অস্থির শিশু ও খাদ্যাভ্যাস

আমার প্রতিবেশী জাহিদ সাহেবের সঙ্গে দেখা হলেই তিনি চিন্তিত মুখে বলেন, তার বাচ্চা কেবল নির্দিষ্ট কয়েকটি খাবারই খায়। তার বন্ধুবর পলাশের অনুযোগটি হল তার সন্তানটি কিছুই খেতে চায় না। অধিকাংশ অটিস্টিক বা বিশেষ শিশুর মা-বাবার অভিযোগ এমনই। দুটি বিষয় হাইলাইট করে সমাধানের পথে হাঁটতে হয়। প্রথমটি, কী খাবার দেবেন বা কী দিবেন না? দ্বিতীয়টি, পুষ্টির কথা মাথায় রেখে দিনে কয়বার খাবার দিব, কীভাবে দিব সর্বোপরি খাদ্যাভ্যাস গঠন। আজকে প্রথমটি নিয়ে আলোচনা করব। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, মানব দেহে ইমিউন সিস্টেমের সঠিক কর্মক্ষমতার অভাবে অটিজম আক্রান্তদের মধ্যে কিছু কিছু আমিষ জাতীয় খাদ্যের পরিপূর্ণ পরিপাক হয় না। সাধারণত আমিষ জাতীয় খাদ্য সঠিকভাবে ডাইজেশন হলে সর্বশেষে অ্যামাইনো এসিডে রূপান্তরিত হয়। অটিজম আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এটি পেপটাইড পর্যন্ত ভাঙতে পারে- সর্বশেষ স্টেপ অ্যামাইনো এসিড পর্যন্ত যেতে পারে না। এসব পেপটাইড তাদের আচরণগত সমস্যা ঘটায়, অস্থিরতা বাড়ায়, আক্রমণাত্মক করে তোলে, ঘুম কমিয়ে দেয় ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি করে। এসব অভিযুক্ত পেপটাইড তৈরি হয় সেসব খাদ্যে যেখানে গ্লুটেন এবং কেসিন জাতীয় পদার্থ থাকে। তাহলে জানা যাক কোন কোন খাদ্যে গ্লুটেন এবং কেসিন থাকে। আটা ময়দার তৈরি খাবার, বার্লি, ভুট্টা, রাই, দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার, সামুদ্রিক মাছ, চর্বি জাতীয় খাবার, টেস্টিং সল্ট জাতীয় খাদ্য ইত্যাদি। সুতরাং রুটি, পরাটা, পাউরুটি, কেক, নুডুলস্, চানাচুর, বিস্কুট, চিপস,
পনির, মাখন, দই অথবা দুধের তৈরি খাদ্য পরিহার করতে হবে। এটাও জানা দরকার, সে শুধু গ্লুটেন ও কেসিন জাতীয় খাবারই নয় খাবারের মেন্যুতে অতিরিক্ত চিনি, প্রিজারভেটিভ জাতীয় খাদ্য, কালারিং সাবসটেনস, টেস্টিং সল্ট এগুলিও উগ্র আচরণের জন্য দায়ী। মা-বাবা বা অন্য সদস্যরা মনে প্রাণে হয়তো আশা করছেন বাচ্চাটির অস্থিরতা কমুক কিন্তু খাদ্য তালিকা পরিবর্তন না করলে খুব একটা লাভ হবে না। অনেক খাবারই তো বন্ধ হয়ে গেলে তাহলে কী খেতে পারবে আসুন এবার সেটা জানি। যব, বার্লি, রাই, ইস্ট, গম বা গমের আটার তৈরি রুটি, পাউরুটি, কেক, বিস্কিট, চিপস, নুডুলস্ ইত্যাদির বিকল্প হিসেবে চাল, চালের তৈরি রুটি-চিড়া-মুড়ি, ভুট্টা, চাল বা ভুট্টার তৈরি অন্য খাবার, আলু, মিষ্টি আলু, বাদাম, চিপসের পরিবর্তে পপকর্ণ, নুডুলস্রে পরিবর্তে রাইস নুডলস্ বাচ্চাকে দেয়া যেতে পারে। দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় খাবারের বিকল্প হিসেবে চাল বা নারিকেলের দুধ, অ্যালমন্ড (কাঠবাদাম) দুধ, ডিম দিতে পারি। অতি মাত্রায় সরল শর্করা, মিষ্টি জাতীয় খাবার, চকলেট, ঠাণ্ডা পানীয় ইত্যাদির বিকল্প হিসেবে ডায়বেটিক সম্পর্কিত খাবার দেয়া যেতে পারে। গ্রিক চিকিৎসক হিপোক্রেটসের অমরবাণী দিয়ে শেষ করলাম।
‘Let food be thy medicine and medicine be thy food’.
লেখক : শিশু চিকিৎসক ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

No comments

Powered by Blogger.