মোদিকে আমিরাতের পুরস্কার: পররাষ্ট্রনীতির অগ্রাধিকার পুনঃমূল্যায়ন করা দরকার পাকিস্তানের?

সাহসী পদক্ষেপে পাকিস্তান সিনেটের চেয়ারম্যান সাদিক সাঞ্জরানি সংযুক্ত আরব আমিরাতে তার পূর্ব-নির্ধারিত সফর বাতিল করেছেন। প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আরব আমিরাতের সরকারের পুরস্কার দেয়ার প্রতিবাদে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

জানা গেছে, পার্লামেন্টারি প্রতিনিধিদল নিয়ে চার দিনের সফরে রোববার আমিরাত যাওয়ার কথা ছিল সাঞ্জরানির। কিন্তু তিনি কাশ্মীরী জনগণের সাথে সংহতি প্রকাশ ও মোদিকে সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব দেয়ার প্রতিবাদে সফরটি বাতিল করেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চেয়ারম্যান সিনেট বলেছেন, পাকিস্তান কাশ্মীরীদের স্বাধীনতা আন্দোলনকে পূর্ণ সমর্থন দেয়। তিনি বলেন, মোদি সরকার কাশ্মীরীদের ওপর নজিরবিহীন নৃশংসতা চালিয়েছে, অধিকৃত ভূখণ্ডে কারফিউ জারি করে রেখেছে।

এমন প্রেক্ষাপটে যেকোনো সফর হতো পাকিস্তান ও কাশ্মীরী ভাইদের ভাবাবেগের জন্য ক্ষতিকর।

পাকিস্তানে কেবল সরকার নয় জনসাধারণের একটি বড় অংশই আরব আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তে খুশি নয়।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও আমিরাত সরকারের মোদিকে সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত করার সিদ্ধান্তে খুশি নয়। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য এই সম্মান মোদিকে না দেয়ার জন্য আমিরাতের প্রতি আহ্বান জানায়। লেবার পার্টির পার্লামেন্ট সদস্য নাজ শাহ বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মানবাতাবিরোধী অপরাধে জড়িত। তিনি সর্বোচ্চ সম্মান পাওয়ার উপযুক্ত নন।

মুসলিম উম্মাহ: একটি আকাশকুসুম কথা?

পাকিস্তানে অনেকে বিশ শতকে জামাল উদ্দিন আফগানি ও আল্লামা ইকবালের উল্লেখিত মুসলিম উম্মাহর ইসলামি ধারণায় বিশ্বাস করে। তাত্ত্বিকভাবে মুসলিম উম্মাহ একটি বিমূর্ত ধারণা। এতে সারা দুনিয়ার মুসলিমদের মধ্যে ঐক্য প্রচার ও তাদেরকে ‘ভাই’ হতে উৎসাহিত করা হয়।

অন্য কথায়, এটি এমন এক আইডিয়া, যাতে বলা হয় যে একই বিশ্বাসে বিশ্বাসীরা ভাই। কিন্তু আমিরাত সরকার যখন মোদিকে সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত করল, তখন তারা বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী কাশ্মীর উপত্যকায় নজিরবিহনী নৃশংসতা চালানো সত্ত্বেও আমিরাত সরকার তাকে এমন মর্যাদা দেয়াটা তারা মেনে নিতে পারছে না।

এখন ব্যাপকভাবে মনে করা হচ্ছে যে পাকিস্তানের মুসলিমদের উচিত হবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতির দিকে জোর দেয়া। কারণ সীমান্তের বাইরের কেউ তাদের পাশে থাকবে না।

বিশেষজ্ঞদের অভিমত

লাহোরভিত্তিক শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার সৈয়দা আমিনা গিলানি বিশ্বাস করেন যে আরব রাষ্ট্রগুলোর সাথে সম্পর্ক রাখা পাকিস্তানের জন্য ভালো। তবে এর মূল্যও আছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতিতে মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধের কথাটি দীর্ঘ সময় ধরে রয়েছে। কিন্তু কাশ্মীর ইস্যুতে এই মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধ কাজে আসেনি। আরব বিশ্ব ভারতের অধিকৃত কাশ্মীরের ওপর পরিচালিত নৃশংসতার নিন্দা করেনি বরং নরেন্দ্র মোদিকেই পুরস্কৃত করেছে।

তিনি বলেন, এক দিক থেকে এটি ভালোই হয়েছে। আদর্শগত মুখোশ খুলে যাওয়ায় বাস্তব অবস্থা সবার সামনে চলে এসেছে। এতে খারাপ লাগলেও পাকিস্তান তার অবস্থান পুনঃনির্ধারণ করার সুযোগ পাবে। পাকিস্তান এখন বাস্তবতার আলোকে আরো ভালোভাবে তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে।

এখন পাকিস্তানের কী করা উচিত, এমন প্রশ্নের জবাবে গিলানি বলেন, পাকিস্তানের উচিত হবে বিচক্ষণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। তিনি বলেন, পাকিস্তানকে তার পররাষ্ট্রবিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গি নতুন করে বিন্যস্ত করতে হবে। তাকে তার সামরিক ও পররাষ্ট্রনীতির আলোকে আরব বিশ্বের সাথে তার অবস্থান পুনঃমূল্যায়ন করতে হবে।

তিনি বলেন, কাশ্মীরী স্বার্থের প্রতি আরব বিশ্বাসঘাতকতা পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি যথার্থভাবে নির্ধারণ করার সুযোগ এন দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.