কোয়েটার বই বিক্রেতাদের দিন শেষ! by মোহাম্মদ আকবর নতিজাই

সাজিদ বালুচ। বয়স ২২। হাতে দুটি বই। একটি ড. মুবারক আলীর নির্বাচিত প্রবন্ধের সঙ্কলন, নাম ‘ইন দি শ্যাডো অব হিস্টরি।’ অপরটি ‘ইন সার্চ অব সলুউশন : অ্যান অটোবায়োগ্রাফি অব মির গাউস বখম বিজেনজো।’ সাজিদ বেলুচিস্তানের কেচ জেলার লোক। তিনি বেলুচিস্তান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের ছাত্র। তিনি ক্যাম্পাসের বুক পয়েন্টে এসেছেন এর মালিক মোহাম্মদ এশার কাছ থেকে কিছু ডিসকাউন্টের আশায়।
আমুদে ধরনের এশার বয়স মাত্র ৩৫ হলেও এর মধ্যে মাথায় বিশাল টাক গজিয়েছে। আর তা ঢাকার জন্য সবসময় টুপি পরে থাকেন। তিনি সাজিদকে ২৫ ভাগ কমিশন দিতে রাজি হলেন। ছাত্রদের ছাড় দেয়ার পক্ষপাতী তিনি। আর এই সাজিদের মতো ছাত্ররাই তার ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করছে।
নিউজ উইক টাইম বুকল্যান্ডের মতো নগরীর বইয়ের দোকানগুলো এই সৌভাগ্য পায়নি।
৭২ বছর বয়স্ক সোহাইল আহমদ শিশুসুলভ হাসিমাখা মুখের জন্য পরিচিত। তিনি কোয়েটার সবচেয়ে প্রাচীন একটি বইয়ের দোকানের মালিক। নাম নিউ কোয়েটা বুক স্টল। ১৯৩৬ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত। তার জায়গাটি ভাড়া নেয়ার জন্য ব্যাংকগুলো ৫ লাখ রুপি দিতে রাজি। কিন্তু তিনি দোকান গুটিয়ে ফেলতে নারাজ। তিনি যে কোনো মূল্যে বইয়ের দোকানটি চালু রাখতে চান।
তিনি বলেন, ‘নিউজ উইক টাইম বুকল্যান্ডের মালিক সালিম বুখারি বলেছেন, আমি যেন কোনোভাবেই দোকানটি বন্ধ না করি। তবে তিনি নিজে আশা ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি তার দোকানটি বিক্রি করে দিতে চান।’
তিনি অবশ্য দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। নিজে নিজেই বলেন, এছাড়া তিনি আর কীই বা করতে পারেন। তিনি নিজে বুড়ো হয়ে পড়েছেন। তার ছেলেদের একজন ইংল্যান্ডে, আরেকজন লাহোরে থাকেন। তার স্ত্রী মারা গেছেন। তবে সবচেয়ে বড় কথা, বই বিক্রি করে চলা যায় না।
এখনকার দিনে, আহমদের দোকানে ক্রেতা আসার ঘটনা বিরল। অথচ নগরীর একেবারে কেন্দ্রস্থলে তার দোকানটি।
আহমদ অবশ্য কয়েকটি কারণে এখনো দোকানটি চালিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী। দোকানটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তার বাবা মোহাম্মদ আইয়ুব। ভারতবর্ষ ভাগ হওয়ারও আগে। ফলে এই দোকানটি তার পারিবারিক ঐতিহ্য। এই দোকানেই তার পুরনো বন্ধুরা আর সহকর্মীরা আসেন দেখা-সাক্ষাৎ করতে। এই কারণেই তিনি ব্যাংকের প্রলোভনেও ধরা দেননি।
এক সময় বেলুচিস্তানের বিভিন্ন অংশ থেকে ছাত্ররাও আসতো এই দোকানে। এখন তাদের সাক্ষাৎ পাওয়া বিরল ব্যাপার।
আসলে বেলুচিস্তানে পাঠাভ্যাস কমে যাওয়ায় বই বিক্রিও কমে গেছে।
তবে বিষয়টি মানতে নারাজ ড. শাহ মোহাম্মদ মারি। তিনি উর্দু ভাষায় বেশ কয়েকটি গ্রন্থ লিখেছেন। তার মতে, লোকজন পড়ে ঠিকই। তবে তাদের পড়ার ধরনটি বদলে গেছে। লোকজন এখন ইন্টারনেট আর সামাজিক মাধ্যমে পড়াশোনা করে। এগুলোই এখন বই পুস্তকের নতুন উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে স্বীকার করেন, বইয়ের দোকানের জন্য এখন কঠিন সময়। বেলুচিস্তানে বই বিক্রি কমে যাওয়ার জন্য তিনি তিনটি কারণের কথা বলেন। একটি হলো আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, দ্বিতীয়ত ইন্টারনেটের মতো অনেক মাধ্যমের আবির্ভাব হয়েছে বিকল্প উৎস হিসেবে এবং তৃতীয়টি হলো বইয়ের মূল্য বেড়ে যাওয়া।

No comments

Powered by Blogger.