দুর্নীতির অর্থ কী কবর বা শ্মশানে নিয়ে যাবেন? -রাজউক কর্মচারীদের মন্ত্রীর কড়া বার্তা

দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ আপনাদের কত দরকার? এসব অর্থ কি কবর বা শ্মশানে নিয়ে যেতে পারবেন। জনগণ কিন্তু আপনাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে আছে। আশা করি বাইরে চলাফেরা করলে বিষয়টি আপনারা অনুধাবন করতে পারবেন। গতকাল বনানীর ১৭ নম্বর রোডের এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এবং ঢাকা শহরের বিদ্যমান ভবনগুলোর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে করণীয় বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়ে রাজউক অডিটরিয়ামে এক দিকনির্দেশনামূলক সভায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ.ম. রেজাউল করিম কর্মকর্তা- কর্মচারীদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন। গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী রেজাউল করিম বলেন, টেলিভিশন টকশোতে গেলে আপনাদের দুর্নীতি ও অনিয়মের কথা আমাকে বার বার শুনতে হয়। তখন বলা হয়, রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতির কারণে প্রতিষ্ঠানটি ডুবতে বসেছে। আমি তাদের এ কথার প্রতিবাদ জানাই। বলি, রাজউকের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী দুর্নীতিগ্রস্ত নয়।
তাদের মধ্যে ভালো কর্মকর্তা-কর্মচারীও রয়েছে। তারাই প্রতিষ্ঠানটিকে ধরে রেখেছে। তাদেরকে বুঝানোর পর আমার কথায় সায় দেন।
গণপূর্তমন্ত্রীর দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যের আগে ইমারত শাখার বিভিন্ন সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে কথা বলেন অথরাইজড অফিসার সেগুফতা শারমীন ও আশরাফুল ইসলাম, সহকারী অথরাইজড অফিসার তামান্না হক, ইমারত পরিদর্শক ইসমাঈল প্রমুখ। তারা বলেন, নানা সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়। গাড়িসহ বিভিন্ন লজিস্টিক সাপোর্ট আমরা পাই না। এ কারণে সাইট ভিজিট করতে আমাদের নানা সমস্যা পোহাতে হয়। কষ্ট করে কাজ করলেও আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। আদতে আমরা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই। দিকনির্দেশনামূলক সভায় অথরাইজড অফিসার আশরাফের দুর্নীতি নিয়ে কথা উঠে। এর বিপরীতে আশরাফ জানান, একটি সাইনবোর্ডসর্বস্ব পত্রিকার সাংবাদিকের কাজ করে দেইনি বলে আমার বিরুদ্ধে আবোল তাবোল লিখেছে। ওই রিপোর্টে আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা সঠিক নয়। গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, আপনারা ডেভিয়েশনকৃত ভবনে নোটিশ দিয়ে তা আর মনিটরিং করেন না।
অনেকে বলেন, নোটিশ দেয়ার পর আপনারা ম্যানেজ হয়ে যান। অথচ সামান্য ডেভিয়েশন নিয়ে তোলপাড় শুরু করে দেন। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হবে। দিকনির্দেশনামূলক সভার পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম। তিনি বলেন, রাজধানীর সব বহুতল ভবনের সার্বিক তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে। এজন্য সোমবার (আজ) থেকে ২৪টি টিম অভিযান চালাবে রাজধানীর ভবনগুলোতে। বিল্ডিং নির্মাণ বিষয়ে প্রতিদিন সব ধরনের রিপোর্ট রাজউককে মনিটরিং করতে হবে।
এ ছাড়া এফ আর টাওয়ারের সার্বিক বিষয়ে পর্যবেক্ষণ কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। রাজউককে ঢেলে সাজানো হবে। প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে রাজউকের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সাহাদাত হোসেন, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. রাশিদুল ইসলাম, স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, আমাদের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট হওয়ার পর আমরা এটি জনসম্মুখে জাতীয় পত্রিকা ও টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন আকারে দরকার হয় প্রকাশ করবো। কারণ দেশের মানুষের জানা দরকার অর্থলোভী মানুষরূপী যারা এভাবে অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ করে জানমালের নিরাপত্তা রক্ষা করেনি তাদের চেহারা দেশবাসীর দেখা উচিত। তিনি বলেন, যেসব ভবনে পরিকল্পনা নকশা অনুযায়ী করা হয়নি সেসব ভবনের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। নিয়মের বাইরে যেসব থাকবে সেগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একই সঙ্গে ১৯৯৬ থেকে ২০০৮-এর আগের সময়ের অবস্থায় অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা বা গ্যারেজ রাখার কোনো বিধান ছিল না, সেসব ভবনের জন্য নতুন করে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।
গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, বিল্ডিংয়ের কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে আমরা শুধুমাত্র বিল্ডিং মালিক এবং ডেভেলপার কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতাম আগে। কিন্তু এখন আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবো। তিনি বলেন, প্রতিটি ভবন যারা ব্যবহার করবেন তারা ভাড়াটিয়া হিসেবে বা সেখানকার মানুষ হিসেবে আগে দেখে নিতে হবে যে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা আছে কিনা। অতিরিক্ত সিঁড়ি লাগানো আছে কিনা বা সবকিছু মেনে বিল্ডিং করা হয়েছে কিনা, যদি এসব নিয়ম মেনে না করা হয় তাহলে আপনি সেই ভবনটি ব্যবহার করবেন না। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শ. ম. রেজাউল করিম বলেন, আদালত নতুনভাবে সময় না দিলে নির্দিষ্ট সময় পরে বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলা হবে। এ ছাড়া পহেলা মে থেকে রাজউকের সব সেবা ডিজিটালাইজেশন হবে। এর মাধ্যমে জনগণের ভোগান্তি দূর হবে এবং জনবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।

No comments

Powered by Blogger.