উলফা ও বাংলাদেশ -বিচ্ছিন্নতাবাদী ও জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় আর নয় by মতিউর রহমান

আসামের উলফা (ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম) এবং বিভিন্ন ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী দীর্ঘদিন বাংলাদেশে নানাভাবে সক্রিয় ছিল, তাদের আস্তানা ছিল—এ বিষয়টি এখন দেশের সংবাদমাধ্যমে বহুল আলোচিত। এটা যে আগে কেউ জানত না, ব্যাপারটা তা নয়। এসব ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর এ দেশে অবস্থান বা তত্পরতার কথা অতীতের সব সরকার ও বিরোধী দল এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানত। দীর্ঘদিন তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগিতাও পেয়েছে এই বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো, যদিও অতীতে আমাদের সরকারগুলো দেশে এসব সশস্ত্র গোষ্ঠীর অস্তিত্বের কথা অস্বীকার করে এসেছে। আন্তদেশীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের সরকারগুলো যেন সংকটে না পড়ে, সে বিবেচনা থেকে দেশের সংবাদমাধ্যমও এদের নিয়ে বড় কোনো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। তবে বিভিন্ন সময় এসব গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সরকারের কিছু তত্পরতা বা তাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত নানা ব্যবস্থা সম্পর্কে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে।
আসামসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এ দেশে আস্তানার বা অবস্থানের সত্যতা বাংলাদেশের একাধিক সরকারের আমলে একাধিক প্রভাবশালী মন্ত্রী আমাদের নিশ্চিত করেছিলেন। অন্তত তিনজন সাবেক সেনাপ্রধানের কাছ থেকেও এসব আমরা শুনে এসেছি। প্রভাবশালী একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতাও বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পেয়েছে বলে জানা যায়। তারা অবশ্য এ সমালোচনা এখন মেনে নেয়। তারা এ-ও জানায়, আর এ রকম হবে না। ভারতের অভিযোগের জবাবে আমাদের সব সরকারই অবশ্য উলফাসহ বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর বাংলাদেশে অবস্থানের কথা অস্বীকার করে এসেছে। এখন তো বাংলাদেশের সরকার এদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। তবে এটাও সত্য, অতীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় সরকারের আমলে এসব গোষ্ঠীর ওপর কখনো কখনো কিছু চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। উলফা বা অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর কিছু আস্তানা ভেঙে দেওয়া হয়েছে, আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে বিভিন্ন সময় কিছু ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী নিহতও হয়েছে।
বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী জোট সরকারের আমলে ২০০৫ সালের ২৭ মে ভোরে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুরে র্যাব ও বিডিআর যৌথ অভিযান চালাতে গেলে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ হয়। এতে ছয় বিচ্ছিন্নতাবাদী নিহত হয়। পরে র্যাব ওই এলাকা থেকে আটজনকে গ্রেপ্তার এবং গ্রেনেডসহ বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করে।
২০০৬ সালের ১২ জুন রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার মাচালংয়ে সেনাবাহিনী ও র্যাবের যৌথ অভিযানের সময় বন্দুকযুদ্ধে ১০ জন ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী নিহত হয়। অভিযানকালে বিচ্ছিন্নতাবাদী দলটির ঘাঁটি থেকে একটি সাব-মেশিনগান (এসএমজি), ৩০৩ রাইফেল, নাইন এমএম পিস্তলসহ আটটি অস্ত্র এবং গুলি ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ২০০৬ সালের ৩০ জুন ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থেকে একে-৪৭ রাইফেল, গ্রেনেড ও মর্টার শেলসহ উদ্ধার করা হয় বেশকিছু অস্ত্র।
২০০৭ সালের মার্চের শুরুতে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বারোমারি ক্যাম্পের বিডিআরের সদস্যরা ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী একটি গোষ্ঠীর ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার এবং তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গুলি ও বিস্ফোরক উদ্ধার করেন।
এর আগে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে, ১৯৯৭ সালে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন উলফার সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়া। আবার বিএনপি সরকারের আমলে ২০০৬ সালে মৌলভীবাজারে গ্রেপ্তার হন ত্রিপুরার বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী এনএলএফটির (ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অব ত্রিপুরা) একাংশের প্রধান নয়নবাসী জামাতিয়া। দুজন এখনো বাংলাদেশের কারাগারে রয়েছেন।
শুধু তা-ই নয়, ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল এ দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অস্ত্রের চালান ধরা পড়ার ঘটনা ঘটে। ওই দিন চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তীরে চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) জেটিতে খালাস করার সময় ১০ ট্রাক অস্ত্র আটক করে পুলিশ। এ অস্ত্রের চালান যে উলফার আমদানি করা ছিল, সেটা তখনই জানা গিয়েছিল। মামলার তদন্তে এখন এমন তথ্য বেরিয়ে আসছে যে, উলফাকে এ ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করছিল একটি গোয়েন্দা সংস্থা। এরই মধ্যে ওই গোয়েন্দা সংস্থার দুজন সাবেক মহাপরিচালককে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিআইডি। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন ওই সংস্থার একজন সাবেক পরিচালক। অস্ত্র চোরাচালানের পুরো প্রক্রিয়াটির সঙ্গে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার যোগসাজশের কথাও শোনা যায়।
ওই অস্ত্রের চালান ধরা পড়ার পর বিএনপির তত্কালীন একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী আমাদের বলেছিলেন, এই অস্ত্রের চালান এনেছে উলফা। ওই মন্ত্রী আরও বলেছিলেন, উলফা নিজ ব্যবস্থাপনায় এ রকম বড় ধরনের অস্ত্রের চালান নিয়ে আসতে পারে, তাদের সেই শক্তি-সামর্থ্য ও যোগাযোগ রয়েছে। তবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার পুরো বিষয়টিকে ধামাচাপা দিয়ে রাখে।
এর আগে ২০০৩ সালের ২৭ জুন বগুড়ার কাহালুতে এক লাখ গুলি ও ১৭৪ কেজি উচ্চক্ষমতার বিস্ফোরক আরডিএক্স ধরা পড়ে। সে চালানও উলফার ছিল বলে এখন তদন্তে বেরিয়ে আসছে। এসব ঘটনা এটাই প্রমাণ করে, এ দেশে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা শুধু অবস্থানই করেনি, তারা বিপুল অস্ত্র-গোলাবারুদ মজুদও করেছে। আর এ সবই করতে পেরেছে দেশের অভ্যন্তরের কোনো না কোনো রাজনৈতিক শক্তি ও গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায়।
সম্প্রতি উলফার চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়াসহ সংগঠনটির কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতার গ্রেপ্তারের ঘটনায় বাংলাদেশে এসব গোষ্ঠী আবার আলোচনায় এসেছে। তারা কোথায় ও কীভাবে গ্রেপ্তার হয়েছে, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। বিতর্ক যা-ই হোক, দেশের ভেতরে সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী বা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার বাংলাদেশের রয়েছে। সার্ক ও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সন্ত্রাসবিরোধী সনদে স্বাক্ষরদানকারী দেশ বাংলাদেশ। তবে সে বিতর্কে না গিয়েও এখন এটা স্পষ্ট করে বলা যায়, তারা দীর্ঘদিন ধরে এ দেশে থেকে তত্পরতা চালিয়ে ছিল। উলফার সামরিক বিভাগের প্রধান পরেশ বড়ুয়া একসময় এ দেশে অনেকটা প্রকাশ্যেই চলাফেরা করেছেন। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব গোষ্ঠীর তত্পরতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। ২০০৪ সালের শুরুতে পরেশ বড়ুয়া বিএনপি সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীকে হুমকি পর্যন্ত দিয়েছিলেন। ওই মন্ত্রী তখন অনেককেই এ কথা বলেছিলেন।
সম্প্রতি উলফার চেয়ারম্যানসহ একাধিক নেতার গ্রেপ্তারের পর বিষয়টি আলোচনায় এলেও বিরোধী দল বিএনপি বা জামায়াতে ইসলামী এখনো এ বিষয়ে কিছু বলেনি। তবে এ দলগুলোর সমর্থক-সংবাদমাধ্যমে তাদের পক্ষের সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীরা বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা তুলছেন। তাঁরা এমনও প্রচার করছেন, উলফা এ দেশে পাল্টা আক্রমণ চালাতে পারে। অবশ্য পরেশ বড়ুয়া বিবৃতি দিয়ে সে আশঙ্কা দূর করেছেন। বলেছেন, বাংলাদেশ তাদের লক্ষ্য নয়।
আমরা মনে করি, এ ধরনের ভারতীয় সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী কোনো গোষ্ঠীকে কোনো প্রকার আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া আমাদের দেশের জন্য ঠিক নয়। কোনো গোয়েন্দা সংস্থারও উচিত নয় তাদের সহযোগিতা করা। বাংলাদেশের ঘোষিত পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে, অন্য দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার ক্ষেত্রে আমরা কাউকে কোনো সহায়তা করব না। কিন্তু বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এ ক্ষেত্রে ঠিক উল্টোটা করা হয়েছে। ফলে ওই সময় প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। এর আগের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও শুরুর দিকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উষ্ণ ছিল, কিন্তু পরে সে উষ্ণতা আর বজায় থাকেনি। সে সময় অনুপ চেটিয়া গ্রেপ্তার এবং বিচারের সম্মুখীন হলেও উলফা বা অন্য কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
শুধু ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী নয়, ভারত ও পাকিস্তানের ধর্মভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর কথাও এ ক্ষেত্রে বলতে হয়। এসব জঙ্গিগোষ্ঠী এ দেশে শুধু আনাগোনাই করেনি, এখানে তাদের আস্তানা ছিল, এখানে তারা অত্যন্ত তত্পর ছিল। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে এ-জাতীয় জঙ্গিদের আনাগোনা ছিল সবচেয়ে বেশি। তাদের তত্পরতার কথা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অজানা ছিল—এ কথা মোটেও বিশ্বাসযোগ্য নয়। আবার এ কথাও সত্য, এসব জঙ্গির প্রতি পাকিস্তানি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার ঘনিষ্ঠতা এবং নানা রকম যোগাযোগ ও পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ রয়েছে। জঙ্গিদের প্রতি উদাসীন থাকার পরিণতি বিগত জোট সরকারের আমলে আমরা দেখেছি। দেশব্যাপী ভয়ংকর বোমা-গ্রেনেড হামলা ও হতাহতের সেসব স্মৃতি সহজে ম্লান হওয়ার নয়। গত কয়েক মাসে ভারত ও পাকিস্তানের ১০ জন জঙ্গি গ্রেপ্তার হয়েছে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে।
আমরা মনে করি, ভারতের উলফা, পাকিস্তানের লস্কর-ই-তাইয়েবা কিংবা অন্য যেকোনো বিদেশি সন্ত্রাসী বা জঙ্গিগোষ্ঠীই হোক না কেন, কখনোই আমাদের ভূমি ব্যবহারের কোনো সুযোগ তাদের দেওয়া ঠিক নয়। এসব গোষ্ঠীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিলে তা আন্তরাষ্ট্রীয় দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও অবিশ্বাসের জন্ম দেয়। ভূ-রাজনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে দেশ হয়ে পড়ে চরম ঝুঁকিপূর্ণ; আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও সহযোগিতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটি হয়ে ওঠে বড় বাধা। পাশাপাশি আমাদের নিরাপত্তাকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে।
বর্তমান সরকার এরই মধ্যে কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে এ ধরনের বিদেশি বিচ্ছিন্নতাবাদী ও জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। আমরা এ ক্ষেত্রে সরকারি এসব ব্যবস্থাকে সঠিক পদক্ষেপ বলে মনে করি। বিচ্ছিন্নতাবাদী বা জঙ্গিগোষ্ঠীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার ফলে পাকিস্তান এখন যে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়েছে, তা থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।
আমরা আশা করব, প্রধানমন্ত্রী সামনের ভারত সফরে দুই দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করবেন এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নের এসব অন্তরায় দূর করতে উদ্যোগ নেবেন। অন্য কোনো দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী বা জঙ্গিদের এ দেশের ভূমি ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না—এমন আশ্বাস নিশ্চয় তিনি ভারতকে দেবেন। পাশাপাশি ভারতের কাছ থেকেও নিশ্চয় আমরা এ প্রতিশ্রুতি ও নিশ্চয়তা আদায় করতে পারব যে, আমাদের দেশের কোনো সন্ত্রাসীও ভারতে আশ্রয়-প্রশ্রয় পাবে না। কারণ এটাও আমরা জানি, বাংলাদেশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীরা ভারতে গিয়ে লুকিয়ে থাকে। সেখানে থেকেই এ দেশে নানা অপরাধ সংগঠিত করে। সে জন্য এই অপরাধীদের অপতত্পরতা বন্ধে অবশ্যই আমাদের ভারতের সহযোগিতা প্রয়োজন।
ভারতের পাশাপাশি পাকিস্তানের সঙ্গেও বর্তমান মহাজোটের শেখ হাসিনার সরকারকে আলোচনা করতে হবে, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। তাদের সঙ্গে এই সমঝোতায় পৌঁছাতে হবে যে, বাংলাদেশের কোনো জঙ্গিগোষ্ঠী পাকিস্তানে কোনো প্রশিক্ষণ বা অন্য কোনো ধরনের সহযোগিতা পাবে না। পাকিস্তানের জঙ্গিদেরও বাংলাদেশে প্রবেশে বা তত্পরতা চালানোর ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হবে, এবং এ সংক্রান্ত সব বিষয়ে দুই দেশ পরস্পরকে সহযোগিতা করবে।
আমরা কোনো দেশের সঙ্গে বৈরিতা চাই না। আমরা সমঝোতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ও আমাদের আঞ্চলিক ভূখণ্ডের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য বা অর্থনৈতিক উন্নয়নে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা চাই, ভারত ও পাকিস্তানকে সঙ্গে নিয়ে ত্রিদেশীয় এবং সার্কভুক্ত দেশগুলোকে নিয়ে দক্ষিণ এশীয় পরিমণ্ডলের নিরাপত্তা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকার একটি উদ্যোগী ভূমিকা নেবে। আসন্ন নয়াদিল্লি সফরের মধ্য দিয়ে এর সূত্রপাত হতে পারে। অন্তত এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে, যাতে সে লক্ষ্যে একটি ইতিবাচক যাত্রার সূচনা হয়।
মতিউর রহমান: সম্পাদক, প্রথম আলো।

No comments

Powered by Blogger.