নিজ ঘরেই বিশ্বাসঘাতক দেখছেন ট্রাম্প

ঘরের শত্রু বিভীষণ! চোখে-মুখে যেন ঠিক এমনটাই দেখছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজ প্রশাসনের ভেতর থেকেই চাপের মুখে পড়ছেন তিনি। এরইমধ্যে ৫ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক টাইমসে বেনামে একটি উপসম্পাদকীয় লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা। এতে তিনি ট্রাম্পকে একজন অস্থির ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার ব্যবহার শুধু অস্বাভাবিকই নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থী। তার এমন কর্মকাণ্ডের ক্ষতিকর প্রভাব এড়াতে প্রশাসনের অভ্যন্তরে তৎপর রয়েছেন অনেক কর্মকর্তা। তাদেরই একজন এই বেনামি লেখক।
ট্রাম্প, তার আচরণ ও তার প্রেসিডেন্সি নিয়ে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। তবে প্রশাসনের ভেতর থেকে পত্রিকায় বেনামি উপসম্পাদকীয় লেখার মতো পদক্ষেপকে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে। ফলে কে এই নিবন্ধের লেখক, তা খুঁজে বের করতে মরিয়া ট্রাম্প। এরইমধ্যে সম্ভাব্য লেখক হিসেবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস এবং চিফ অব স্টাফ জন কেলির দিকেও আঙুল তুলেছেন কেউ কেউ। তবে এমন আঙুল তুললেই এটা প্রমাণিত হয় না যে, এরাই নিবন্ধটি লিখেছেন।
জিম ম্যাটিস এবং জন কেলির কেউই এখনও নিবন্ধটি নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। তবে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও আগ বাড়িয়েই বলেছেন, পত্রিকায় প্রকাশিত ওই নিবন্ধ তারা লেখেননি। তবে এটি যিনিই লিখে থাকুন তাতে ট্রাম্পের ইমেজ যে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সেটা বলাই বাহুল্য। এর আগে ওয়াশিংটন পোস্টের খ্যাতনামা সাংবাদিক বব উডওয়ার্ডের নতুন বই, ‘ফিয়ার, ট্রাম্প ইন দ্য হোয়াইট হাউস’ নিয়ে আরেক দফায় বিপাকে পড়েন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বইটিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের যোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। উঠে এসেছে খোদ নিজ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বয়ানে ট্রাম্পের দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডের বিবরণ। তারা বলছেন, ট্রাম্প শুধু মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দুনিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবেই অযোগ্য নন; বরং তার উদ্ভট ও অপ্রীতিকর কর্মকাণ্ড রিপাবলিকান পার্টি এবং বিশ্ব ব্যবস্থাকেই ঝুঁকিতে ফেলছে। তবে সবকিছুর পরও একেবারেই বন্ধুহীন নন টাম্প।
ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণা শিবিরে কাজ করেছেন মাইকেল ক্যাপুটো। তিনি সিএনএন’কে বলেন, প্রেসিডেন্টের জন্য খুব উচ্চ পর্যায়ে কাজ করা কেউ ট্রাম্পকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছেন।
নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত নিবন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, ট্রাম্পের ‘অনৈতিক’ ও ‘আবেগতাড়িত’ আচরণের ফলে প্রশাসনকে অনেক অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় খোদ ট্রাম্পের বিরুদ্ধেই মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যেই একটি ‘নীরব প্রতিরোধ’ চলছে।
এই নিবন্ধ নিয়ে ট্রাম্প ক্ষুব্ধ হলেও এখনও পর্যন্ত তিনি বা তার পক্ষে কেউ সরাসরি লেখাটিকে মিথ্যা বলে দাবি করেননি। তবে এর লেখককে বলেছেন কাপুরুষ হিসেবে আখ্যায়িত করে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনেছেন ট্রাম্প। লেখাটি প্রকাশ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসকে ভুয়া আখ্যা দিয়ে ওই নিবন্ধের লেখকের পরিচয় প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন ট্রাম্প। তবে নিউ ইয়র্ক টাইমস সাফ জানিয়ে দিয়েছে, লেখকের পরিচয় গোপন রাখতে তারা বদ্ধপরিকর।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘নিবন্ধটি প্রকাশ করতে পেরে আমরা গর্বিত। ট্রাম্প প্রশাসনের অভ্যন্তরে প্রকৃতপক্ষে কী ঘটছে তা বুঝতে এই লেখা সাধারণ পাঠকের জন্য সহায়ক হবে।’
নিউ ইয়র্ক টাইমসে বেনামি নিবন্ধটি প্রকাশিত হওয়ার হওয়ার আগের দিন সংবাদমাধ্যমে আসে ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক বব উডওয়ার্ডের প্রকাশিতব্য বই ‘ফিয়ার, ট্রাম্প ইন দ্য হোয়াইট হাউস’-এর অংশবিশেষ। এতে বলা হয়, হোয়াইট হাউসের কিছু কর্মকর্তা একটি ‘প্রশাসনিক অভ্যুত্থানচেষ্টায়’ জড়িত। তারা প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে রাষ্ট্রকে বাঁচাতে চাইছেন। ট্রাম্পের স্বাক্ষরের আগেই তার টেবিল থেকে জরুরি নথিপত্র সরিয়ে ফেলছেন এসব কর্মকর্তারা। আর নিজ ঘরের এসব ‘বিশ্বাসঘাতকদের’ই এখন খুঁজে বের করত চাইছেন ট্রাম্প। এ চেষ্টায় তিনি কতটা সফল হবেন সেটাই এখন দেখার বিষয়। সূত্র: সিএনএন, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।

No comments

Powered by Blogger.