় নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংসতার নিন্দা জানাতে সম্মত হয়। তবে একমাত্র লেবানন এ নিন্দা প্রস্তাবের বিরোধিতা করে।
সিরিয়ায় সরকারবিরোধীদের ওপর দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে এই প্রথমবারের মতো সুস্পষ্টভাবে নিন্দা জানাল নিরাপত্তা পরিষদ। সিরিয়ার দীর্ঘদিনের মিত্র দেশ রাশিয়াও এই নিন্দায় সমর্থন জানিয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদ একই সঙ্গে এ জন্য দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত বলে উল্লেখ করেছে। গত বুধবার দেওয়া ওই বিবৃতিতে বলা হয়, সিরীয় কর্তৃপক্ষের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বেসামরিক জনগণের ওপর দমন-পীড়ন চালানোর ঘটনায় নিন্দা জানানো হচ্ছে। ১৫ সদস্যবিশিষ্ট নিরাপত্তা পরিষদের ইউরোপীয় সদস্য রাষ্ট্রগুলো সিরিয়ার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
বিবৃতির পর জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেন, সারা বিশ্বের মানুষ উদ্বেগের সঙ্গে সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। দেশটিতে গত কয়েক দিনের ঘটনা সত্যিই ভয়াবহ। এই অবস্থা চলতে পারে না। প্রেসিডেন্ট বাশার তাঁর জনগণকে এভাবে হত্যা করতে পারেন না। তিনি আরও বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের এই বিবৃতি সিরীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সুস্পষ্ট বার্তা।
এদিকে সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী গত বুধবার ও গতকাল বৃহস্পতিবার হামা শহরে কমপক্ষে ৪৫ বেসামরিক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে। হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া এক কর্মীর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
সিরিয়ায় গত মার্চ থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে এ পর্যন্ত এক হাজার ৬০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.