অবৈধ বাংলাদেশি ইস্যু- আসামে মাদানির মন্তব্যে আলোড়ন

কর্ণাটকের বিধান সভায় ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির বিধায়করা কর্ণাটক থেকে তাদের দাবি অনুযায়ী অবৈধভাবে বসবাসরত চার লাখ বাংলাদেশিকে বাংলাদেশে বিতাড়নের দাবি তুলেছে। গতকাল হিন্দু বিজনেস অনলাইন  এ খবর দিয়েছে। এর আগে ইন্ডিয়া টাইমসে কুনাল আনন্দের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন প্রায় ৩০ লাখ বৈধ কাগজপত্র না থাকা অভিবাসীদের বিতারণের পরিকল্পনা করছেন তখন আসাম তার রাজ্যে অবস্থানরত কথিত ২০ লাখ বাংলাদেশিকে পুশব্যাক করার পরিকল্পনা করছে। গত দু’বছর ধরে চলা ওই কর্মসূচির নাম ‘ডিটেক্ট ডিপোর্ট ডিলেট’। ওই ২০ লাখ লোককে বহিষ্কারের কাজ নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ হওয়ার পরে শুরু করা হবে।
এদিকে জমিয়ত-ই উলেমা হিন্দ প্রধান মাওলানা সৈয়দ আরশাদ মাদানির একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে আসামের রাজনীতিতে তোলপাড় চলছে। তিনি সম্প্রতি এন আর সির নিবন্ধ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আসামের পরিস্থিতি মিয়ানমারের মতো পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে।’ তার এই মন্তব্যকে উসকানিমূলক আখ্যা দিয়ে আসামে তার বিরুদ্ধে অন্তত তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
উইকিপিডিয়া অনুযায়ী, দিল্লিভিত্তিক  দেওবন্দ তরিকার এই সংগঠনটির ভারতে প্রায় ১০ লাখ সদস্য রয়েছে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে তারা অহিংস কর্মসূচির স্বপক্ষে জনমত গড়েছে। গত ১৬ই নভেম্বরের নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক রিপোর্ট মতে মাওলানা মাদানি বলেছেন, ‘‘যদি পঞ্চায়েতদের ইস্যু করা নাগরিকত্ব বিষয়ক সনদ বৈধ হিসেবে গণ্য না করা হয় তাহলে আসামের লাখ লাখ নারী নাগরিকত্ব হারাবেন। আর ভারতকে তা আরেক মিয়ানমারে পরিণত করবে।’ আসামে গত কয়েকদিন ধরে এনিয়ে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া চলছে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী সনোয়াল বলেছেন, যারাই বর্তমান এনআরসি প্রক্রিয়াকে বানচাল করতে চাইবে তাদেরকে রাজ্যের শত্রু হিসেবে গণ্য করা হবে।
১৪ই নভেম্বরের আসাম ট্রিবিউনের এক রিপোর্ট অনুযায়ী,  দি অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন এবং আসাম গণপরিষদ মি. মাদানির মন্তব্যের প্রতিবাদ করেছেন। তাদের মতে আসাম চুক্তি অনুযায়ী নিবন্ধন চলবে। রাজ্য যখন একটি ত্রুটিমুক্ত এনআরসি করার দিকে যাচ্ছে তখন মাদানির মতো লোকেরা এই প্রক্রিয়া নস্যাতের চেষ্টা করছে। আসাম গণপরিষদের মুখপাত্র মনোজ সাইকিয়া বলেন, কংগ্রেস এবং মাদানির মতো লোকদের জন্যই আসাম আজ অবৈধ বাংলাদেশিদের চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি নিবন্ধন থেকে বাদ পড়তে পারেন, এই আশংকায় আসামের বিভিন্ন গ্রুপ প্রতিবাদে সরব রয়েছে। দিল্লি অ্যাকশন কমিটি ফর আসাম (ডাকা) গত সপ্তাহে দিল্লিতে ‘আসামের চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা, এআরসি হালনাগাদকরণ ও নাগরিকত্বের প্রশ্ন শীর্ষক একটি সেমিনার হয়েছে। দিল্লির ওই সেমিনারে অন্যদের মধ্যে জমিয়ত প্রধান মাদানি ছাড়াও অসমীয় বুদ্ধিজীবী হিরেন গোহান, বিশিষ্ট সাংবাদিক হায়দার হোসেন, গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল মান্নান, নর্থ সেন্ট হিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক অপূর্ব কুমার বড়ুয়া বক্তৃতা করেন।
এদিকে আসামের কংগ্রেস পার্টি মাদানির সাম্প্রদায়িক বক্তব্যের নিন্দা করে বিবৃতি দিয়েছে। তবে মাওলানা বদরুদ্দিন আজমলের নেতৃত্বাধীন অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের বিবৃতিতে বলা হয়, এক শ্রেণির মিডিয়ায় মাদানির বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তারা বলেছে, মাওলানা মাদানির ভাষণ আমরা শুনেছি, উর্দুতে দেয়া তার বক্তৃতা ভুলভাবে তুলে ধরা হয়েছে।  
তবে ঢাকার পর্যবেক্ষকরা বলেন, শেষ পর্যন্ত যাই হোক না কেন, এটা উদ্বেজনক যে, আসাম থেকে ২০ লাখ তথাকথিত বাংলাদেশি বিতাড়নের ওই পরিকল্পনার পরে এখন কর্ণাটক থেকে প্রায় ৪ লাখ কথিত বাংলাদেশি বিতাড়নের শোর তোলা হলো। গত বছরের নভেম্বরে আসামের অর্থমন্ত্রী হিমান্ত বিশ্বশর্মা ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছিলেন, আসামে মুসলমানদের তুলনায় হিন্দুরা সংখ্যালঘুতে পরিণত হচ্ছে।
আসামে এখন দ্রুতগতিতে ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অব সিটিজেন্স (এনআরসি)-এর কাজ চলছে। গত ১০ই নভেম্বর ভারতের সুপ্রিম কোর্টে দেয়া হলফনামায় আসাম সরকার জানিয়েছে যে, ১ কোটি ২৩ লাখ আবেদনকারীর তথ্য এখনো যাচাই করা সম্ভব হয়নি। ২০১৮ সালের মার্চে ওই খসড়া রেজিস্ট্রার প্রকাশ করা হবে বলে সুপ্রিম কোর্টকে জানানো হয়েছে। এর আগে আসামের মুখ্যমন্ত্রী সানোয়াল বলেছিলেন, প্রথম খসড়া আগামী ডিসেম্বরে বের করা হবে। গত ১০ই নভেম্বর টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক রিপোর্টে বলা হয়, এনআরসি প্রক্রিয়ার প্রধান লক্ষ্য হলো ১৯৭১ সালের ২৪শে মার্চ মধ্যরাতের পরে বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের চিহ্নিত করা।
 উল্লেখ্য যে, কর্ণাটকের বিধায়করা ওই দাবি তুলেছেন এমন একটি প্রেক্ষাপটে যখন কর্নাটক রাজ্যের কংগ্রেস শাসিত রাজ্য সরকার গত মে মাসে ৮ হাজারের কিছু বেশি বাংলাদেশীর আইনগত মর্যাদা দেওয়ার সুপারিশ পাঠিয়েছে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে।
গত ১৮ মে টাইমস অব ইন্ডিয়া এক প্রতিবেদনে বলেছিল, কর্ণাটকে বসবাসরত ওই বাংলাদেশী অভিবাসী যারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন, তাদের মুখে হাসি ফোটার কারণ তৈরি হয়েছে। কারণ কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার রাজ্যের তিনটি এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের সিডিউলড কাস্ট বা তফসিলি সম্প্রদায় হিসেবে ঘোষণা করতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রস্তাব প্রেরণ করেছে।

No comments

Powered by Blogger.