হিন্দুদের যেভাবে তুষ্ট রাখছেন মমতা: ঈদে নজরদারি, প্রকাশ্যে কুরবানি না দিতে মুসলিমদের প্রতি আবেদন by মধুপর্ণা দাস

চলতি বছরের ১২ আগস্ট ভারতের পশ্চিম বঙ্গ রাজ্য ও এর রাজধানী কলকাতায় একটা ভিন্ন রকম ঈদুল আযহা উদযাপিত হতে দেখা গেছে।

পুলিশের তথ্য মতে, আগের বছরগুলোর তুলনায় অনেক কম সংখ্যক গরু জবাইয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বছর ঈদুল আযহার দিনে গরু কোরবানিকে কেন্দ্র করে কলকাতা পুলিশের কাছে অন্তত ৪০টি এফআইআর দায়ের করেছিল বেশ কিছু ডানপন্থী সংগঠন।

কলকাতার সিনিয়র এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, এবার শহর ও জেলাগুলোতে কোন ধরনের সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার ঘটনা ঘটেনি। তাছাড়া সোশাল মিডিয়াতেও কোন গরু জবাইয়ের ছবি বা ভিডিও প্রচারিত হয়নি। এর আগে সোশাল মিডিয়ার এই ধরনের ছবি ছড়িয়ে পড়ার কারণেই মূলত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সূত্রপাত হয়েছিল।

শান্তির জন্য আবেদন

ঈদের কয়েক দিন আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বারুইপুর পুলিশ মুসলিমদের প্রতি বার্তা দিয়ে একটি পোস্টার প্রচার করে। পোস্টারে বাংলায় লেখা ছিল: “কুরবানির আসল উদ্দেশ্য আল্লাহকে খুশি করা, কাউকে কষ্ট দেয়া নয়। আমরা সবাই আমাদের হিন্দু ভাইদের ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিকে শ্রদ্ধা করি। সবার প্রতি আমাদের আবেদন কোরবানি করা পশু প্রকাশ্যে আনবেন না এবং এর কোন ছবি বা ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় দিবেন না। ইসলামের অর্থ হলো শান্তি ও ভালোবাসা”।

অন্যদিকে কলকাতা পুলিশ সতর্ক নজর রেখেছিল যাতে প্রকাশ্যে কোন কোরবানি দেয়া না হয়। এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, “আমরা কোন পোস্টার বা কোন নির্দেশনা দেইনি। তবে আমরা স্থান, অবস্থান, এবং গ্রুপদের সম্পর্কে জানি। তাই আমরা সতর্ক নজরদারির মাধ্যমে গরু জবাই-কেন্দ্রিক অপ্রত্যাশিত ঘটনা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেছি”।

শহর উন্নয়ন মন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমও মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যাতে তারা ‘সংযত থাকে এবং অন্যদের অনুভূতির ব্যাপারে সতর্ক থাকে”।

‘প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িতকতা’

প্রবীণ এক সিপিএম নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন যে, ব্যানার্জির বিরুদ্ধে যে হিন্দু-বিরোধী অভিযোগ উঠেছে, সেটা কাটিয়ে ওঠার জন্যেই ব্যানার্জি এই সব করছেন।

তিনি বলেন, “মনে হচ্ছে যেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সাম্প্রতিককালে হিন্দু ভোটারদের মনজয়ের জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছেন এবং বিজেপি তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় তার সরকারকে হিন্দু-বিরোধী হিসেবে যে প্রচারণা চালিয়েছিলেন, সেটার বিরুদ্ধে একটা অবস্থান তৈরির চেষ্টা করছেন। তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি উভয়েই এখন সাম্প্রদায়িকতার প্রতিযোগিতায় নেমে গেছে”।

এগুলো সব নাটক, বলছে বিজেপি

এদিকে, পশ্চিম বঙ্গের বিজেপি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ঠেকানোর জন্য মমতা সরকারের প্রচেষ্টাকে নাটক হিসেবে মন্তব্য করে বলেছে যে, ‘হিন্দুদের তুষ্ট করার এগুলো হলো ব্যার্থ প্রচেষ্টা’।

রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলিপ ঘোষ বলেছেন, “কোন বাঙালি এবং কোন হিন্দু ভুলবে না কয়েক বছর আগে ভোটারদের মনরক্ষায় কিভাবে তিনি মা দূর্গা বিসর্জনের ব্যাপারে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলেন। ওই দিন মুহাররামের দিনের সাথে মিলে গিয়েছিল এবং তিনি বিসর্জন কয়েক দিনের জন্য থামিয়ে রেখেছিলেন। সরকারের এটা নিশ্চিত করা উচিত যাতে সব সম্প্রদায় তাদের ধর্ম পালন করতে পারে। পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুরা সেটা করতে পারে না। কিছু জায়গায়, স্বরসতী পূজা করতে দেয়া হয় না। এখন ভোটের রেজাল্টের পর তার অবস্থা নড়বড়ে হয়ে গেছে”।

তবে ঘোষের দাবিকে নাকচ করে দিয়ে দস্তিদার বলেছেন, “বিজেপি যেটা প্রচারের চেষ্টা করছে, সেটা অবাস্তব। দিদি (মমতা) সব সম্প্রদায়ের কথা ভাবেন এবং তাদের জন্য চেষ্টা করেন”।

No comments

Powered by Blogger.