‘অবৈধ বাংলাদেশী’ অভিবাসীদের কোনো সাংবিধানিক অধিকার থাকবে না

এবার কথিত ‘অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসীদের’ বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল। তিনি বলেছেন, ‘অবৈধ বাংলাদেশী’ অভিবাসীদের কিছুতেই কোনো সাংবিধানিক অধিকার থাকবে না। তার সরকার এমন কোনো অধিকার দেবে না তাদের। এমন ‘বাংলাদেশীদের’ আসাম থেকে বের করে দেয়ার ক্ষেত্রে তিনি বা তার সাকার মানবিক কারণে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকবে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া। এতে বলা হয়, রোববার দিবাগত মধ্যরাতে নাগরিকত্ব বিষয়ক ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন (এনআরসি)-এর প্রথম খসড়া তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
আতঙ্ক দেখা দিয়েছে বাংলাভাষী মুসলিমদের মধ্যে। বিভিন্ন রিপোর্টে আভাষ দেয়া হচ্ছে, এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ৩০ থেকে ৪০ লাখ কথিত ‘বাংলাদেশী অভিবাসী’কে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। যদি তা-ই ঘটে তাহলে রোহিঙ্গা ইস্যুর পর এটিই হবে বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধাক্কা। এ নিয়ে কূটনৈতিক মহল, বিশেষজ্ঞদের মধ্যে সতর্কতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এমনই অবস্থায় মঙ্গলবার অবৈধ ‘বাংলাদেশী’ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোরতা উচ্চারণ করেছেন। বলেছেন, যেসব অভিবাসী এনআরসির চূড়ান্ত তালিকায় তাদের নাম অন্তর্ভূক্তি করাতে ব্যর্থ হবেন অর্থাৎ যারা এ তালিকা থেকে বাদ পড়বেন তাদের কোনো রকম সাংবিধানিক অধিকার দেবে না তার সরকার। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, যতক্ষণ পর্যন্ত এমন অবৈধ ‘বাংলাদেশীদের’ বের করে দেয়ার সিদ্ধান্ত না দেয় কেন্দ্রীয় সরকার ততক্ষণ পর্যন্ত মানবিক কারণে এসব মানুষকে ভারতে বসবাস করতে দেয়া হবে। এনআরসির প্রথম খসড়া তালিকা প্রকাশের ৪৮ ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে তিনি এমন বাণী উচ্চারণ করলেন। নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন ৩ কোটি ২৯ লাখ মানুষ। তার মধ্যে প্রথম খসড়ায় যাচাই করে নাম প্রকাশ করা হয়েছে এক কোটি ৯০ লাখের। বাকিদের বিষয়ে বছর শেষ হওয়ার আগেই সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের জুনে আসামে প্রথম কোনো বিজেপি সরকার প্রধান হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন সর্বানন্দ সনোয়াল। এর আগে সেখানে বিধানসভার নির্বাচনে বিজেপি প্রতিশ্রুতি দেয়, তারা নির্বাচিত হলে আসাম থেকে অবৈধ অভিবাসীদের বের করে দেবে। বিশেষত এর মাধ্যমে সেখানে বাংলাভাষীদের দিকে ইঙ্গিত করা হয়। এর মধ্যে আবার বেশির ভাগই বাংলাভাষী মুসলিম। তাদেরকে বাংলাদেশের অবৈধ অভিবাসী হিসেবে দাবি করা হচ্ছে। এ জন্য অবৈধ অভিবাসী সনাক্তকরণে এনআরসি নবায়নের কাজ শুরু করে সরকার। ১৯৫১ সালের পর এবারই প্রথম এই কাজটি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে টেলিফোনে সাক্ষাতকার দেন সর্বানন্দ সনোয়াল। তিনি বলেন, যাদেরকে ‘বিদেশী’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে তাদের কোনো সাংবিধানিক অধিকার থাকবে না। এমন কি কোনো মৌলিক অধিকার ও ভোটাধিকার থাকবে না। তাদের শুধু একটিই অধিকার থাকবে। তা হলো মানবাধিকার। এ বিষয়টিতে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে জাতিসংঘ থেকে। এ মানবাধিকারের মধ্যে রয়েছে খাদ্য, আশ্রয় ও বস্ত্র পাওয়ার অধিকার। সর্বানন্দ সনোয়াল এনআরসি করার উদ্যোগকে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এর মাধ্যমে ভারতীয় ও বিদেশীদের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করা হবে। তিনি বলেন, এনআরসির প্রথম যে খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে তাতে মোট আবেদনকারীর মধ্যে শতকরা প্রায় ৪০ ভাগের নাম রয়েছে। দ্বিতীয় তালিকাটি শিগগিরই প্রকাশ করা হবে। এই প্রক্রিয়া যখন শেষ হয়ে যাবে এবং তারপর যেসব মানুষের নাম এনআরসিতে থাকবে না, তারা বিচার বিভাগীয় প্রক্রিয়ার আশ্রয় নিতে পারেন। তাদের ভারতীয় নাগরিকত্বের দাবি উত্থাপন করতে পারেন সেখানে। এনআরসিতে উল্লেখিত নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য যেসব ডকুমেন্ট চাওয়া হয়েছে তা সেখানে উত্থাপন করতে হবে তাদের। সর্বানন্দ সনোয়াল বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কোনো প্রত্যাবর্তন বিষয়ক চুক্তি নেই। ফলে অবৈধদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টি পরে দেখা হবে। প্রথমত, আমাদের লক্ষ্য হলো বিদেশীদের আলাদা করা। তাদের বিরুদ্ধে কি পদক্ষেপ নেয়া হবে এ বিষয়টি আসবে তারও পরে। তিনি দাবি করেন, এনআরসি করার ফলে আসামের মানুষের জীবনযাত্রা স্থায়ীভাবে পাল্টে যাবে। প্রায় ৪০ বছর ধরে আমাদের জনগণ দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও অনিশ্চিত এক অবস্থার মধ্যে বসবাস করছে। এনআরসির ফলে তার অবসান ঘটবে। এটা হবে সবার জন্য একটি উইন-উইন পরিস্থিতি। কেউ কারো নাগরিকত্ব নিয়ে আর প্রশ্ন তুলবে না।

No comments

Powered by Blogger.