সাংবাদিকদের কণ্ঠ স্তব্ধ করার অস্ত্র বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ -ডনের সম্পাদকীয়

সাংবাদিকদের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেয়ার একটি উপযোগী অস্ত্র হয়ে উঠেছে বিশ্বাসঘাতকতা বা রাষ্ট্রদ্রোহতার অভিযোগ। সোমবার তা আরো একবার প্রমাণিত হলো। এদিন মিয়ানমারে দু’জন সাংবাদিক ওয়া লোন এবং কাইওয়া সোয়ে ও’কে দেশটির অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টের অধীনে অভিযুক্ত করে শাস্তি দেয়া হয়। তাদের দু’জনকেই সাত বছর করে জেল দেয়া হয়েছে। তারা কাজ করছিলেন বার্তা সংস্থা রয়টার্সের হয়ে। তাদের কাছে রাখাইন রাজ্য ও সামরিক বাহিনীর নিরাপত্তা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সরকারি ডকুমেন্ট থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে বৃটিশ আমলের আইনের অধীনে। তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল গত ডিসেম্বরে। এসব কথা পাকিস্তানের অনলাইন ডনের এক সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়, ওই দুই সাংবাদিক কর্তৃপক্ষের রোষানলে পড়েন কারণ, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর যে গণহত্যা চালিয়েছে তা নিয়ে রিপোর্ট করার ক্ষেত্রে স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে তারা বিরল সাহস দেখিয়েছিলেন। জাতিসংঘের একটি প্যানেল মিয়ানমারের শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা করে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। এ ছাড়া জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন নিন্দা জানিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাতে মিয়ানমারের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে তাদেরকে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার জন্য বিচার করার সুপারিশ করা হয়। এসব রিপোর্ট প্রকাশ করার পরই ওই দু’সাংবাদিকের বিরুদ্ধে শাস্তি ঘোষণা করা হয়। সেনাবাহিনীর ভয়াবহ সেই অভিযানে গণহারে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। একে গণহত্যার উদ্দেশ্যে হত্যাকাণ্ড বলে বর্ণনা করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। এর ফলে সীমান্ত অতিক্রম করে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।
ভিন্ন মতাবলম্বীদের কণ্ঠ রোধ করতে এবং তারা যে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে তা যাতে প্রকাশ না পায় তা প্রতিরোধ করতে  সেকেলে অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট বহুবার ব্যবহার করেছে মিয়ানমারের সামরিক শাসকরা। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে তারাই একা নয়। বিশ্বজুড়ে সরকারগুলো ক্রমাগত কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে উঠছে। ফলে সাংবাদিকদের জন্য সাংবাদিকতার পরিবেশ ক্রমশ আরো প্রতিকূল হয়ে উঠছে। এমন উদাহরণের মধ্যে তুরস্ক, মিশর, ভারত ও পাকিস্তানের নাম করা যায়। এসব দেশে মিডিয়া বিশেষত সমস্যার (ট্রাবলিং) মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে এটার ধরন এক এক দেশে এক এক রকম- অন্তত এখনকার সময়ের জন্য। যেসব দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে, সেখানে রাষ্ট্র লুকোচুরি করে। সেখানে সাংবাদিকদের বানানো হয় বিশ্বাসঘাতক, ট্রাবলমেকার। এর ফলে সহিংসতার বিষয়ে তাদেরকে করে তোলা হয় বিপন্ন। অনলাইনে নির্যাতিত হন। হয়রান হন সাংবাদিকরা। তাদেরকে গ্রেপ্তার করে সন্ত্রাসের বানোয়াট অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। আবার জোরপূর্বক গুমও করে দেয়া হয়। অনেককে সংঘাতপূর্ণ বিষয়ে রিপোর্ট করা অবস্থায় তাদেরকে টার্গেটেড বা হত্যার শিকার হয়ে প্রাণ হারাতে হয়েছে। এমন অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ৩৯। বহু মিডিয়া আউটলেট ভয়াবহ চাপের মুখে আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে। এসব চাপ এসেছে রাষ্ট্র থেকে বিভিন্ন কৌশলে। তাই স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোর অবশ্যই সরকারগুলোর কাছে দাবি তোলা উচিত, যাতে মিডিয়া জনগণের জন্য কাজ করার ক্ষেত্রে সম্মান পায়। নিজেদের মধ্যে যতই মতবিরোধ থাক সাংবাদিকদের নিজেদের জন্য এই ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হতেই হবে।

No comments

Powered by Blogger.