মার মুখে গন্ধ, সংক্রমণ থাকায় ঠাঁই হলো না সন্তানের কাছে

মায়ের মুখে ইনফেকশন, দুর্গন্ধ। এ জন্য মাকে এক সন্তান ফেলে এসেছেন বৃদ্ধনিবাসে। না, ওই সন্তান অশিক্ষিত কেউ নন। তিনি একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। ফলে শ্যামালা (৪৭) নামের ওই মা এখন একাকী বসবাস করেন বৃদ্ধনিবাসে। এ ঘটনাটি ভারতের ব্যাঙ্গালোরের। সেখানে ভারতীনগরে নিজেদের বাসিতে একমাত্র ছেলে বিকাশ ও পুত্রবধুকে সঙ্গে নিয়ে বসবাস করছিলেন শ্যামালা। দাঁতে প্রচন্ড ব্যথা নিয়ে এ বছর জানুয়ারিতে তিনি ভর্তি হন একটি বেসরকারি হাসপাতালে।
সেখানে চিকিৎসকরা তার দাঁত তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। অপারেশন হলো। এরপর তার দাঁতে শুরু হলো সংক্রমণ বা ইনফেকশন। ফুলে যেতে থাকে দাঁত, মুখ। ফলে তার চোয়ালে বড় বড় আকারে পুঁজভরা গোটার মতো বের হতে শুরু করে। এ থেকে ভয়াবহ এক দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ব্যাস তার সঙ্গে অসৌজন্যমুলক আচরণ করু করেন বিকাশ ও তার স্ত্রী। এমন কি তার সঙ্গে কথা বলা পর্যন্ত বন্ধ করে দেন তারা। এক সময় মা শ্যামালাকে বলেন বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে। কারণ, তার মুখের দুর্গন্ধে তাদের দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। তাছাড়া বাড়িতে আত্মীয়রা এলে তারা আরো বেশি বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন।
এমন অবস্থায় অসহায় হয়ে পড়েন শ্যামালা। তিনি ব্যাঙ্গালোর সিটি পুলিশের হেলপলাইন এবং কাউন্সেলিং সেন্টার পারিহার-এ যোগাযোগ করেন এবং নিজের দুর্দশার কথা জানান। বিকাশ ও তার পরিবারের সদস্যদের ডেকে নিলেন পারিহারের সমন্বয়কারী রানী শেঠী। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হলেন। কারণ, শ্যামালার বিষয়ে তারা মন নরম করতে অস্বীকৃতি জানালেন। শ্যামালাও বাড়ি ফিরতে আগ্রহ দেখান নি। ফলে তিনি বিকল্প কোনো একটি ব্যবস্থা করে দিতে অনুরোধ করেন।  রানী শেঠী বলেন, শ্যামালা দাঁতের ব্যথায় কুঁকড়ে যাচ্ছিলেন। আমরা তাকে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিই। মনে করি, তিনি সেখানে মেডিকেল সাপোর্ট পাবেন। কিন্তু সেখানে আগে থেকে যারা অবস্থান করছিলেন তাদেরও নানা অভিযোগ। তারা বলতে থাকেন, শ্যামালা সেখানে থাকলে তারাও সংক্রমিত হবেন। এ ছাড়া দুর্গন্ধ তো আছেই।
কোথাও ঠাঁই খুঁজে না পেয়ে শ্যামালা আবার নারীদের হেল্পলাইনের সহায়তা কেন্দ্রে ফিরে যান। এ সময় রানী শেঠী ভারতীনগর পুলিশের সহায়তা নেন। ফলে পুলিশ খুঁজে বের করে বিকাশকে। তাকে নিয়ে যায় পুলিশ স্টেশনে। তাকে মায়ের বিষয়ে কড়া ভাসায় সতর্ক করা হয়। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন মার ভালমতো দেখভাল করবেন। তবে এক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত জুড়ে দেন বিকাশ। তার মধ্যে অন্যতম- তার মা মাসিক পেনশন হিসেবে যে অর্থ পান তা তার হাতে তুলে দিতে হবে। ছেলের এমন শর্তে রাজি হন নি শ্যামালা। তিনি উল্টো পুলিশের সহায়তা চান। তারা তাকে নিয়ে যায় একটি বৃদ্ধনিবাসে। বর্তমানে সেখানেই অবস্থান করছেন শ্যামালা। ভারতীনগর পুলিশ ইন্সপেক্টর রমেশ জি বলেছেন, তিনি কয়েক দফায় বিকাশকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কোনো কাজে আসে নি।

No comments

Powered by Blogger.