কোয়েটাগামী রেলপথ by সালমান রাশিদ

আধুনিক ট্রেন বোলন পাসের ঢালু দিয়ে কষ্টসাধ্য পথে কোয়েটা পৌঁছে। তবে খুব কম মুসাফিরই জানেন, নগরীতে এই পথে প্রথম ট্রেনটি আসেনি। ১৮৮৭ সালের মার্চে কোয়েটায় পৌঁছেছিল যে ট্রেনটি সেটিকে উত্তর দিকে সিবিতে মোড় ঘুরতে হয়েছিল, নারি নদী অতিক্রম করে হারনাই পাহাড়ের শীতল এলাকা পাড়ি দিয়ে তারপর দক্ষিণ দিক দিকে বোস্তন গিয়েছিল। তারপর তার কোয়েটা যাওয়ার যাত্রার অবসান ঘটেছিল।
চ্যাপার হিলটি আসলে সুইস রোলের মতো। অর্ধ গোলাকার কাঠামো রয়েছে এর পশ্চিম প্রান্তে। পূর্ব দিকে আছে পাথরের ব্যাপক স্তুপ। পশ্চিম দিকের কাছে একটি ফাটল রয়েছে। অনেক অনেক আগে ভূমিকম্পে এমনটা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। এর তলদেশ নদীর মতো। কখনো তীব্রবেগে স্রোতধারা বয়ে চলে, কখনো আবার তা স্রেফ গর্ত হিসেবেই থেকে যায়।
দক্ষিণ প্রান্তে থাকা একটি মনিটরিং স্টেশনের ধ্বংসাবশেষ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, একসময় এখানকার পানি পরিমাপের জন্য সরকারি ব্যবস্থা ছিলো।
ব্রিটিশরা রেললাইন স্থাপনের অনেক অনেক আগে থেকেই এই পথে কাফেলা চলত। তারা কখনো বর্ষায়, কখনো শুষ্ক মওসুমে এলাকাটি পাড়ি দিত।
আর কোয়েটাকে দ্রুত নির্মিত হতে থাকা রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করার সময় সার্ভেয়ররা নানা হিসাব কষে এই এলাকার মধ্য দিয়েই রেললাইন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। রেললাইন নির্মাণের কাজটি কঠিন ছিল, তবে অন্যান্য সম্ভাব্য পথের চেয়ে এটিই তাদের কাছে তুলনামূলকভাবে পছন্দের ছিল।
তা করতে গিয়ে প্রকৌশলীদের বেশ দক্ষতার পরিচয় দিতে হয়েছে। এমন জটিল পরিবেশের মধ্য দিয়ে রেললাইন স্থাপন করার কাজটি সহজ ছিল না। এই জটিল কাজটিই তারা করেছেন দুর্দান্ত ভঙ্গিতে। ফলে এই রেললাইনটি একটি দর্শনীয় স্থানেও পরিণত হয়েছে।
নির্মাণের পর থেকে ৫৫ বছর ধরে এই পথেই ট্রেন চলাচল করেছে। ওই আমলের কথা ভাবলে এখনো শিহরণ জাগে।
এই পথে রেললাইন নির্মাণকাজে শুরু থেকেই জটিলতা ছিল। কেবল চড়াই আর উতরাই নয়, বৃষ্টির পানিতে ভূমিধসের সৃষ্টি হতো। ফলে যেখানে লাইন স্থাপনের কাজ চলছিল, সেটি ধসে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু প্রকৌশলীরা হাল না ছেড়ে অসাধ্য সাধনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন।
আবার নির্মাণের সময়কার জটিলতাই শেষ নয়। নির্মাণের পরও অনেকবার লাইনের কিছু অংশ ধসে গেছে। ১৯৪২ সালের ১১ জুলাইয়ের কথা স্মরণ করা যেতে পারে। প্রবল বৃষ্টিতে লাইন ভেসে গিয়েছিল। বেরিজের কথায়, রেলগুলো ৯০ ফুট উঁচুতে ফেস্টুনের মতো ঝুলে রয়েছে।
রেলওয়ে প্রকৌশলীরা বোলন পাস দিয়ে কোয়েটা পর্যন্ত সরাসরি লাইন নির্মাণ করতে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। ১৯৪২ সালের গ্রীষ্মে তাদের কাজ সমাধা হয়। এর মাধ্যমে কোয়েটা যুক্ত হয় ব্রিটিশ ভারতের অবশিষ্ট রেল নেটওয়ার্কের সাথে।
আর তখনই আগের লাইনটির গুরুত্ব কমে যায়। ব্রিটিশ সরকার ১৯৪৩ সালের মে মাসে খোস্তের কাছে জারদালু ও খানাইয়ের মধ্যকার লাইনটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনের প্রচুর স্টিলের প্রয়োজন পড়ে। তারা যতটা সম্ভব স্টিল সংগ্রহ করতে থাকে। ফলে এখানকার রেললাইনের সব সামগ্রী তুলে নেয়ার কাজ শুরু হয়ে যায়।
অনেক কিছুই এখন আর নেই। কিন্তু তারপরও যা রয়ে গেছে, সেটিও আকর্ষণীয়। বিশেষ করে চ্যাপার রিফট এখনো পর্যটক আকর্ষণ করার ক্ষমতা রাখে। আবার মাড গর্জ স্টেশন হতে পারে একটি সরাইখানা। জারদাল ও খোস্ত স্টেশন হতে পারে টি-হাউস। এমনকি জাদুঘরেও রূপান্তরিত করা যেতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.