উত্তর কোরিয়ার সরকারে বড় রদবদল

উত্তর কোরিয়ার সরকারে অপ্রত্যাশিতভাবে বড় ধরণের রদবদল এসেছে। ঘোষণা করা হয়েছে নতুন রাষ্ট্রপ্রধানের নাম। একই সঙ্গে কিম জং উন নিজেও নতুন পদবী গ্রহণ করেছেন। তা হলো, ‘কোরিয়ান জনগণের সর্বোচ্চ প্রতিনিধি’ (সুপ্রিম রিপ্রেজেন্টেটিভ অব অল দ্য কোরিয়ান পিপল)। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বাহ্যিক দৃষ্টিতে এটি ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ মনে হলেও মূলত এর মধ্য দিয়ে কিম জং উন তার ক্ষমতা আরো সুসংহত করেছেন।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ’র উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার উত্তর কোরিয়ার রাবার স্ট্যাম্প পার্লামেন্টের এক অধিবেশনে প্রত্যাশিতভাবে আবারো রাষ্ট্র পরিচালনা পরিষদ স্টেট অ্যাফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন কিম জং উন। তবে প্রথমবারের মতো তার পদবী হিসেবে ‘কোরিয়ান জনগণের সর্বোচ্চ প্রতিনিধি’ ব্যবহার করা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে এক ডিক্রির মাধ্যমে এই পদবী কার্যকর করা হলেও এবারই প্রথম তা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ব্যবহার করা হলো।
তবে সরকারে আনা এসব পরিবর্তন সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করা হবে কিনা তা পরিস্কার না।
পিপলস অ্যাসেম্বলি অব নর্থ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পেয়েছেন চো রিয়ং হায়। তিনি কিম জং উনের ঘনিষ্ঠ সহচর কিম ইয়ং ন্যামের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। এখন থেকে চো রিয়ং হায় সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে বিবেচিত হবেন। একইসঙ্গে বিভিন্ন কূটনৈতিক কার্যক্রমে দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাষ্ট্রপ্রধানের এই দায়িত্ব আলঙ্কারিক মাত্র। মূল ক্ষমতা কিম জং উনের হাতেই থাকবে। পূর্বের প্রেসিডেন্ট কিম ইয়ং ন্যাম উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীন পরিবারের দীর্ঘদিনের সহচর। ১৯৯৮ সালে তার জন্যই এই প্রেসিডেন্টের পদ তৈরি করা হয়েছিল।
নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত চো সাম্প্রতিক সময়ে দৃশ্যপটে এসেছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের অক্টোবরে তাকে পিয়ংইয়ংয়ের ক্ষমতাধর সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনে পদোন্নতি দেয়া হয়। এর পরেই মূলত উত্তর কোরিয়ার সরকারের ওপর তার প্রভাব বাড়তে থাকে। ক্রমেই খুবই ঘনিষ্ট হয়ে ওঠেন কিম জং উনের। তিনি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া তিন উত্তর কোরীয় কর্মকর্তার একজন। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতা প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা আরো কয়েকজন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে কিম জং উন তার উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া ক্ষমতা আরো সুসংহত করলেন। ওয়াশিংটন ভিত্তিক থিংক ট্যাংক স্টিমসন সেন্টারের উত্তর কোরিয়ার বিশ্লেষক মাইকেল ম্যাডেন বলেন, সরকারের পালাবদল ও কিম জং উনের ক্ষমতা সুসংহত করার কাজ এখন পুরোপুরি সম্পন্ন হলো। কয়েক বছরের মধ্যে এটা সম্ভবত সবচেয়ে বড় সংস্কার কার্যক্রম।
গত বছরের শুরু থেকে কিম জং উন দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। দফায় দফায় যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়া কিম জং উনের সেই প্রচেষ্টারই অংশ।
এদিকে, চেয়ারম্যান হিসেবে পুন:নির্বাচিত হওয়ায় কিম জং উনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, চীন উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বকে মূল্যায়ন করে এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরো এগিয়ে নিতে চায়।

No comments

Powered by Blogger.