জাতিসংঘকে অবজ্ঞা করে সেনাবাহিনীর সুরক্ষায় আফিম চাষ বাড়ছে মিয়ানমারে by লাউয়ি ওয়েং

সরকারি নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাসহ মিয়ানমারের কচিন রাজ্যে আফিম উৎপাদন বেড়েছে। কচিন ইন্ডিপেডেন্স অর্গ্যানাইজেশনের (কেআইও) এক সমীক্ষায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে আফিমের সার্বিক উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে বলে ২০১৮ সালের জাতিসংঘ সমীক্ষার দাবি নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে।
কেআইও ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের মার্চ পর্যন্ত কচিন ও উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যের ১০,১১০ হেক্টরের বেশি এলাকায় সমীক্ষা চালায়।
গত ২৬ জুন ইস্যু করা প্রতিবেদনে কেআইও উল্লেখ করে যে জাতিসংঘ মাদকবিষয়ক অফিসের প্রতিবেদন তৈরীর সময় যত এলাকায় সমীক্ষা চালানো হয়েছিল, তারা চালিয়েছে তার চেয়ে বেশি এলাকায়।
সংস্থাটি ১৯টি গবেষণা দল পাঠিয়ে ৯,৯৫৩ জনের সাক্ষাতকার নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরী করেছে বলে জানিয়েছে।
কচিনে কমিশন ৬,৯৮.২৩ হেক্টর এলাকায় আফিম চাষ দেখতে পেয়েছে। ২০১৮ সালে ইউএনওডিসি যত পরিমাণ এলাকার কথা উল্লেখ করেছিল, তার চেয়ে এটি প্রায় দ্বিগুণ। এতে বলা হয়, উত্তর শান রাজ্যের ৫টি টাউনশিপে ৩,১৯২.৪ হেক্টর এলাকায় আফিম চাষ হচ্ছে।
কেআইওর মুখপাত্র কর্নেল নাও বো বলেন, আমাদের সমীক্ষার লক্ষ্য ছিল কচিন ও উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্য অবৈধ মাদক সমস্যার ব্যাপ্তি খুঁজে বের করা। আমরা অবৈধ মাদক সমস্যার সর্বোত্তম সমাধান চাচ্ছি।
ইউএনওসিডিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, কচিন রাজ্যে ২০১৮ সালে মোট ৩,৪০০ হেক্টর জমিতে আফিম উৎপাদিত হয়।
এতে কচিন রাজ্যের দানাই টাউনশিপকে বড় ধরনের আফিম কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। এখানে প্রায়ই কেআইওর সশস্ত্র শাখা কচিন ইন্ডিপেন্ডেন্ট আর্মির (কেআইএ) সাথে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর লড়াই হয়ে থাকে। তবে কেআইওর সমীক্ষায় বলা হয়েছে, দানাই ছাড়াও শিনবুইয়াং, সাদং ও কানপাতাই টাউনশিপগুলোতেও বিপুল পরিমাণে আফিম উৎপাদিত হয়ে থাকে। কেআইও জানায়, ইউএনওডিসির সমীক্ষায় পুতাও ও সুমপ্রাবানের মতো আফিম-বর্ধিষ্ণু এলাকার নাম পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়নি।
কেআইও দাবি করে, মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা কানপাতাই ও সাদং টাউনশিপের সবচেয়ে বেশি এলাকায় আফিম চাষ হয়ে থাকে। এতে ওই দুই এলাকায় ৪,৬৫১,৬৭ হেক্টর জমিতে আফিম চাষের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
কেআইও সমীক্ষায় শান রাজ্যের নামখাম, কুতকাই, কুনরঙ, তানজিয়ান ও লাশিও এলাকায় আফিম উৎপাদনের কথা বলা হয়েছে। এসব শহর এখন সাতটি স্থানীয় সশস্ত্র গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে। মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর হাত থেকে তারা এসব এলাকার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে।
কেআইও দাবি করেছে, উত্তর শান রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অধীনে মিলিশিয়া নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতেই রয়েছে হেরোইন ও মেথামফেটামিনের বেশির ভাগ শোধনাগার। বেশির ভাগ অবৈধ মাদক মুসা বা নামখাম থেকে কচিন রাজ্যে প্রবেশ করে।
কেআইও জানিয়েছে, মিলিশিয়া গ্রুপগুলো অবৈধ মাদক উৎপাদনকে সুরক্ষা দেয়। গ্রুপটি অভিযোগ করেছে, সরকারি নিরাপত্তা বাহিনী কেবল ব্যবহারকারী ও খুচরা বিক্রেতাদের গ্রেফতার করে। তারা চীনা ড্রাগ সম্রাটদের অবাধে কার্যক্রম চালাতে দেয় বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
কেআইও মাদক ব্যবসা কার্যক্রমে সুরক্ষা প্রদান বন্ধ করার জন্য মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রতি আহবান জানিয়েছে।
কেআইও আফিম চাষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইউএনওডিসির প্রতিও আহ্বান জানিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.