‘৮১ শতাংশ লিবিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিকে জোরপূর্বক ইতালিতে পাঠানো হয়’ - ওকাপ-এর গবেষণা

লিবিয়ায় অবস্থানরত ৮১ শতাংশ বাংলাদেশি কর্মীকে জোরপূর্বক ইতালিতে পাঠানো হয়। দেশটির যুদ্ধাবস্থা এবং একশ্রেণির দালালের প্ররোচনার কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েও তারা ইতালিতে যেতে বাধ্য হন। অভিবাসী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থা অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ) ‘জীবন নিয়ে জুয়া: ভূ-মধ্যসাগর অতিক্রমকারী বাংলাদেশি অভিবাসীদের দুর্দশা’ শীর্ষক এক গবেষণায় এ তথ্য তুলে ধরে। রোববার গুলশানের স্পেক্ট্রা কনরভেনশন সেন্টারে বৃটিশ হাইকমিশনের সহযোগিতায় পরিচালিত গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ওকাপ-এর চেয়ারম্যান সাকিরুল ইসলাম। সাগর পথে ইতালিতে যাওয়া বাংলাদেশের চারটি অঞ্চলের ২৭৯ জন নাগরিকের ওপর গবেষণাটি পরিচালিত হয়, যার মধ্যে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় রয়েছে ৯২টি পরিবার। গবেষণায় বলা হয়, ভূ-মধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে যাওয়া ৭৯ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবাসী বাংলাদেশি মনে করতো তারা সাগরেই মারা যেতে পারেন। কিন্তু তারা তাদের জীবনধারণ এবং দেশে বসবাস করা পরিবারের কথা চিন্তা করে এই ঝুঁকি নিয়েছিল। সাকিরুল ইসলাম বলেন, ইতালিতে অবস্থানরত এই ২৭৯ জন বাংলাদেশির মধ্যে ৮১ শতাংশকে জোরপূর্বক সাগরপথে ইতালিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। যাদের মধ্যে ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ মানবপাচার ও চোরাকারবারিদের শিকার হয়েছিলেন। তারা সুদান হয়ে প্রথমে মিশরে প্রবেশ প্রবেশ করে। পরবর্তীতে তারা ইতালিতে পৌঁছায়। গবেষণায় ভুক্তভুগি এসব অভিবাসীর শিক্ষাগত যোগ্যতাও তুলে ধরা হয়। বলা হয়, এদের বেশির ভাগই উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। ইতালিতে যাওয়া এসব অভিবাসীর অধিকাংশই মাদারীপুর, শরীয়তপুর, কুমিল্লা এবং নোয়াখালীর বাসিন্দা। ওকাপ চেয়ারম্যান বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, এসব বাংলাদেশিদের একেকজন ৮ হাজার থেকে ১৮ হাজার ডলার খরচ করে দেশটিতে পৌঁছেছে। গবেষণাপত্রের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ হাই কমিশনের ইমিগ্রেশন ও মাইগ্রেশন হেড লেসলি নিকোল। তিনি বলেন, এই গবেষণাটি বাংলাদেশ, ইউকে এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোকে একটি সুস্পষ্ট তথ্য দিয়েছে। এই তথ্য অভিবাসীদের ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সহযোগিতা করবে। তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমরা মানবপাচার প্রতিরোধ এবং নিরাপদ, নিয়ন্ত্রিত ও নিয়মিত অভিবাসানের নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কার্যক্রম অব্যাহত রাখবো। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ভারপ্রাপ্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার গিল এটকিনশন। এছাড়া, ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের ডেপুটি চিফ আবদুস সাত্তার ইসোভ, এটিএন বাংলার কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এডিটর কেরামত উল্লাহ বিপ্লব, ইউএন উইমেন-এর তপোদি সাহা, বমসার সুমাইয়া ইসলাম, আওয়াজ ফাউন্ডেশনের আনিচুর রহমান গবেষণার ওপর আলোচনা করেন। তারা তাদের বক্তব্যে মানবপাচার ও মানব চোরাচালান বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

No comments

Powered by Blogger.