স্বপ্ন দেখাচ্ছে সৌর বিদ্যুৎ by ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন নতুন সম্ভাবনা হয়ে দেখা দিয়েছে। আর তাই পরিবেশবান্ধব এই বিদ্যুতের এ উৎস আস্তে আস্তে বিদ্যুতের মূল লাইনে যোগ হচ্ছে। দেশে আগামী তিন বছরের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২০ সালে  মোট বিদ্যুৎ চাহিদার অন্তত ১০ শতাংশ চাহিদা পূরণে প্রথম পর্যায়ে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে এ উৎস থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। যা মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রায় ৩ শতাংশ।
সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ (এসডিজি’স) অর্জনের উদ্যোগ হিসেবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বৃদ্ধির কিছু বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্বে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষস্থানে রয়েছে এবং সর্বোচ্চ সংখ্যক সোলার হোম সিস্টেম (এসএইচএস) স্থাপন করেছে। অবকাঠামো উন্নয়ন কোম্পানি লিমিটেডের (আইসিডসিওএল) কার্যক্রমের অধীনে ইতিমধ্যে ৪ দশমিক ৫ মিলিয়নের বেশি এসএইচএস স্থাপন করা হয়েছে। সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উদ্যোগে অর্থায়ন এবং জ্বালানি দক্ষ প্রকল্পের মাধ্যমে এই উদ্যোগ জোরদার করা হচ্ছে। প্রায় ১৩ মিলিয়ন সুবিধাভোগী এসএইচএস থেকে সৌরবিদ্যুৎ পাচ্ছে। টেকসই এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এসআরইডিএ) সরকারি ও বেসরকারি খাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং জ্বালানি দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস থেকে ৫০০ মেগাওয়াটসহ বিদ্যুৎ উৎপাদন দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১৫ হাজার মেগাওয়াটের ওপরে। সরকার গ্রিন এনার্জি প্লান্ট স্থাপনে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সমপ্রতি সৌর প্লান্ট থেকে ৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এতে ২ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে ২ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার উন্নয়ন অংশীদারদের কাছ থেকে পাওয়া যাবে। অবশিষ্ট অর্থ সরকারি এবং বেসরকারি অংশীদারদের কাছ থেকে পাওয়া যাবে। দীর্ঘমিয়াদি পরিকল্পনায় সরকার দেশের বিভিন্ন এলাকায় আগামী ২০ বছরে ২৫৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৪টি সৌরবিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপন করবে। এতে ব্যয় হবে ৯,১৫৮ কোটি টাকা। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) দুটি বৃহৎ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সাংগু এবং মাতামুহুরি দুটি এলাকা নির্ধারণ করেছে। এই দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা হবে ১৪০ মেগাওয়াটা ও ৭৫ মেগাওয়াট।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জৈব জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বর্তমান সময়ে একটি চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তি ভবিষ্যতের সমাধান। এটা মাথায় রেখেই সরকার মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের শতকরা ১০ ভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্য ঠিক করেছে, যার বেশির ভাগ আসবে সৌরশক্তি থেকে।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ২০০ মেগাওয়াটের একটি সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ করতে যাচ্ছে তিস্তা সোলার। চুক্তি অনুযায়ী আগামী ২০ বছর এ প্ল্যান্ট থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ প্রতি কিলোওয়াট ১৫ সেন্ট দরে ক্রয় করবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। সমপ্রতি এক অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ২০২০ সালে মোট বিদ্যুৎ চাহিদার অন্তত ১০ শতাংশ চাহিদা পূরণে আমরা প্রথম পর্যায়ে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, এই প্রথম দেশীয় কোম্পানি ২০০ মেগাওয়াট সোলার বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে যাচ্ছে। এর আগেও ২০০ মেগাওয়াটের বিদেশি একটি কোম্পানি সোলার বিদ্যুৎ উৎপাদনের চুক্তি করেছিল। সেটি বিদ্যুৎ উৎপাদনের মুখ দেখেনি। আগামীর বিশ্বে বাংলাদেশ হবে পরিবেশবান্ধব জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, শহরের ছাদ ব্যবহারের কথা ভাবছি। আরো সামনে সূর্যগ্রাম প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে সোলারের ওপর নির্ভরশীল হতে যাচ্ছি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ইলেকট্রিক গাড়ি ব্যবহারে ঝুঁকছে। বাংলাদেশকেও এদিকে যেতে হবে। আমরা চাইবো যত কম পারা যায় কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমাতে। এজন্য প্রচুর নবায়নযোগ্য এনার্জি দরকার।
এ প্রসঙ্গে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, আমরা ২০২০ সালে অবশ্যই টার্গেটে পৌঁছে যাবো। তিনি জানান, আশা করছি নির্ধারিত সময়ে আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আসবে। বর্তমানে উৎপাদনে আছে ৫শ’ মেগাওয়াট। আরো বাস্তবায়নাধীন আছে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। তিনি বলেন, নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে ছয় মাসের বেশি সময় লাগে না। নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের স্বপ্ন পূরণে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

No comments

Powered by Blogger.