আসাদকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন টাম্প

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৭ সালে দামেস্ক সরকারের ওপর রাসায়নিক হামলার দোষ চাপিয়ে ট্রামপ ওই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে চেয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড তার নতুন প্রকাশিত একটি বইয়ে এ তথ্য প্রকাশ করেছেন। বইটির নাম ফেয়ার। ওয়াশিংটন পোস্ট অনলাইনে প্রকাশিত এ বইয়ের অংশবিশেষে ডনাল্ড ট্রামেপর এ ইচ্ছের কথা তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, ডনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম মাত্তিসকে বলেছিলেন, তিনি আসাদকে হত্যা করতে চান। এর আগে, সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশের খান শায়খুন এলাকায় কথিত রাসায়নিক হামলার জন্য সিরিয়ার সরকারকে দায়ী করে ওয়াশিংটন। ট্রাম্প ফোনে মাত্তিসকে বলেছিলেন, আসাদকে মেরে ফেলুন। সিরিয়ায় ঢুকে আসাদ ও তার ঘনিষ্ঠদের হত্যা করতে হবে। এসময় ট্রাম্পকে আশ্বস্ত করেন মাত্তিস। পরে তার একজন সিনিয়র সহযোগী বলেছেন, তারা আসলে এমন  কোনো পদক্ষেপই নেন নি। এর পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টারা সিরিয়ায় বিমান হামলাকে বেছে নেন। ট্রাম্পই এ নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর ভিত্তিতেই যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা টিম সিরিয়ার বিরুদ্ধে বিমান হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিল। বব উডয়ার্ড আরো লিখেছেন, পররাষ্ট্র বিষয়ে ট্রাম্পের অজ্ঞতা দেখে জিম মাত্তিস বিস্মিত হয়েছিলেন। তিনি তার ঘনিষ্ঠ লোকজনকে বলতেন, ট্রাম্পের বুদ্ধি ৫ম অথবা ৬ষ্ঠ গ্রেডের।
যুক্তরাষ্ট্রের দূত নিকি হ্যালি মঙ্গলবার বলেছেন, প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে কখনোই হত্যার পরিকল্পনা করেননি ট্রাম্প। তিনি জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র হামলা নিয়ে কথোপকথন সম্পর্কে তিনি জানেন। নিকি বলেন, আসাদকে হত্যা করার বিষয়ে একবারও প্রেসিডেন্টকে কথা বলতে শুনি নি আমি।
সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে একটি হচ্ছে সত্তরের দশকে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের ওয়াটারগেট কেলেংকারি ফাঁস। তার অনুসন্ধানের ভিত্তিতেই পরবর্তীতে পদত্যাগ করতে হয় নিক্সনকে। তিনি দাবি করেছেন, ট্রামেপর কাছের মানুষ যারা এসব বক্তব্য দেয়ার সময় তার পাশে ছিলেন, তাদের থেকেই তিনি এ তথ্য পেয়েছেন। বব উডওয়ার্ড সমপর্কে বলা হয়ে থাকে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণে যারা থাকেন তাদের সঙ্গে তার এত দারুণ সমপর্ক রয়েছে যে কোনো কিছুই তার অজানা থাকে না।
নতুন লেখা বইয়ে তিনি বলেছেন, দেশকে নিরাপদ রাখতে ট্রাম্পের ডেস্ক থেকে বেশ কিছু ডকুমেন্ট চুরি করেছেন তারই সহযোগীরা। এসব ডকুমেন্ট ছিল বাণিজ্য চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়ার বেশ কিছু দলিল। এমন কি ট্রাম্পের বিচার বিবেচনার জন্য বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন সহযোগী তাকে ‘ইডিয়ট’ ও মিথ্যাবাদী বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমন সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি। এতে বলা হয়েছে, সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক। মঙ্গলবার তার বইয়ের তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। এতে এক ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ অবস্থায় পড়েছেন ট্রাম্প।
বইটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ হওয়ার এক সপ্তাহ আগে মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা এপি’র হাতে আসে একটি কপি। এরপরই এ বইয়ের উদ্ধৃতি ও কাহিনীগুলোকে এক টুইটার বার্তায় ট্রাম্প প্রতারণা ও জনগণের সঙ্গে মশকরা বলে অভিহিত করেছেন। এর সঙ্গে আরো যোগ করেছেন তিনি। বলেছেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম মাত্তিস ও চিফ অব স্টাফ জন কেলি প্রেসিডেন্টকে নিয়ে ওই বইয়ে সমালোচনার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ ছাড়া আবেগতাড়িত সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়ে তার ডেস্ক থেকে সিনিয়র সহযোগীরা স্পর্শকাতর ডকুমেন্ট নিয়ে নিয়েছেন এমনটাও তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। মঙ্গলবার দিনের শেষের দিকে আবারো টুইটারে ফেরেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনসকে ‘মানসিক বিকারগ্রস্ত’ এবং ‘দক্ষিণাঞ্চলের এক নির্বোধ’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন বলে বইটিতে যে কথা রয়েছে তাও তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। ট্রাম্প বলেন, তিনি জেফ সহ অন্য কারো বিরুদ্ধে কখনো ওইসব শব্দ ব্যবহার করেন নি। কারণ, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ মহান হয়।
উল্লেখ্য, রাশিয়া তদন্ত থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার পর জেফ সেশনস বহুবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমালোচনার শিকারে পরিণত হয়েছেন। বব উডওয়ার্ডের লেখা বইটির প্রকাশনা নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে লেখালেখি চলছে। হোয়াইট হাউসের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের অনুমান তাদের প্রায় সবাই ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি উদ্‌ঘাটনকারী সাংবাদিক বব উডওয়ার্ডকে সহযোগিতা করেছেন। তবে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি সারা হ্যাকাবি স্যান্ডার্স ওই বইয়ের কাহিনীকে বানোয়াট ছাড়া কিছু নয় বলে আখ্যায়িত করেছেন। বলেছেন, সাবেক অনেক হতাশাগ্রস্ত কর্মী প্রেসিডেন্টের দুর্নাম ছড়ানোর জন্য এমন গল্প ফেঁদে থাকতে পারে। এ নিয়ে বব উডওয়ার্ড কোনো মন্তব্য করেন নি।
এ বইয়ে চিফ অব স্টাফ জন কেলিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, তিনি ট্রাম্পের মানসিক বিকার নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত। এক পর্যায়ে তিনি ট্রাম্পকে ইডিয়ট বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। তবে এ অভিযোগ মঙ্গলবার অস্বীকার করেছেন কেলি। এ বইয়ে আরো বলা হয়েছে, রাশিয়া তদন্ত নিয়ে ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী জন দোউদ। এই তদন্ত থেকে ট্রাম্প নিজেকে এড়াতে পারবেন কিনা তা নিয়ে তিনি সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। বিশেষ করে তিনি রাশিয়া তদন্ত নিয়ে স্পেশাল কাউন্সেল রবার্ট মুলারের সাক্ষাৎকারকে বুঝিয়েছিলেন। জন দোউদ জানুয়ারিতে পদত্যাগ করেন। তিনি ট্রাম্পকে বলেছিলেন, সাক্ষ্য দেবেন না। এটা হয়তো একটি অরেঞ্জ জাম্পসুট। তবে মঙ্গলবার এ কথা অস্বীকার করেছেন তিনি। ওই বইয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম মাত্তিসকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। তিনি একবার ট্রাম্পকে ব্যাখ্যা করছিলেন উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি মনিটরিং নিয়ে কোরিয়া উপদ্বীপ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা মোতায়েনের বিষয়ে। মাত্তিস এক পর্যায়ে বলেন, আমরা তো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রতিরোধের জন্য এটা করছি। বইটিতে বলা হয়েছে, ওই সাক্ষাৎ নিয়ে জিম মাত্তিস তার ঘনিষ্ঠজনদের বলেছেন যে, তার কথা শুনে বোঝার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ৫ম অথবা ৬ষ্ঠ গ্রেডের একজন শিক্ষার্থীর মতো আচরণ করছিলেন। তবে জিম মাত্তিস এমন কথা কখনো উচ্চারণ করেন নি বলে এক বিবৃতিতে বলেছেন। পেন্টাগনের মুখপাত্র কর্নেল রব ম্যানিং বলেছেন, বব উডওয়ার্ড কখনোই জিম মাত্তিসের সাক্ষাৎকার নেন নি।

No comments

Powered by Blogger.