ট্যাক্সির নতুন ফরম্যাট ‘রাইড শেয়ার’! by চৌধুরী আকবর হোসেন

সাশ্রয়ী মূল্যে যাত্রীসেবা ও সড়কে যানবাহনের চাপ কমানোর ধারণা থেকে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে রাইড শেয়ারিং ব্যবস্থা। তবে ব্যক্তিগত রাইড শেয়ারের পরিবর্তে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার হওয়ায় দেশে এ ব্যবস্থাটি দিনে দিনে ‘ট্যাক্সি সার্ভিসে’ রূপ নিচ্ছে।
ঢাকায় ২০১৬ সালে শুরু হয় মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবার। জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এ সেবাকে বৈধতা দিতে সরকার এ বছর নীতিমালা করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে রাইড শেয়ার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে উবার, পাঠাও, ওভাই, আমার রাইড,সহজ রাইড, স্যাম- শেয়ার এ মোটরসাইকেল, লেটস গো প্যাসেঞ্জার, মুভ, বাহন, ইজিয়ার, ঢাকা রাইডার্স, সেবা, এক্সওয়াইজেড, বিডিক্যাবস, ঢাকা মটো। এরমধ্যে উবার, পাঠাও, ওভাই বেশি পরিচিত।
রাইড শেয়ারের ধারণায় বলা হয়েছে- কোনও ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত গাড়ি বা মোটরসাইকেলে যাত্রাপথে আগ্রহী অন্য ব্যক্তিকে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টিই রাইড শেয়ারিং কার্যক্রম। এরফলে একজনের ব্যক্তিগত গাড়িতে অন্যজন গন্তব্যে পৌঁছানোয় সড়কে যানবাহনের ওপর চাপ কমতো। সাশ্রয়ী ভাড়া হওয়ায় যাত্রীদেরও খরচ কম হতো। পাশাপাশি যিনি রাইড শেয়ার করছেন তারও বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
তবে দেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো রাইড শেয়ারের কথা বললেও দিন দিন বাড়ছে এর বাণিজ্যিক ব্যবহার। অনেকেই গাড়ি কিনে পরিচালনা করছেন এসব রাইড শেয়ার প্রতিষ্ঠানে। আয়ের সুযোগ হওয়ায় অনেকেই বাইক বা প্রাইভেটকার চালানোর কাজটিকে পেশা হিসেবেই নিয়ে নিয়েছেন। অন্যদিকে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান মোটরসাইকেল কিনতে লোনও দিচ্ছেন। এরমধ্য রাইড শেয়ার প্রতিষ্ঠান ওভাই নিজেরাই মোটরসাইকেল কিনে চালক নিয়োগ দিয়েছে।
ব্যাণিজ্যিকভাবে রাইড শেয়ারের কারণে সিএনজি, রিকশার মতো মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারের রাস্তায় পার্কিং করে যাত্রী খোঁজার পরিমাণও বেড়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন সড়কে ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
রাইড শেয়ারের চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে মোটরবাইক দিয়ে একজন ব্যক্তি দিনে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা আয় করতে পারেন। ফলে অনেকে একাধিক মোটরসাইকেল কিনে চালক নিয়োগ দিয়ে ব্যবসা করছেন। শুধু মোটরসাইকেল নয় গাড়ি কিনেও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। একটি গাড়ি থেকে মাসে গড়ে ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত আয় সম্ভব।
দীর্ঘদিন ধরে উবারে গাড়ি পরিচালনা করে আসা মাহমুদুল হাসান জানান, তার ১১টি গাড়ি বর্তমানে রাইড শেয়ার করছে। তিনি বলেন, ‘প্রথমে একটি গাড়ি দিয়ে শুরু করেছিলাম। এখন ১১টি গাড়ি চলছে। গাড়ি চালকদের বেতন, তেল সব খরচ বাদ দিলে সব মিলিয়ে মাসে ৪ লাখ টাকা আয় হয়।’
মোটরবাইকে রাইড শেয়ার করা সাইফুল ইসলাম পাঠাও এবং উবারের সঙ্গে কাজ করেন। তিনি জানান, শুরুতে অফিসে যাওয়া আসার সময় রাইড শেয়ার করতেন। তবে বর্তমানে তিনি চাকরি ছেড়ে এ কাজকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন।
সাইফুল বলেন, ‘আগে যে চাকরি করতাম সেটাতে সব মিলিয়ে ১৫ হাজার টাকা আয় হতো। এখন মোটরসাইকেল চালিয়ে মাসে ২৫-৩০ হাজার পর্যন্ত আয় হচ্ছে। এজন্য চাকরি ছেড়ে বাইকে রাইড শেয়ার করি।’
সার্ভিস নিয়ে পাঠাও’র হেড অব মার্কেটিং সৈয়দা নাবিলা মাহবুব বলেন, পাঠাওয়ের নিজস্ব কোনও গাড়ি নেই, নেই নিয়োগ প্রাপ্ত কোনও চালক। নিয়ম মেনে যে কেউ রাইড শেয়ার করতে পারবেন। যেহেতু স্থায়ীভাবে কোনও গাড়ি ও চালক নেই তাই পাঠাও পুরোপুরি রাইডার শেয়ার প্ল্যাটফর্ম।
এদিকে রাইড শেয়ারিং প্লাটফর্মের বিকাশে সড়কে বেড়েছে চাপ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মীর রেজাউল আলম বলেন, মানুষের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে সড়কে গাড়ির পরিমাণ বেড়েছে। এরমধ্যে কেউ কেউ নিজের গাড়িতে রাইড শেয়ার করছেন, তেমনি বাণিজ্যিক ব্যবহারও আছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কথা বলেছি। সামনে আরও আলোচনা ও পদেক্ষেপের মাধ্যমে এসবের সমাধান হবে।
বিআরটিএ সচিব মুহাম্মদ শওকত আলী বলেন, এতদিন কোনও নীতিমালা ছিলো না। এখন রাইড শেয়ার নিয়ে একটি নীতিমালা হয়েছে। কেউ যদি নিয়ম না মানে বা অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে বিআরটিএ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।

No comments

Powered by Blogger.