বাংলাদেশের সহায়তায় ত্রিপুরাকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বার হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়

বাংলাদেশের সহায়তা নিয়ে, বাংলাদেশের বন্দর ও অন্যান্য অবকাঠামো ব্যবহার করে ত্রিপুরাকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বার হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শনিবার তিনি আগরতলায় স্বামী বিবেকানন্দ স্টেডিয়ামে বক্তব্য রাখেন। সেখানে তিনি বলেন, ত্রিপুরায় যে বিপুল উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া হয়েছে তার মধ্য দিয়ে এটি হবে ভারতের সবচেয়ে সেরা রাজ্য। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি।
এতে আরো বলা হয়, আসাম ও মিজোরামের সঙ্গে ত্রিপুরার রয়েছে ১৬৫ কিলোমিটার সীমান্ত। এ ছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে আছে ৮৫৬ কিলোমিটার সীমান্ত। ওই রাজ্যে নরেন্দ্র মোদি ২৫ মিনিট হিন্দিতে বক্তব্য রাখেন। তবে একবারও তিনি বহুল বিতর্কিত নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল নিয়ে কথা বলেন নি।
এই বিলকে কেন্দ্র করে ত্রিপুরা সহ ভারতের পুরো উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। হয়তো সে কারণে নরেন্দ্র মোদি ওই বিষয়ে কোনোই মন্তব্য করেন নি। ওই বিলের বিরোধিতা করে শনিবার নরেন্দ্র মোদির সমাবেশ বর্জন করেছেন রাজ্যের সিপিআই-এম দলের তিনজন এমপি এবং ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফেডারেশন (টিএসএফ)। এদিন মোদিকে একই ইস্যুতে কালো পতাকা প্রদর্শন করেছে বিরোধী কংগ্রেস পার্টি। তারা এদিন কালো বেলুনও অবমুক্ত করে প্রতিবাদ স্বরূপ।
তবে কংগ্রেস পার্টির কড়া সমালোচনা করেছেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি কংগ্রেসের নাম উল্লেখ না করে বলেন, যে দল কেন্দ্রীয় সরকারে ছিল ৫৫ বছরের বেশি তারা এখন একটি ‘মজবুর’ সরকার গঠনে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তবে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পর ভারতীয় জনতা পার্টি একটি মজবুত সরকার গঠন করবে। বিরোধী দলকে উদ্দেশ্য করে নরেন্দ্র মোদি আরো বলেন, বিভিন্ন ইস্যুতে নজর দেয়ার পরিবর্তে তারা শুধু মোদিকে গালি দিচ্ছে। এটা যেন আমাকে গালি বা ঠাট্টা করার এক অলিম্পিক গেম। বিমানবন্দর থেকে আগরতলা শহরে আসার পথে আমি উৎসবমুখর মানুষের মুখগুলো দেখতে পেয়েছি। ২৫ বছর পরে সাবেক সরকারের শাসনের খড়গ থেকে এখন মুক্ত। এ সময়ও তিনি সাবেক কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া-মার্কসিস্ট নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকারের নাম উল্লেখ করেন নি।
নরেন্দ মোদি বলেন, রাজ্যে বহু বড় বড় প্রকল্প ও স্মিমের জন্য আগেই প্রচুর অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিগত সরকার এই রাজ্যের জন্য তহবিল সরিয়ে নিয়েছিল। তারা শুধু জনগণের সঙ্গে, বিশেষ করে গরিব ও কর্মজীবী শ্রেণির মানুষের সঙ্গে রাজনীতির খেলা খেলেছে। আগে শুধু একটি দলের সঙ্গে যুক্ত মানুষরাই সুবিধা পেয়েছেন। কিন্তু এখনকার সরকার সব মানুষের সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে এবং তা খুব স্বচ্ছতার সঙ্গে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার সরকারের গৃহীত কল্যাণকর সব পদক্ষেপ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি ত্রিপুরা ট্রাইবাল এরিয়াস অটোনমাস ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলকে শক্তিশালী করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে উপজাতি অধ্যুষিত এলাকাগুলোকে অধিকতর শায়ত্তশাসনের প্রত্যয় ঘোষণা করা হয়।
র‌্যালিতে অংশগ্রহণের আগে নরেন্দ্র মোদি ত্রিপুরার দক্ষিণাঞ্চলে ২৩.৩২ কিলোমিটার রেলওয়ে ট্র্যাক জাতির সামনে তুলে ধরেন। তিনি আগরতলার কাছে নরসিংগড়ে ত্রিপুরা ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির একটি নতুন ভবন উদ্বোধন করেন। এদিন তিনি ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের লেখা হিন্দি ও বাংলা ভাষায় লেখা একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। ত্রিপুরার শেষ রাজা মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক্যর ওপর এই বইটি লেখা হয়েছে।
বিপ্লব কুমার দেব তার ভাষণে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর জন্য অন্তর্বর্তী শতকরা ২১ ভাগ বাজেট বৃদ্ধির জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ধন্যবাদ জানান।

No comments

Powered by Blogger.