খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে গুঞ্জন, 'বিএনপি কিছুই জানে না'

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন- রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন গুঞ্জনের ব্যাপারে তার দল কিছুই জানে না। বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটিই জানিয়েছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন মিডিয়ায় সূত্রবিহীন একটি খবর ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে যে, খালেদা জিয়া প্যারোলে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন, এমনকি তারা তারিখও বলে দিচ্ছেন! কিন্তু বাস্তবতা হলো-বিএনপির কোনো সূত্র এমন কিছুই জানে না।’
তিনি বলেন, ‘‌‌‌সরকারপন্থী কয়েকটি মিডিয়া প্রতিদিন মনগড়া প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে। এই প্রোপাগান্ডাগুলোর সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও জড়িত বলে ব্যাপক গুঞ্জন আছে। প্যারোল নিয়ে সরকারি মিশন সাকসেসফুল করার জন্য ক্ষমতাসীনরা চতুর রাজনীতিতে লিপ্ত রয়েছে।’
খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে রিজভী বলেন, তার শারীরিক অবস্থা খুবই বিপর্যস্ত। হাত-পা নাড়তে পারছেন না। আর্থ্রাইটিসের ব্যাথার কারণে পা নাড়াতে পারছেন না। তাকে সুচিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দেশনেত্রীকে নিয়ে মাইনাস ফরমুলা বন্ধ করুন। ওয়ান ইলেভেনের সরকার মাইনাস-টু ফরমুলা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল। কিন্তু জনগণের প্রাণপ্রিয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপোষহীন কঠোর ভূমিকায় তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। তারা সেদিন সফল হলে আজ আপনি প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন না।’
রিজভী বলেন, ‘প্যারোলের নামে মাইনাস তত্ত্বের অশুভ চক্রান্ত করে লাভ হবে না। তার জামিনে  বাধা সৃষ্টি করবেন  না। আদালতে হস্তক্ষেপ বন্ধ করুন। আদালতের ওপর থেকে অবৈধ হস্তক্ষেপ বন্ধ হলেই বিএনপি চেয়ারপারসন আইনি প্রক্রিয়ায়ই  জামিনে বেরিয়ে আসবেন।
ওদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন আজ (বৃস্পতিবার) এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লন্ডনে যাওয়ার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে কোনো তথ্য নেই।
সম্প্রতি কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়, প্যারোলে মুক্তি নিয়ে লন্ডন যেতে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এ বিষয়ে ব্রিটিশ দূতাবাস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কিছু জানিয়েছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে কিছু জানি না।’
এর আগে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ‘সুনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে আবেদন করলে খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি সরকার বিবেচনা করবে।’
এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির আবেদন জানাইনি, আমরা চাই, তিনি জামিনে মুক্তি পান।’
ফখরুল স্পষ্ট করেই বলেছেন, অসুস্থ বেগম জিয়ার প্যারোলের বিষয়টি তার নিজস্ব এবং তার পরিবারের বিবেচনার বিষয়। এটা দলের কোন বিষয় নয়।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালত পাঁচ বছর সাজা দেন খালেদা জিয়াকে। এরপর ওই রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন তার আইনজীবীরা। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধির আবেদন (রিভিশন) করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের আবেদন গ্রহণ করে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়। হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা, যা শুনানির জন্য অপেক্ষমান রয়েছে।
এ ছাড়া, গত ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা বিচারিক আদালত খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সাজা দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন তার আইনজীবীরা। এটিও শুনানির জন্য অপেক্ষমান রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.