ঢাকায় চীনের কাছে ভারতের হার

চূড়ান্ত দফায় শেষ হয়ে গেছে এশিয়ার দুই অর্থনীতির সুপার পাওয়ারের মধ্যে লড়াই। সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ (এসএসই) ও শেনঝেন স্টক এক্সচেঞ্জের (এসজেডএসই) সমন্বয়ে গঠিত একটি চীনা কনসোর্টিয়াম তার ঘোর প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে উড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের শতকরা ২৫ ভাগ শেয়ার ছিনিয়ে নিয়েছে। এরই মধ্যে এ নিয়ে দু’দেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিটি শেয়ার ২১ টাকায় কিনে নেবে চীনা কনসোর্টিয়াম। এই দামে তারা মোট ৫ কোটি ৩০ লাখ ডলারের শেয়ার কিনে নেবে। যা মোট শেয়ারের চারভাগের এক ভাগ। মোট শেয়ার রয়েছে প্রায় ১২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের। এর আগে প্রতিটি শেয়ারের দাম ২২ টাকা প্রস্তাব করেছিল চীন। তবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ২০১৭ সালে শতকরা ১০ ভাগ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এতে প্রতিটি শেয়ারের দাম কমে আসে। উপরন্তু ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের  প্রযুক্তিগত সহায়তা (টেকনিক্যাল সাপোর্ট) প্রস্তাব করেছে চীন। তাদের প্রস্তাবের মধ্যে বাংলাদেশের বাজারে একটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের বাজার তৈরির প্রস্তাবও রয়েছে। চীনা অংশীদারদের সহযোগিতায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লক্ষ্য হলো তাদের ‘প্রডাক্ট অফারিংস’কে বহুমুখী করা। উপরন্তু উভয় অংশীদারের পরিকল্পনায় রয়েছে বাংলাদেশে ইএলআইটিই ভি-নেক্সট এলায়েন্স প্রোগ্রাম চালুর। বিনিয়োগকারীদের সেবা স্বয়ংক্রিয় ফ্রেমওয়ার্কে আনা হবে। মানবসম্পদ উন্নয়নে সহায়তার প্রস্তাবও দিয়েছে চীনা কনসোর্টিয়াম। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক পোর্টফোলিও উন্নত করতে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন এসব প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন হয়ে যাবে তখন আশা করা হচ্ছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্রান্ড ইমেজ বৃদ্ধি পাবে এবং অধিক বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, চীনের পথ অনুসরণ করে পুঁজিবাজারের উন্নতি করে বাংলাদেশ প্রভূত সুবিধা পাবে। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছেন, আমরা আশা করি কৌশলগত অংশীদার বাংলাদেশের পুঁজিবাজার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে, যেমনটা ১৯৯০ সালে উদ্বোধন হওয়া সত্ত্বেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে চীনের সংশ্লিষ্ট বাজারে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতিটি শেয়ার ১৫ টাকায় কিনে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (এনএসই)। যখন হিসাব কষা হলো দেখা গেল চীন যে দাম প্রস্তাব করেছে ভারতের প্রস্তাবিত দাম তার চেয়ে শতকরা ৪৭ ভাগ কম। চীনের মতো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে সার্বিকভাবে আধুনিকায়ন করার জন্য বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এনএসই। তবে টেকনিক্যাল সহায়তার প্রকৃতি বা তার আকার কি হবে তার কিছুই প্রকাশ করে নি তারা। উপরন্তু ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পরিষদে দুটি আসন চেয়ে বসে এনএসই। একবার এই আসন তাদের দেয়া হলে তারা ৫ বছর পরে তা ছাড়বে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ যে চীনা দরদাতাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছে এটা বুঝতে পেরে ভারত কূটনৈতিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করে। ফেব্রুয়ারিতে এ বিষয়ে ঢাকা সফর করেন এনএসই’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিক্রম লিমায়ে। তিনি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। স্টক এক্সচেঞ্জের উন্নয়নে এনএসই’র অভিজ্ঞতার কথা জোর দিয়ে তুলে ধরেন তিনি। প্রাথমিকভাবে বিক্রম লিমায়ের দেন-দরবার দৃশ্যত কাজ করতে দেখা যায়, যখন কমিশন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে তাদের টেন্ডার প্রক্রিয়া পুনরায় রিভিজিট করার নির্দেশনা দেয়। কিন্তু কমিশনের এই সিদ্ধান্তে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পরিষদের সদস্য ও বাজার পর্যবেক্ষকদের মধ্যে কড়া প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। অনেকেই এর বিরোধিতা করে বলতে থাকেন যে, এনএসই’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এটাই বোঝানোর চেষ্টা করাছেন যে, ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সমর্থক হলো দিল্লি। তা সত্ত্বেও তারা যুক্তি দেখান। বলেন, বাংলাদেশের উচিত সবচেয়ে ভালো সুযোগটি বেছে নেয়া।
অন্যদিকে শেয়ারবাজারে সফলতার সঙ্গে দরপত্র জিতে দৃশ্যত চীন প্রমাণ করেছে বাংলাদেশে তারা বেশি প্রভাবশালী। প্রতিবেশীদের সঙ্গে চীনের কর্মকাণ্ডে বেশ উদ্বিগ্ন দিল্লি। এসজেডএসই’র প্রেসিডেন্ট তার বক্তব্যে বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে নতুন অংশীদারিত্ব বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার (বিসিআইএম) অর্থনৈতিক করিডোরে সহযোগিতায় নতুন মাত্রা যোগ করবে। অন্যভাবে বলা যায়, দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নয়ন এজেন্ডায় ভারতকে একেবারে পাশ কাটিয়ে যেতে চায় না চীন। বাংলাদেশে ভারতপন্থিদের শান্ত রাখার চেষ্টা করেছে চীন। একই বক্তব্যে এসজেডএসই প্রেসিডেন্ট বলেছেন, দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা হবে ন্যায়সঙ্গত এবং বিজয়ী-বিজয়ী ভিত্তিতে। তিনি আরো বলেছেন, শেয়ার হোল্ডারদের বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গভাবে অনুসরণ করবে চীন। এখন সময়ই বলে দেবে চীন তার প্রতিশ্রুতিতে অটল থাকতে পারবে কিনা। তবে, এখন বলা দৃশ্যত বাংলাদেশ একটি ভালো চুক্তি করেছে।
(অনলাইন ফোর্বস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত রিপোর্ট অবলম্বনে)

No comments

Powered by Blogger.