৭ জনের টিম নিয়ে সিলেটে ডাকাতি করে বেড়াতো ‘বস মিজান’ by ওয়েছ খছরু

দরগাহ্‌ গেইটের হোটেল তায়েফ। ওই হোটেলই হচ্ছে বস মিজানের হেডকোয়ার্টার। চট্টগ্রাম থেকে দলবল নিয়ে বাস কিংবা ট্রেনযোগে চলে আসতো সিলেটে। এরপর তারা অবস্থান নিতো হোটেল তায়েফে। সেখান থেকে তারা পরিকল্পনা করে স্থানীয় সোর্সদের নিয়ে নেমে পড়তো ডাকাতিতে। পরপর  কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটানোর পরই তাকে ফের চট্টগ্রাম চলে যেতো। সিলেটের ডাকাতির ঘটনার মূলহোতা ও ভয়ঙ্কর ডাকাত বস মিজান গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রথমে পুলিশের কাছে এবং পরে আদালতের কাছে এসব কথা স্বীকার করেছে। গতকাল সিলেটে আদালতে সিলেটের একাধিক ডাকাতির ঘটনা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে বস মিজান। এর আগে রোববার ভোররাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর সে পুলিশের কাছে তার অপরাধের কথা স্বীকার করে। মিজান ওরফে বস মিজান শাহ্‌জালাল (রহ:) দরগাহ এলাকার হোটেল তায়েফে দলবল থেকে বিমানবন্দর সড়কে ডাকাতির ঘটনা ঘটাতো। আর শাহ্‌পরাণ এলাকায় সে তার লোকজন সিএনজিযোগে গিয়ে ডাকাতি করতো। আবার কখনো কখনো সে শাহ্‌পরাণ (রহ:) দরগাহ্‌ এলাকার আশপাশের হোটেলগুলোতে অবস্থান করতো। সিলেটের শাহ্‌পরাণ থানার ওসি আক্তার হোসেন জানিয়েছেন- বস মিজানের মূল হেডকোয়ার্টার ছিল দরগাহ এলাকার হোটেল তায়েফ। ৭ জনের ডাকাত দল নিয়ে সে প্রতি দুই মাস পরপর সিলেটে আসতো। একটানা ১০-১৫ দিন সে ওই হোটেলে অবস্থান করে ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়ে আবার ট্রেনযোগে চট্টগ্রামে চলে যেতো। অতীতে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়াদের কাছ থেকে এ ব্যাপারে আভাস পাওয়া গেলেও মুল হোতাদের চিহ্নিত করা যাচ্ছিলো না। অবশেষে খাদিমের একটি ডাকাতির ঘটনায় এক ডাকাত আটক হওয়ার পর পুরো নেটওয়ার্কের কাহিনী প্রকাশ পেয়েছে। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে- ভয়ঙ্কর ডাকাত মিজান একাধিক নাম ব্যবহার করে। এ কারণে তার মূল নাম খুঁজে বের করা কষ্ট। তবে- তার সিন্ডিকেটরা তাকে বস মিজান বলেও ডাকে। ফলে অপরাধ দুনিয়ায় সে বস মিজান নামে পরিচিতি পায়। তার মূল বাড়ি পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার ইকরী গ্রামে। তার পিতার নাম আবু বাক্কার হাওলাদার। ৩২ বছর বয়সী বস মিজানের সিন্ডিকেটের মহিলারাও রয়েছে। খুলনা এলাকার পুলিশের খাতায় মোস্ট ওয়ান্টেড সে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, ডাকাতিসহ প্রায় ৭ টি মামলা রয়েছে খুলনাতেই। এ কারণে বস মিজান দীর্ঘদিন এলাকা ছাড়া। খুলনার পর সে অবস্থান নেয় চট্টগ্রামে। সেখানে একজন কাপড় ব্যবসায়ী হিসেবে সে পরিচিতি পায়। চট্টগ্রামের হালিশহর থানার বড়পুল এলাকার নজমুলের মালিকানাধীন বাসায় সে ভাড়া থাকতো। ওখানে তার সিন্ডিকেটের কয়েকজনের বাসা রয়েছে।
সিলেটের শাহ্‌পরাণ থানা পুলিশের এসি মো. ইসমাইল বস মিজানকে ওই এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেন। এদিকে- গ্রেপ্তারের পর বস মিজান পুলিশের কাছে সব স্বীকার করে। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আবদুল ওয়াহাব জানিয়েছেন- বস মিজান গতকাল সিলেটের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সে নিজের দোষ স্বীকার করেছে। এরপর আদালত থেকে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পুলিশ জানায়, গত ৯ই এপ্রিল ভোরে খাদিমপাড়ার শাহ্‌পরাণ উপ-শহর আবাসিক এলাকার ৫ নং রোডের আবদুল মজিদের বাসায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই সময় স্থানীয় জনতা আরিফুল ইসলাম সজীব ওরফে মিরাজ (২৬) নামের এক ডাকাতকে আটক করে। ডাকাতির ঘটনায় আবদুল মজিদ শাহ্‌পরাণ থানায় মামলা দায়ের করেন।
১১ই এপ্রিল আরিফুল ইসলাম সজীবকে আদালতে হাজির করা হয়। সজীব আদালতে আবদুল মজিদের বাসায় এবং গত ১৮ই মার্চ আরামবাগের কাজী আবদুল মুকিতের বাসায় ডাকাতিতে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। তিনি তার সহযোগী মানিক, সুমন গাজী, আফজাল গাজী, আল আমিন ওরফে মুকুল প্রকাশ ওরফে মিজান হাওলাদার ওরফে বস মিজান, আরিফ, আবুল কালাম ও সেলিনার নাম প্রকাশ করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আবদুুল ওয়াহাব জানান, পলিশ মানিক ওরফে ইউনুছ হাওলাদার ওরফে বস কালুকে গ্রেপ্তার করে গত ৬ই মে আদালতে হাজির করে। আদালতে তিনি স্বীকারোক্তি দেন। বস মিজান, আফজাল গাজী, আরিফুল ইসলাম সজীব, আবুল কালাম, রুবেল ওরফে ঘাওরা রুবেল ও জাকির ফকিরসহ সাতজন ডাকাতি করেছেন বলে স্বীকার করেন বস কালু। পরে শাহ্‌পরাণ থানার সহকারী কমিশনার মো. ইসমাইল প্রযুক্তির সহায়তায় আল আমিন ওরফে মুকুল প্রকাশ ওরফে মিজান হাওলাদার ওরফে বস মিজানের অবস্থান নিশ্চিত হন।
শনিবার দিবাগত রাতে অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রামের হালিশহর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ কর্মকর্তা আবদুুল ওয়াহাব আরো জানান, বিভিন্ন অভিযোগে বস মিজানের বিরুদ্ধে খুলনা সদর থানায় ছয়টি ও সোনাডাঙ্গা থানায় আরেকটি মামলা রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.