বাবার ’৮৩, ছেলের ২০১১

১৯৮৩ সালে বিশ্বকাপ জয় সেদিনের ১০ বছর বয়সী এক বালককে অনুপ্রাণিত করেছিল। সেই বালকটিই ২৮ বছর পর ভারতের দ্বিতীয় বিশ্বকাপজয়ী দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। এই নামটিই তাঁর সতীর্থ খেলোয়াড়দের জন্য ছিল জয়ের অনুপ্রেরণা—শচীন টেন্ডুলকার। এই অনুপ্রেরণার উৎসমুখ খুলে দিল নতুন এক প্রজন্মের সামনে। এই প্রজন্মের ঝান্ডা উঠতে পারে শচীনপুত্র অর্জুনের হাতে।
বিশ্বকাপ জয়ের উন্মাদনা গায়ে মেখেই ভারত মেতে উঠল আইপিএল নিয়ে। এই আইপিএলে খেলতেই টেন্ডুলকার মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে তাঁর মুম্বাই ইন্ডিয়ানস সতীর্থদের সঙ্গে মিলিত হলেন। সেখানেই বললেন, ভারতের এবারের বিশ্বকাপ জয় তাঁর ছেলে অর্জুনের ক্যারিয়ারে বড় প্রভাব ফেলবে। তবে ছেলে অর্জুনকে ক্রিকেটারই হতে হবে, বাবা টেন্ডুলকারের এমন প্রত্যাশা নেই। ছেলের ওপর প্রত্যাশার ভার তিনি চাপিয়ে দিতে চান না, ‘ভারতের ১৯৮৩ বিশ্বকাপ জয়ে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। ২০১১ সালের এই জয় আমার ছেলে অর্জুনের ওপরও বিশাল প্রভাব ফেলবে...তবে আমি ওকে ক্রিকেটার হওয়ার জন্য চাপ দেব না। ওই বেছে নিতে পারবে, ও কী হতে চায়।’
টেন্ডুলকার চাপ না দিলেও ছেলে ইতিমধ্যেই হাঁটতে শুরু করেছে বাবার পথে। এক বছর আগে মাত্র ১০ বছর বয়সেই এক অনূর্ধ্ব-১৩ টুর্নামেন্টের হয়ে অভিষেক হয়ে গেছে অর্জুনের। তা ছাড়া সিনিয়র টেন্ডুলকারের সঙ্গে জুনিয়র টেন্ডুলকার প্রায়ই দেখা যায় অনুশীলনের মাঠে।
ছেলের প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে টেন্ডুলকারকে বলতে হয়েছে মায়ের প্রসঙ্গেও। বিশ্বকাপ জিতে বীরের বেশে ঘরে ফেরা ছেলেকে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন টেন্ডুলকারের মা। টেন্ডুলকার বলেছেন, ‘যখন আমি বাড়ি ফিরে যাই, মা খুবই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর চোখে ছিল সুখের অশ্রু।’ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লেও ভারতীয় ঐতিহ্যমতো বিশ্বকাপজয়ী ছেলেকে মা বরণ করে নেন প্রদীপ জ্বেলে।
আর হোটেলে ফিরলে? শুনুন টেন্ডুলকারের কণ্ঠেই, ‘আমরা যখন হোটেলে ফিরলাম, অজস্র সমর্থক আমাদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছে...আমি এমনটা আগে কখনো দেখিনি।’
‘ভারতীয়রা সংকীর্ণমনা’ পাকিস্তান অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদির মন্তব্য নিয়ে ভারতে তোলপাড়। কিন্তু ওই বিষয়ে প্রশ্ন তাঁর দিকে ছুটে যেতেই টেন্ডুলকার বরাবরের মতোই শান্ত-সৌম্য, ‘এ নিয়ে কোনো মন্তব্য নয়...কে একজন কী বলেছে, তার ওপর আমার তো কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।’
টেন্ডুলকারই শুধু কথা বলে যাবেন, তাঁকে নিয়ে কেউ কিছু বলবে না তা কি হয়? বিশ্বকাপ জয়ের পর থেকেই প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন টেন্ডুলকার। এবার প্রশংসাবাণী নিয়ে উপস্থিত অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান আগামী বিশ্বকাপেও টেন্ডুলকারের খেলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিতে পারছেন না, ‘শচীন চিরযুবা। সে অবশ্যই তার খেলা চালিয়ে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ও ক্ষুধাটা দেখিয়েছে। এটা বিরাট ব্যাপার। ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম আইকন সে। তার পক্ষে যেকোনো কিছুই অর্জন করা সম্ভব।’ সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার, আইপিএলের দল কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের কোচ মাইকেল বেভানের কথা, টেন্ডুলকার তাঁর ব্যাটিংটাকে উপভোগ করছেন, ‘দারুণ ব্যাট করছে সে, আর যখন আপনি একটা সফল দলের অংশ হবেন, তখন মুহূর্তটা আরও উপভোগ্য হয়ে ওঠে।’

No comments

Powered by Blogger.