জাপানে বিশ্ব পানি মেলা: পানি বিশুদ্ধ করতে আসছে নানা প্রযুক্তি by দীন ইসলাম

সারা দুনিয়াতে ‘নিরাপদ পানি’ দিতে আসছে নতুন নতুন প্রযুক্তি। বাংলাদেশে যেমন বাড়ি বাড়ি গিয়ে মেশিন দিয়ে ধান ভাঙানো হয়, তেমনি পানি শোধনাগার মেশিন বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পানি বিশুদ্ধ করে দেবে। এটা আর তেমন কোনো কঠিন কাজ নয়। এখন থেকে বাইসাইকেল দিয়েও পানি শোধনাগার মেশিন চালানো যাবে। এ রকম নানা ধরনের পানি শোধনাগার প্রযুক্তির সমারোহ দেখা যাচ্ছে জাপানের টোকিওতে। বিশ্বের বিভিন্ন নামিদামি পানি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান টোকিওতে এসেছে। মূলত বিশুদ্ধ খাবার পানি সংকট এলাকায় এসব প্রযুক্তি খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
টোকিওর বিগ সাইট এক্সিবিশন সেন্টারে ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার এসোসিয়েশনের (আইডব্লিউএ) আয়োজিত বিশ্ব পানি কংগ্রেস ও মেলায় ১০০টির বেশি দেশ থেকে পানি ও পরিবেশ সংক্রান্ত ৫ হাজার ৫০০ পেশাজীবী, প্রযুক্তিবিদ ও উদ্যোক্তা অংশ নিচ্ছেন। মূলত মাটির নিচ দিয়ে নিরাপদ পানি প্রবাহ এবং খাবার পানি বিশুদ্ধকরণ বিষয়ে এই মেলায় বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহারের নানা বিষয় তুলে ধরা হচ্ছে। আইডব্লিউএ’র গণমাধ্যম ব্যবস্থাপক পাওল বেল মানবজমিনকে বলেন, পৃথিবী এখন প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পানি নিয়েও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। বাইসাইকেলে করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রযুক্তি দিয়ে পানি শোধন করে দেয়া যাবে, যাতে করে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ নিরাপদ খাবার পানি পায়। এ ছাড়া বড় বড় মোবাইল মেশিন তথা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গাড়িতে করে নেয়া যায় এমন মেশিন দিয়ে দুর্যোগপূর্ণ এলাকার পানি শোধন করা যাবে।
বেল বলেন, আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন, নগরে মাটির নিচে পানির লাইনও অত্যাধুনিক হচ্ছে। এতে করে মাটির নিচে পানির পাইপলাইন কোনো কারণে ছিদ্র হয়ে গেলে তা জানা যাবে এবং পানির অপচয় রোধ করা যাবে। সেসব প্রযুক্তি আপনার দেশ বাংলাদেশে এখন প্রয়োজন। কারণ আপনারা অনেক উন্নতি করছেন। আমেরিকার হারভে সিউন পানির বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রদর্শনী নিয়ে এই মেলায় এসেছেন। তিনি জানালেন, আমরা নিরাপদ পানির জন্য ১০ ধরনের প্রযুক্তি তৈরি করেছি, যাকে আমরা বলছি- স্মার্ট পানি ব্যবস্থাপনা। এতে আপনার উন্নতমানের পানির পাইপ থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় পানি শোধনাগারেও প্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয়টি রয়েছে। তবে এখনো এসব প্রযুক্তির তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। নিউ ইয়র্কের একটি ছোট্ট এলাকায় আমরা স্মার্ট পানি ব্যবস্থাপনা করে দিয়েছি, খুবই প্রশংসা পেয়েছি। তবে ব্যয় একটু বেশি হওয়ায় অনেক দেশের আগ্রহ থাকলেও আর্থিক দিক বিবেচনা করে নিতে পারছে না। সময়ের ব্যবধানে এসব প্রযুক্তি আরো সাশ্রয়ী হয়ে যাবে।
গতকাল বিগ সাইট ইন্টারন্যাশনাল এক্সিবিশন সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, পানি নিয়ে প্রায় একশ’রও বেশি প্রতিষ্ঠান তাদের প্রযুক্তি প্রদর্শনী করছেন। তাতে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি শোধন করে খাবার উপযোগী করা থেকে শুরু করে শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে নির্গত বর্জ্যপানিও বিশুদ্ধকরণের প্রযুক্তি রয়েছে। এসব প্রযুক্তির প্রসারে কোম্পানিগুলো মেলায় তাদের বিভিন্ন অফার তুলে ধরছেন এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আগত পানি, পরিবেশ ও প্রযুক্তিবিদদের কাছে সেবা বিক্রির প্রস্তাব দিচ্ছেন। আইডব্লিউএ’র ঊর্ধ্বতন গবেষণা কর্মকর্তা বেইথ ফাম মানবজমিনকে বলেন, গ্যাস বা বিদ্যুতে সেবার মতো পানি সেবা নয়। পানির মূল বিষয়টিই হলো বিশুদ্ধ পানি। বিশ্বে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে খাবার পানির সংকট। আফ্রিকার অনেক মানুষ ভয়াবহ খাবার পানি সংকটে আছে। বাংলাদেশে না থাকলেও ভারতের বেশকিছু এলাকায় খাবার পানি সংকট রয়েছে। এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে এবং পানির পুনঃব্যবহার বাড়াতে হবে। বিশেষ করে ভূ-উপরিস্থ তথা নদ-নদী ও পুকুরের পানি খাবারের জন্য ব্যবহার করতে হবে।
বেইথ ফাম বলেন, আমরা এসব মেলা করে নতুন নতুন প্রযুক্তির পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। যাতে করে মানুষ এসব প্রযুক্তি থেকে সুবিধা নিতে পারে। তবে মানুষকে পানি ব্যবহারে আরো সচেতন হতে হবে। আর শিল্পবর্জ্য কোনোভাবেই নদীতে বা পানিতে সরাসরি ফেলা যাবে না। শিল্প থেকে নির্গত বর্জ্য পানিতে ফেলতে হলে তা অবশ্যই শোধন করতে হবে। যে বিষয়টি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো এড়িয়ে চলছে। তার জন্য একসময় এসব দেশকে মূল্য দিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.