সামরিক ও কৌশলগত সহযোগিতা বাড়ালো তুরস্ক ও পাকিস্তান

আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতি তুরস্ক ও পাকিস্তানকে আরও গভীর মিত্রতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পাকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমরাস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে আঙ্কারা। একই সাথে আরও বড় ধরনের অর্থনৈতিক বিনিময়ের কথাও ভাবছে দুই দেশ। আম্মান-ভিত্তিক আল বাওয়াবা নিউজে গত জুন ২৩ রোববার প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে এ কথা বলা হয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুরস্ক ও পাকিস্তান প্রায় ৬০টি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং ২০০৩ সালে গঠিত তাদের সামরিক কনসালটেশান গ্রুপকে উচ্চ পর্যায়ের সহযোগিতা কাউন্সিলে উন্নীত করা হয়েছে। চীনের পর তুরস্ক পাকিস্তানের দ্বিতীয়  বৃহত্তম সমরাস্ত্র সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে। বৃহৎ বেশ কিছু উন্নয়ন অগ্রগতির ফলেই দুই দেশের সম্পর্কের এই উন্নতি হয়েছে।
ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক সাবিনা সিদ্দিকী আল বাওয়াবাতে লিখেছেন, “আঞ্চলিক ভূ রাজনৈতিক চেহারার অবনতি হচ্ছে ক্রমাগত এবং সিরিয়ান গৃহযুদ্ধ এবং আরব বিশ্বে তুরস্ক ও কাতারের মধ্যে সঙ্ঘাতের কারণে সীমান্তে নতুন ঝুঁকির মোকাবেলা করতে হচ্ছে তুরস্ককে। দ্বিতীয়ত, বিগত কয়েক বছর ধরে তুরস্ক ও পাকিস্তান উভয়ের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক মোটেই ভালো যাচ্ছে না”।
সিদ্দিকীর মতে, সিরিয়া এবং তুরস্কের সম্ভাব্য এস-৪০০ চুক্তি নিয়ে ওয়াশিংটনের সাথে আঙ্কারার মতভেদ তৈরি হয়েছে। আর আফগানিস্তানে অস্থিতিশীল যুদ্ধের কারণে পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
তাছাড়া আসন্ন তুরস্ক-পাকিস্তান-আফগানিস্তান সম্মেলনে আফগানিস্তানের সমস্যা সমাধানে আঙ্কারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে। তাছাড়া তুরস্কের সাথে ইউরোপিয় ইউনিয়নের সমস্যাসঙ্কুল সম্পর্কের কারণে বাইরে বন্ধুর সংখ্যা আরও বাড়ানোর চেষ্টা করবে আঙ্কারা।
সিদ্দিকী বলেছেন, “কোন পক্ষ না নিয়ে এক ধরনের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার মাধ্যমে আঙ্কারা তাদের পররাষ্ট্র নীতির মধ্যে একটা ভারসাম্য রক্ষা করেছে এবং পাকিস্তানের সাথে সামরিক সম্পর্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে এশিয়াতে তাদের শক্তি বাড়বে, বিশেষ করে ইউরোপিয় ইউনিয়ন (ইইউ) যখন নতুন পথে চলার কথা ভাবছে”।
সিদ্দিকীর মতে, তুরস্ক নিজেকে ইসলামাবাদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মিত্র হিসেবে তুলে ধরেছে। পাকিস্তান যখন নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার্স গ্রুপে যোগ দেয়ার চেষ্টা করে বা ফিনান্সিয়াল অ্যাকশান টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ) যখন পাকিস্তানকে গ্রে লিস্টভুক্ত করেছিল, তখন একমাত্র দেশ হিসেবে পাকিস্তানকে সমর্থন দেয় তুরস্ক।
সিদ্দিকী লিখেছেন, তুরস্কের সামরিক বাহিনী তাদের তিন বাহিনী থেকে আঙ্কারার পাকিস্তানী দূতাবাসে অ্যাটামে নিযুক্ত করেছে। তুরস্ক পাকিস্তানী বিমান বাহিনীর এফ-১৬ জঙ্গি বিমান আপগ্রেড করার ব্যাপারেও সহায়তা করেছে।
২০১৮ সালে ইসলামাবাদ আঙ্কারার কাছ থেকে চারটি মিলজেম আদা কর্ভেট এবং ৩০টি তুর্কী এটিএকে হেলিকপ্টার কিনে। কর্ভেট বিক্রির বিষয়টি তুরস্কের সামরিক বিক্রির ইতিহাসে সবচেয়ে বৃহত্তম রফতানি।
বিশ্লেষক ও পাকিস্তানী বিমান বাহিনীর সাবেক পাইলট কায়সার তুফায়েল গত বছর বলেছিলেন যে, তুরস্ক ও পাকিস্তান শিগগিরই একসাথে মিলে যৌথভাবে নিজস্ব জেএফ-১৭ জঙ্গি বিমান তৈরি করতে পারে। এর পর তারা স্টেলথ ফাইটার বিমান তৈরির দিকে যেতে পারে।
সিদ্দিকী বলেন, ড্রোন তৈরির ব্যাপারে দুই দেশ এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। অন্যদিকে এপ্রিলে তুরস্ক ও পাকিস্তানী সেনারা উজবেকিস্তানে উজবেক বাহিনীর সাথে যৌথ সন্ত্রাস বিরোধী মহড়ায় অংশ নেয়। গত এক দশকে পাকিস্তানের প্রায় ১৫০০ সামরিক কর্মকর্তা তুরস্কে প্রশিক্ষণ নিয়েছে।
দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্কও আরও জোরদার হওয়ার সম্ভাবনা দেখছে পাচ্ছেন সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, “গত বছর এপ্রিলে ইস্তাম্বুল-তেহরান-ইসলামাবাদের মধ্যে সরাসরি বাণিজ্য করিডোরের উদ্বোধন করা হয়। এই রুটটি ইরান, মধ্য এশিয়া, তুরস্ক ও ইউরোপকে যুক্ত করবে, যেটার বাণিজ্য সম্ভাবনা অপরিসীম”।

No comments

Powered by Blogger.