বাংলাদেশে বছরে ৫০ হাজার নবজাতকের মৃত্যু, চিকিৎসকের প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশে প্রতি ঘণ্টায় ৬টি নবজাতকের মৃত্যু হচ্ছে। বছরের হিসাবে বাংলাদেশে ৫০ হাজারের বেশি নবজাতকের মৃত্যু হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী শিশু মৃত্যুর প্রবণতা নিয়ে ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিভাগের দেওয়া পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
আন্তর্জাতিক এই চারটি সংস্থা বৃহস্পতিবার একযোগে নিউইয়র্ক, জেনেভা ও ওয়াশিংটন থেকে বিশ্বে শিশুমৃত্যুর হার ও প্রবণতা নিয়ে নতুন প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে বিশ্বে ১৫ বছরের কম বয়সী ৬৩ লাখ শিশুর মৃত্যু হয়। অর্থাৎ প্রতি পাঁচ সেকেন্ডে বিশ্বে একটি শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। এসব মৃত্যু প্রতিরোধ সম্ভব।
ইউনিসেফের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে প্রতি ১ হাজার শিশুর মধ্যে ৩২টি শিশু মারা যায়। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুহার কমাতে পারলেও নবজাতক বা চার সপ্তাহের কম বয়সী শিশুর মৃত্যু উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারছে না।
ইউনিসেফ জানিয়েছে, এক লাখ শিশুর মধ্যে অর্ধেকের কিছু বেশি শিশুর মৃত্যু হচ্ছে বয়স ২৮ দিন পূর্ণ হওয়ার আগে। সে হিসেবে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৫০ হাজারের বেশি নবজাতকের মৃত্যু হচ্ছে। বাংলাদেশে নবজাতক মৃত্যুর প্রধান কারণ জন্মের সময় শ্বাসকষ্ট, সংক্রমণ এবং কম ওজনজনিত জটিলতা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সাইন্স-এর প্রজনন ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাক্তার রওশন আরা রেডিও তেহরানকে বলেন, অল্প বয়সে সন্তান ধারণ, গর্ভাবস্থায় মাকে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্য না দেয়া এবং  বাড়িতে অনিরাপদ পরিবেশে সন্তান জন্ম দানের কারণে বাংলাদেশে অধিক হারে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
তিনি জানান, বাল্য বিবাহ রোধ, গর্ভাবস্থায় মাকে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়ানো, হাসপাতালে বা দক্ষ দাইয়ের সাহায্যে সন্তান প্রসব এবং শিশুকে ছ’মাস পর্যন্ত কেবল বুকের দুধ পান করানোর অভ্যাস করা গেলে শিশু মৃত্যুর এ হার কমানো সম্ভব।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য) মোহাম্মদ শরিফ গণমাধ্যমকে বলেছেন, চলতি মাসে থেকে জাতীয় নবজাতক স্বাস্থ্য কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে জন্মের পর নবজাতকের নাভীতে দেওয়ার জন্য ওষুধ এবং সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ইউনিয়ন পর্যায়ের সেবাকেন্দ্রে  সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি ‘ক্যাঙারু মাদার কেয়ার’ নামের সেবাও দেশব্যাপী বিস্তৃত করা হবে। জন্মের পর নবজাতক ক্যাঙ্গারু ছানাকে মায়ের শরীরের তাপে রেখে বড় করার যে কৌশল স্নেহময়ী ক্যাঙ্গারু মা করে থাকে শিশু চিকিৎসার ক্ষেত্রে তারই নাম দেয়া হয়েছে 'ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার'।

No comments

Powered by Blogger.