সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের সমালোচনা বাড়ছে: আল জাজিরার রিপোর্ট

সবচেয়ে বড় তেলক্ষেত্রে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সমালোচনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার নেতৃত্ব নিয়ে ক্ষমতাসীন রাজপরিবারের কিছু সদস্য ও ব্যবসায়ী বিশেষজ্ঞরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। এতে বলা হয়েছে, গত মাসে সৌদি আরবের দুটি তেলক্ষেত্রে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইয়েমেনের হুতিরা। এতে মারাত্মক ক্ষতি হয় ওই দুটি স্থাপনার। এর ফলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল রপ্তানিকারক সৌদি আরবের তেল রপ্তানির ওপর বড় প্রভাব পড়ে। এ অবস্থায় ক্ষমতাসীন রাজপরিবারের বিভিন্ন শাখায় বিভিন্ন প্রভাবশালীর মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে ক্রাউন প্রিন্সের প্রতিরক্ষা ও নেতৃত্ব দেয়া নিয়ে। রয়টার্স বুধবার যেসব সূত্রের উদ্ধৃত করে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তারা নাম প্রকাশ করতে রাজি নন কেউই।
সূত্রগুলো বলেছেন, অভিজাত একটি মহলের কাছে ওই হামলায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
তারা বিশ্বাস করেন, ক্রাউন প্রিন্স ক্ষমতাকে খুব বেশি শক্ত করে আঁকড়ে ধরেছেন। তাদের কেউ কেউ বলছেন, যারা মনে করেন ইরানের বিরুদ্ধে অতিমাত্রায় আগ্রাসী অবস্থান নিয়েছেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ, তাদের মধ্যে তার বিরুদ্ধে সমালোচনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজপরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন একজন সৌদি অভিজাত সদস্য ওই সূত্রের একজন। তিনি বলেছেন, ক্রাউন প্রিন্সের নেতৃত্ব নিয়ে রয়েছে ব্যাপক অসন্তোষ। তার প্রশ্ন- কেন সরকার ওই হামলা আগেভাগে চিহ্নিত করতে পারলো না? এই সূত্রটি বলেছেন, অভিজাত শ্রেণির মধ্যে কেউ কেউ ক্রাউন প্রিন্সের ওপর আস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অন্য চারটি সূত্র ও একজন সিনিয়র কূটনীতিকের মুখেও একই রকম কথা শোনা গেছে।
ক্রাউন প্রিন্সের ঘনিষ্ঠদের মধ্যে একটি সূত্র বলেছেন, তেলক্ষেত্রে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সর্বশেষ ঘটনা ক্রাউন প্রিন্সকে ব্যক্তিগতভাবে কোনো ক্ষতি করবে না। কারণ, তিনি একজন কার্যকর শাসক। আঞ্চলিক প্রাধান্য বিস্তারে ইরানকে থামানোর চেষ্টা করছেন তিনি। এটি হলো দেশপ্রেমের ইস্যু। তাই তিনি কোনো বিপদে পড়বেন না, অন্তত যতদিন তার পিতা বাদশা সালমান বেঁচে আছেন।
বিদেশী দ্বিতীয় একজন সিনিয়র কূটনীতিক বলেছেন, ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ যেহেতু একজন শক্তিশালী, অবধারিত ও গতিশীল নেতা তাই তার পিছনে ঐক্যবদ্ধ থাকবেন সাধারণ সৌদি নাগরিকরা। এ বিষয়ে সৌদি আরব সরকারের মিডিয়া অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে রয়টার্স। তবে তারা এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হয় নি। ওদিকে গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন চ্যানেল সিবিএসে প্রিন্স মোহাম্মদের একটি সাক্ষাতকার প্রচারিত হয়। সেখানে তিনি বলেন, সৌদি আরব একটি বিশাল দেশ। এর সঙ্গে রয়েছে ব্যাপক হুমকি। এমন অবস্থায় সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা দেয়া কঠিন কাজ। তিনি বলেছেন, এসব পুরোপুরি মোকাবিলা চ্যালেঞ্জিং। তাই তিনি ইরানকে বিরত রাখার জন্য শক্তিশালী ও সুচিন্তিত বৈশ্বিক পদক্ষেপ আহ্বান করেন। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ সমাধানের মধ্যে তিনি সামরিক পদক্ষেপের পক্ষে।
আল জাজিরা আরো লিখেছে, সৌদি আরবের বর্তমান বাদশা সালমানের বয়স এখন ৮৩ বছর। তার পরেই আনুষ্ঠানিকভাবে তার স্থান দখল করবেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ। আর এর মধ্য দিয়ে তিনি হয়ে উঠবেন সৌদি আরবের মূল শাসক। এরই মধ্যে তিনি সৌদি আরবকে আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। ৩৪ বছর বয়সী এই প্রিন্সের জনপ্রিয়তা যুব শ্রেণির মধ্যে খুব বেশি। রক্ষণশীল সৌদি আরবে সামাজিক অনেক বিধিনিষেধ শিথিল করার মধ্য দিয়ে তিনি প্রশংসা কুড়িয়েছেন। নারীদের অধিক অধিকার নিশ্চিত করেছেন। সৌদি আরবের তেলনির্ভর অর্থনীতিকে অন্য খাতে বিস্তৃতি করার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন। এ জন্য পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করতে চেয়েছেন। কিন্তু মিডিয়ার ওপর রাষ্ট্রীয় যে নিয়ন্ত্রণ ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে যে দমনপীড়ন তা দেশটির আভ্যন্তরীণ পর্যায়ে প্রকৃত পরিবর্তনকে কঠিন করে তুলেছে।

No comments

Powered by Blogger.