নারায়ণগঞ্জে কলেজছাত্রীদের গায়ে কালি মেখে দিলো শ্রমিকরা

পরিবহন ধর্মঘটের নামে ‘কালি সন্ত্রাস’ থেকে রক্ষা পায়নি নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রীরা। কলেজ বাসে হামলা চালিয়ে পরিবহন শ্রমিকরা ছাত্রীদের গায়ে কালি (পোড়া মবিল) লেপন করেছে। ভাঙচুর করেছে বাসের গ্লাসও। এসময় ছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ন্যক্কারজনক ঘটনাটি ঘটেছে রোববার দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সাইনবোর্ড এলাকায় একটি পাম্পের কাছে। পরে বাসটি সেখানে থামিয়ে দিয়ে আর যেতে দেয়নি।
ছাত্রীরা জানায়, রোববার দ্বাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষে ছাত্রীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এক সঙ্গে ৩৮ জন ছাত্রীকে কলেজ বাসযোগে পাঠানো হয়। দুপুর ১২টার দিকে ছাত্রীদের বহনকারী বাসটি সাইনবোর্ড এলাকা পার হওয়ার সময় হঠাৎ শ্রমিকরা থামিয়ে দেয়। এবং বাসের চালক মজিবর ও হেলপার জহিরুলকে বাস থেকে নামিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে পোড়া মবিল মেখে দেয় উচ্ছৃঙ্খল পরিবহন শ্রমিকরা।
এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে কয়েকজন ছাত্রীকেও কালি লেপে দেন শ্রমিকরা। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করেন। পরে বাসের কয়েকটি গ্লাস ভাঙচুর করে বাস থেকে সবাইকে নামিয়ে দেয়া হয়।
বাসটির চালক মজিবর রহমান বলেন, বাসটিতে ৩৮ জন ছাত্রী ছিল। তারা সবাই সরকারি মহিলা কলেজে অধ্যয়নরত। ছাত্রী বহনকারী বাসটি সাইনবোর্ড এলাকায় এলেই হামলা করে বাসের গ্লাস ভাঙচুর করে শ্রমিকরা। পরে ছাত্রীদের গায়েও কালি মাখিয়ে দেয়। নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ বেদৌরা বিনতে হাবিবা বলেন, আমাদের বাসের চালক মজিবর আমাকে ঘটনাটি জানিয়েছে। পরিবহন শ্রমিকরা বাসের কয়েকটি গ্লাস ভাঙচুর করেছে। এবং ছাত্রীদের গায়েও কালি দিয়েছে বলে জানালো। বাসটি ওখানেই রাখা হয়েছে, কলেজে ফিরলে বিস্তারিত জানতে পারবো।
এদিকে মহিলা কলেজের গাড়িতে হামলা ও ছাত্রীদের গায়ে কালি লেপনের ঘটনায় সর্বত্র নিন্দার ঝড় বইছে। এক ছাত্রীর কলেজ ড্রেসে কালির ছবি সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তার ছবির নিচে নিন্দা আর ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্তব্য করছে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা।
সিদ্ধিরগঞ্জে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শ্রমিকদের: এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জ শিমরাইল মোড়ে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়কে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে পরিবহন শ্রমিকরা। এসময় তারা ৮ দফা দাবি আদায়ে বিক্ষোভ করে। তবে কর্মসূচি চলাকালে উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিকদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা। গাড়ি থামিয়ে গালমন্দ করে চালকের মুখে পোড়া মবিল মেখে দিয়েছে তারা। অনেকে আবার পরিবহন শ্রমিকদের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে শিমরাইল মোড় পরিবহন শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় বিপাকে পড়ে হাজার হাজার যাত্রী। শ্রমিকরা রাস্তায় সব ধরনের পরিবহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে।
এ থেকে রেহাই পায়নি এম্বুলেন্সও। ছোট যানের মধ্যে রিকশা, মোটরসাইকেল, ইজিবাইকও বাধার মুখে পড়েছে। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে গণপরিবহন, বিশেষ করে বাসের অপেক্ষায় সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় হাজারো যাত্রীকে অপেক্ষা করতে দেখা  গেছে। বিভিন্ন এলাকায় অফিসগামী যাত্রীদের গাড়ির অপেক্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। অনেকে নিরুপায় হয়ে পায়ে হেটে গন্তব্যে রওনা দিয়েছে। কেউ বেশি ভাড়ায় রিকশা অথবা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যাচ্ছেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড থেকে কাঁচপুর মোড় পর্যন্ত প্রায় ১০টি স্পটে অবস্থান নেয় পরিবহন শ্রমিকরা। তারা কোনরকম যানবাহন চলাচল করতে  দেয়নি। অ্যাম্বুলেন্সও চেক করে তারা।
তবে রোগী থাকলে তারা অ্যাম্বুলেন্স ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু রোগী না থাকলে অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখে। এমনকি মোটরসাইকেল, রিকশা-ভ্যানগাড়ি দিয়ে চলাচল করতে  দেয়নি। শ্রমিকরা মোটরসাইকেল, রিকশা, ভ্যানসহ যেকোন ধরনের পরিবহন দেখলেই ময়লা কাদা বা আলকাতরা ও পোড়া মবিল লাগিয়ে দিচ্ছে। এমনকি সাংবাদিকদেরও কোনরকম ছবি তুলতে দেয়া হয়নি। এক পর্যায়ে ছবি তুলতে গেলে কয়েকজন পরিবহন শ্রমিক এক সাংবাদিকের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে।
প্রধানমন্ত্রীর পিএসের গাড়িও আটকে দিয়েছে শ্রমিকরা: গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শিমরাইল মোড়ে প্রধানমন্ত্রীর পিএস সাজ্জাদুল হাসানের গাড়ি আটকে দেয় পরিবহন শ্রমিকরা। প্রায় আধা ঘণ্টা পর নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের টিআই (প্রশাসন) মোল্লা তাসলিম হোসেন শ্রমিকদের  সঙ্গে আলোচনা করে গাড়িটি ছাড়াতে সক্ষম হন।  শুধু তাই নয়, পুলিশের গাড়িও আটকে দেয় পরিবহন শ্রমিকরা।

No comments

Powered by Blogger.